জাপানের ক্রমবর্ধমান বিদেশি শ্রমবাজারের সুযোগ নিতে পারবে বাংলাদেশ?
ক্রমেই জনসংখ্যা কমতে থাকায় শ্রম ঘাটতির সম্মুখীন এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ জাপান। ক্রমহ্রাসমান জনসংখ্যার এই সমস্যা মোকাবেলায় দেশটি এখন বিদেশ থেকে শ্রমশক্তি আমদানির ওপর নজর দিয়েছে; আর এতে জাপানের শ্রমবাজারে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে বাংলাদেশিদের জন্য।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আরও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে বাংলাদেশকে জাপানের শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ কর্মী তৈরি করতে হবে। এই লক্ষ্যে নিতে হবে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত উদ্যোগ।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই নার্সিং কেয়ার, কৃষি, বিল্ডিং ক্লিনিং ম্যানেজমেন্ট এবং নির্মাণ শিল্প ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে জাপানে স্পেসিফাইড স্কিল্ড ওয়ার্কার (এসএসডব্লিউ) বা নির্দিষ্ট খাতে দক্ষ কর্মী নিয়োগের জন্য চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দক্ষতা যাচাই পরীক্ষার সময়সূচী ঘোষণা করেছে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অফ জাপান এবং ভ্যালু ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের এক সমীক্ষায় দেখা যায়, বছরে ১.২৪ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য জাপানকে তার বৈদেশিক কর্মীর সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিগুণেরও বেশি- ৪২ লাখ এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৬৩ লাখে উন্নীত করতে হবে। কারণ জাপানের কর্মক্ষম জনসংখ্যা ক্রমাগত কমছেই।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ পপুলেশন অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিউরিটি রিসার্চের অনুমান, দেশটির কর্মক্ষম জনসংখ্যা ২০২০ সালের ৭.৪ কোটি থেকে হ্রাস পেয়ে ২০৪০ সালে ৬ কোটিরও নিচে নেমে যাবে।
ম্যানপাওয়ার এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক মোঃ শহিদুল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "জাপানে সবসময়ই শ্রমিকের প্রয়োজন ছিল। এর আগে তারা প্রতিবেশী দেশ চীন, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়া থেকে কর্মী নিয়োগ করত। এখন তারা এ ধরনের নিয়োগ আরও সম্প্রসারিত করছে।"
তিনি বলেন, "জাপানে বাংলাদেশি কর্মীরা ভালো কাজ করছে। জাপানের আন্তর্জাতিক জনশক্তি উন্নয়ন সংস্থার একটি দল বর্তমানে কর্মী বাছাই করতে বাংলাদেশ সফর করছে। জাপান থেকে এ ধরনের প্রতিনিধি দল নিয়মিত বাংলাদেশ সফর করবে। কারণ এই দেশের কর্মীদের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়ছে।"
তিনি আরও বলেন, "প্রতি মাসে কতজন বাংলাদেশি কর্মী জাপানে যাবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তারা এখন বাছাই করছে। তবে অনুমান করা যায়, সংখ্যাটি গত বছরের তুলনায় বেশি হবে।"
২ হাজার ৭৪০ জন কর্মী জাপানে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ; যা ১৯৯৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশের মোট শ্রম রপ্তানির মাত্র ০.০২ শতাংশ। ২০২২ সালে পূর্ব এশিয়ার জাপানে বাংলাদেশ থেকে ৫০৮ জন কর্মী পাড়ি জমায়, যা বিএমইটির তথ্য অনুসারে এক বছরে সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশের ৮৬টি বেসরকারি সংস্থার জাপানে কর্মী পাঠানোর অনুমোদিত রয়েছে; এরমধ্যে ফুজিতা ওভারসিজ একটি।
ফুজিতা ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী মোঃ আব্দুল মান্নান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "জাপানের নিয়োগকর্তারা আমাদের সঙ্গে স্পেসিফাইড স্কিল্ড ওয়ার্কার (এসএসডব্লিউ) যেমন- কেয়ারগিভার এবং কৃষি শ্রমিকদের জন্য যোগাযোগ করছেন৷ কিন্তু আমরা তাদেরকে যোগ্য প্রার্থী দিতে পারছি না; কারণ এই প্রার্থীদের তিন থেকে চারটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে।"
বিএমইটি জাপানে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন পাঠায় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, "এসএসডব্লিউ এর মূল্যায়ন পরীক্ষা ফেব্রুয়ারিতে শুরু হবে। নির্বাচিত প্রার্থীরা অনুমোদিত সংস্থার মাধ্যমে জাপানে যেতে পারবেন।"
উন্নত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন
বিএমইটি সূত্র জানায়, প্রয়োজনীয় কারিগরি প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রায় ৩ হাজার বাংলাদেশিকে জাপানি ভাষায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
"বিএমইটি-এর অধীনে সারাদেশে প্রায় ৩০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (টিটিসি) জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর ছয় মাস মেয়াদী একটি কোর্স রয়েছে," বিএমইটির প্রশিক্ষণ পরিচালনার পরিচালক মোঃ সালাহ উদ্দিন এ কথা জানান।
আগামী বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ জাপানের শ্রমবাজারে প্রবেশ করতে চাইছে এবং এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই বেশ কিছু সংখ্যক বাংলাদেশি যুবককে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, প্রশিক্ষণ ও পাঠদান পদ্ধতি উন্নত করতে হবে এবং কোর্সের মেয়াদ এক বছর পর্যন্ত বাড়াতে হবে।
সরকারি ও বেসরকারি উভয় সংস্থার মাধ্যমেই শ্রমিকরা জাপানে যেতে পারে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, "বাংলাদেশি কর্মীরা জাপানে প্রতি মাসে ১ হাজার থেকে ২ হাজার ডলার আয় করতে পারবেন।"