লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগ নেতারা মোড়ে মোড়ে;পৃথক হামলায় বিএনপি নেতার বাড়ি ভাঙচুর, আহত ৪
লক্ষ্মীপুরে বিএনপির পদযাত্রা ও আওয়ামী লীগের শান্তি মিছিল হলেও, সারাদিন পথঘাটে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদেরই অবস্থান, মাইকিং এবং মিছিল দেখা গেছে। জেলার চন্দ্রগঞ্জ বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় আ. লীগের কর্মীদের মোড়েমোড়ে অবস্থান করতে দেখা গেছে। বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিএনপির পদযাত্রা দেখা না গেলেও, তাদের নেতারা বলছেন, কর্মসূচি সফল করতে কাজ করছেন তারা।
শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে তোরাবগঞ্জ ইউনিয়ন আ. লীগ আয়োজিত 'শান্তি সমাবেশের' কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের কেন্দ্রীয় কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইল বলেন, শেখ হাসিনা প্রতিহিংসার রাজনীতি করেন না; তিনি উন্নয়নের রাজনীতি করেন। বিএনপি প্রতিহিংসার রাজনীতিতে লিপ্ত হয়ে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে।"
কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নিজাম উদ্দিনের সভাপতিত্বে শান্তি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন লক্ষ্মীপুর জেলা আ. লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুসহ অন্য নেতারা।
অন্যদিকে, রামগঞ্জে নোয়াগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন পাটওয়ারীর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পৃথক ঘটনায় সদর উপজেলার মান্দারী ও দিঘলী ইউনিয়নে হামলা চালিয়ে বিএনপি ও ছাত্রদলের ৪ নেতাকর্মীকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জাহের ইসলাম জাহাঙ্গীরের বাড়ি ঘেরাও করার খবর পাওয়া গেছে।
রামগঞ্জের নোয়াগাঁও ইউনিয়ন বিএনপি নেতা বিল্লাল হোসেন পাটওয়ারী জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে ৩০-৩৫টি মোটরসাইকেলে করে আ. লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের লোকজন এসে তার বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় তার মোটরসাইকেল, বাসায় থাকা দুটি ফ্রিজ, বেসিন, আলমিরা, শোকেস ভাঙচুর করা হয়। বাসায় থাকা টাকা ও স্বর্ণালংকারও লুটে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন তিনি। তবে নির্দিষ্টভাবে হামলাকারীদের নাম বলতে পারেননি। খবর পেয়ে শনিবার সকালে এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
শাহাদাত হোসেন সেলিম জানান, 'বিএনপিসহ শরিকদল আন্দোলনে জনগণের মধ্যে সাড়া জাগাচ্ছে। এ আন্দোলনকে দমাতেই আওয়ামী লীগ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বাড়িতে ঢুকে হামলা চালাচ্ছে'। কিছুদিন আগে দু'বার তার বাড়িতেও হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে।
নোয়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা বলেন, 'হামলার ঘটনাটি সত্য, তবে দুঃখজনক। আমরা শান্তিপূর্ণ প্রোগ্রাম করেছি। কিন্তু, বিএনপি নেতা বিল্লাল আমার বাড়ির এলাকার হওয়ায় সামাজিকভাবে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে একটি অংশ এ ঘটনা ঘটিয়েছে'।
এদিকে চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রদল নেতা জাহের ইসলাম জাহাঙ্গীর অভিযোগ করে জানিয়েছেন, শনিবার ইউনিয়নভিত্তিক বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচি ছিল। এ কর্মসূচিকে উদ্দেশ্য করে আ. লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নে মোটরসাইকেল শোডাউন দিচ্ছে। শুক্রবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে দিঘলী ইউনিয়নের পূর্ব দিঘলী বাজার এলাকায়- স্থানীয় বিএনপির সদস্য তসলিম আহমেদ ও ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তানজীদ হোসেনকে পেটানো হয়েছে। শনিবার দুপুরে মান্দারী ইউনিয়ন চৈতল্লা এলাকায় ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি তানজীদ হোসেন রিয়াজকে মারধর করা হয়। দুপুরে যোহরের নামজের সময় দিঘলীর পশ্চিম জামিরতলি গ্রামের বাড়ি থেকে বের হতেই তাকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের লোকজন ধাওয়া করে। পরে তিনি পালিয়ে যান। এরপর তার খোঁজ না দেওয়ায় সামির (১২) নামে এক স্কুলছাত্রকে শারীরিকভাবে আঘাত করা হয়।
চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু তালেব বলেন, 'রিয়াজ লোকজন নিয়ে আসার পথে কে বা কাদের সঙ্গে হাতাহাতি হয়েছে বলে শুনেছি। তবে এতে আমাদের কেউ জড়িত নয়। আমরা ইউনিয়ন আ. লীগের উদ্যোগে শান্তি সমাবেশ সম্পন্ন করেছি'।
চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তহিদুল ইসলাম বলেন, বিএনপি-ছাত্রদল নেতাদের ওপর হামলা ঘটনা আমরা শুনিনি। কেউ আমাদেরকে জানায়নি। প্রত্যেক ইউনিয়নে পুলিশ কাজ করছে। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি।
রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক বলেন, বিএনপি নেতার বাড়িতে হামলা হয়েছে কিনা– তা আমরা জানি না। কেউ আমাদের জানায়নি। তবে আ. লীগ-বিএনপি উভয়পক্ষের কর্মসূচি রয়েছে তা জানি। এতে অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।