রান পাহাড় টপকে সাকিবদের হারাল মাশরাফির সিলেট
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2023/01/07/sylhet_vs_barishal.jpg)
উইকেটে গিয়েই ঝড় তোলেন সাকিব আল হাসান। খুনে ব্যাটিংয়ে সিলেট সিক্সার্সের বোলারদের কোণঠাসা করে ফেলেন ফরচুন বরিশালের অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। তার অসাধারণ ইনিংসের সঙ্গে চতুরঙ্গ ডি সিলভা, এনামুল হক বিজয়, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের কার্যকরী ইনিংস, বড় সংগ্রহ পেয়ে যায় বরিশাল। কিন্তু নাজমুল হোসেন শান্ত, তৌহিদ হৃদয়, জাকির হাসান, মুশফিকুর রহিমদের দারুণ ব্যাটিং ও নিজেদের ক্যাচ মিস ও ফিল্ডিং মিসের মহড়া, তাই বিশাল সংগ্রহ গড়েও জেতা হলো না বরিশালের।
শনিবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ফরচুন বরিশালকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে সিলেট সিক্সার্স। টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামা বরিশালকে পথ দেখান সাকিব আল হাসান, চতুরঙ্গ ডি সিলভা, এনামুল হক বিজয়রা। বিশেষ সাকিব ছিলেন খুনে মেজাজে, তার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৭ উইকেটে ১৯৪ রান তোলে ফরচুন বরিশাল।
জবাবে দারুণ ব্যাটিং করা নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়ের শতরানের জুটির পর জাকির হাসান, মুশফিকুর রহিম ও থিসারা পেরেরার ব্যাটে ৬ বল হাতে রেখে জয় তুলে নেয় সিলেট। বিপিএলের ইতিহাসে এটা তৃতীয় সর্বোচ্চ সফল তাড়ার রেকর্ড। এবারের আসরে এটা মাশরাফির দলের টানা দ্বিতীয় জয়। উদ্বোধনী ম্যাচে তারা চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে হারায় ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে।
বিশাল লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা দুঃস্বপ্নের মতো হয় সিলেটের। প্রথম ওভারেই রান আউটে কাটা পড়েন তাদের ওপেনার কলিন অ্যাকারম্যান। যদিও এর কোনো প্রভাবই পড়তে দেননি শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়। দ্বিতীয় উইকেটে ১০১ রানের জুটি গড়ে তোলেন তারা। অ্যাকারম্যানের মতো শান্তও রান আউট হন। এর আগে ৪০ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ৪৮ রান করেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
শান্তর বিদায়ে পর জাকির হাসানের সঙ্গে জুটি গড়ে ওঠে ম্যাচসেরা তৌহিদ হৃদয়ের। যদিও এই জুটি বড় হয়নি। দলীয়, ১৩৬ রানে আউট হন হৃদয়। এর আগে ৩৪ বলে ৭টি চার ও একটি ছক্কায় ৫৫ রানের মহাকার্যকর ইনিংস খেলেন তিনি। উইকেটে গিয়েই চড়াও হয়ে খেলা জাকির হাসান আরও চড়াও হন মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে জুটি গড়ার সময়।
অসাধারণ সব শটে দলের রান বাড়িয়ে নিতে থাকেন তিনি, সঙ্গে মুশফিকও ব্যাট চালান দ্রুততার সঙ্গে। এই জুটিতে ১৭৪ রানে পৌঁছে যায় সিলেট। দলকে জয়ের কাছে পৌঁছে দিয়ে থামা জাকির ১৮ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪৩ রানে ঝড়ো ইনিংস খেলেন। বাকি কাজটুকু সারেন মুশফিক ও পেরেরা। মুশফিক ১১ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় অপরাজিত ২৩ রান করেন। তাণ্ডব চালানো পেরেরা ৯ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় হার না মানা ২০ রান করেন। বরিশালে চতুরঙ্গ ও করিম জানাত একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নামা ফরচুন বরিশালকে দুরন্ত সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার চতুরঙ্গ ডি সিলভা ও এনামুল হক বিজয়। দারুণ ব্যাটিংয়ে এ দুজন ৭.২ ওভারে ৬৭ রান যোগ করেন। বিজয়ের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। মাশরাফি বিন মুর্তজার শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ২১ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ২৯ রান করেন করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
বিজয়ের পর চতুরঙ্গও থামেন। লঙ্কান এই ব্যাটসম্যান ২৫ বলে ৬টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৬ রান করেন। দারুণ শুরুর পর দ্রুত দুই উইকেট হারালেও বরিশালকে চাপে পড়তে হয়নি। তৃতীয় উইকেটে সহজেই সামলে নেন ইফতিখার আহমেদ ও সাকিব আল হাসান। এই জুটি থেকে ২০ বলে ৩০ রান পায় বরিশাল।
পাকিস্তানি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ইফতিখার ১৩ রান করে আউট হলেও সেদিকে ফিরে তাকাননি সাকিব, ব্যাটকে তরবারিতে পরিণত করে খেলতে শুরু করেন তারকা এই অলরাউন্ডার। অন্য প্রান্ত থেকে সেভাবে সঙ্গ না পেলেও মারকুটে ব্যাটিং করে যেতে থাকেন সাকিব। ২৬ বলে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় পূর্ণ করে ফেলেন হাফ সেঞ্চুরি।
সাকিবের সঙ্গে যোগ দিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও তেড়েফুঁড়ে শুরু করেন, তবে তার ইনিংস দীর্ঘ হয়নি। ডানহাতি অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান ১২ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৯ রান করে আউট হন। এরপর হায়দার আলীও ফিরে যান। তবে সাকিব একই ছন্দে ব্যাট চালাতে থাকেন। শেষ দিকে তার মতো করে রান তুলতে পেরেছেন করিম জানাত।
খুনে ব্যাটিং ঝড় বইয়ে দেওয়া সাকিব ২০তম ওভারে গিয়ে আউট হন। এর আগে ৩২ বলে ৭টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৬৭ রানের চোখ ধাঁধানো এক ইনিংস খেলেন তিনি। টি-টোয়েন্টিতে এটা সাকিবের ২৭তম হাফ সেঞ্চুরি, বিপিএলে নবম। করিম জানাত ১২ বলে ২টি ছক্কায় অপরাজিত ১৭ রান করেন। সিলেট সিক্সার্সের অধিনায়ক মাশরাফি ৪ ওভারে ৪৮ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নেন। ইমাদ ওয়াসিম, রেজাউর রহমান রাজা ও থিসারা পেরেরা একটি করে উইকেট পান।