কেমিস্ট সংকটে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস, ল্যাবে পণ্যের নমুনা জট দুর্ভোগে আমদানিকারকরা
দেশের সবচেয়ে বড় শুল্ক স্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের রাসায়নিক ল্যাবে প্রায় এক বছর ধরে পূর্ণাঙ্গ কোনো পরীক্ষক নেই। একজন সহকারী কেমিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট দিয়েই চলছে কাস্টমস হাউসের রাসায়নিক পরীক্ষাগারটি। ল্যাবের পরীক্ষক সংকটের কারণে দেখা দিয়েছে পণ্যের নমুনা জট।
ল্যাবে ১৫টি পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ৫ জন। ১০টি শূন্য পদের মধ্যে রয়েছে দুটি রাসায়নিক পরীক্ষকের পদ, তিনটি উপপ্রধান রাসায়নিক পরীক্ষকের পদ এবং পাঁচটি সহকারী রাসায়নিক পরীক্ষকের পদ।
লোক সংকটের কারণে পণ্য খালাস পেতে হয়রানির পাশাপাশি বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন আমদানিকারকরা।
ল্যাবের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষক মো. আবদুল হান্নান অবসরে যান ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে। বর্তমানে সহকারী কেমিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট মো. হেলাল হাসান ল্যাবের কয়েকজন অফিস সহকারী নিয়ে ল্যাব পরিচালনা করছেন। প্রতিদিন এই ল্যাবে পরীক্ষার জন্য ১০০ ফলের নমুনাসহ বিভিন্ন পণ্যের প্রায় ২০০ নমুনা আসে। নমুনা গ্রহণের দিন ফল পরীক্ষার প্রতিবেদন দেওয়া গেলেও অন্যান্য পণ্যের নমুনার ৬০ ভাগ প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব হয়। প্রতিদিন এভাবে বাড়তি নমুনার চাপে পণ্যের প্রতিবেদন দিতে বিলম্ব হয়। যার কারণে দেখা দিয়েছে পণ্যের নমুনাজট।
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানিকৃত পণ্যের কন্টেইনার ৪ দিন বন্দরের ইয়ার্ডে বিনা ভাড়ায় রাখার সুযোগ পান আমদানিকারকরা। এরপর ২০ ফুট লম্বা আকারের একটি কন্টেইনারের জন্য প্রথম সপ্তাহে প্রতিদিন ৬ মার্কিন ডলার ভাড়া গুনতে হয়। তার পরবর্তী সপ্তাহে প্রতিদিন একই আকারের কন্টেইনারে ১২ ডলার এবং ২১ দিন থেকে প্রতিদিন ২৪ ডলার ভাড়া দিতে হয় আমদানিকারকদের।
সময়মতো প্রতিবেদন না পাওয়ায় আমদানিকৃত পচনশীল পণ্য বন্দরের ইয়ার্ডে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এতে আমদানিকারককে একদিকে বন্দরের ভাড়া এবং অন্যদিকে পণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।
চট্টগ্রাম কাস্টমস ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ঠিক সময়ে রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন না পাওয়ায় এক সপ্তাহ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত আমদানিকৃত পণ্য বন্দরে আটকে থাকছে। প্রায় একবছর ধরে কাস্টমসের পরীক্ষক সংকটের কারণে এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আর কাস্টমসের এই ব্যর্থতার মাসুল গুনতে হচ্ছে আমাদের।"
আল মদিনা ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী ও চট্টগ্রামের কাঁচা পণ্য আমদানিকারক মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ল্যাবটি স্বয়ংসম্পূর্ণ করার দাবি জানিয়ে আসছে।
"পর্যাপ্ত রাসায়নিক পরীক্ষকের অভাবে যে পরীক্ষা দুইদিনে শেষ হওয়ার কথা সেটি শেষ হতে এক সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এতে বিলম্বিত হচ্ছে পণ্য খালাস কার্যক্রম। চট্টগ্রামে ব্যর্থ হয়ে অনেকে বাধ্য হয়ে ঢাকায় নমুনা পাঠান। ঢাকা থেকে রিপোর্ট আসতে দুই সপ্তাহ পর্যন্তও লেগে যায়। ফলে আমদানিকারকরা লোকসানে পড়েন," যোগ করেন তিনি।
এর আগে, ২০২০ সালে কাস্টম রাসায়নিক ল্যাবে জনবল বৃদ্ধি করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছেন তৎকালীন কাস্টমস কমিশনার মোহম্মদ ফখরুল আলম। ওই চিঠিতে বলা হয়েছিলে, মাত্র দুজন পরীক্ষক অধিক সংখ্যক পণ্যের রাসায়নিক পরীক্ষা করায় কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। এর ফলে চালান খালাসেও বিলম্ব হচ্ছে। অন্যদিকে, যে দুজন পরীক্ষক কর্মরত রয়েছেন, তাদের অবসরে যাওয়ার সময়ও অতি নিকটে। কাস্টমস কমিশনারের এই চিঠির পরে ল্যাবের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষক মো. আবদুল হান্নান অবসরে যান, কিন্তু নতুন করে পরীক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফাইজুর রহমান বলেন, "রাসায়নিক পরীক্ষক ও জনবল সংকটের বিষয়টি এনবিআরকে জানানো হয়েছে। বিষয়টি আমরা আবারও তাদের নজরে আনব।"