চট্টগ্রাম কাস্টমসে ক্রমাগত কমছে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি
দেশের বৃহৎ শুল্ক স্টেশন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় শুরু হয়েছিলো ৪০.৮৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দিয়ে। অর্থবছরের ষষ্ঠ ও সপ্তম মাসে প্রবৃদ্ধি নেমেছে শূন্যের কোটায়। গত ডিসেম্বর এবং জানুয়ারিতে পরপর দুইমাস প্রবৃদ্ধি ঋণাত্বক হয় কাস্টম হাউসে।
কাস্টমস বলছে, ডলার সংকটের কারণে সরকার আমদানি সীমিত করায় ক্রমাগত কমছে আমদানির পরিমাণ। ফলে কমে গেছে রাজস্ব আয়। এভাবে চলতে থাকলে অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা কঠিন হবে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের হাউসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ছিলো ৪০.৮৭ শতাংশ। আগস্টে প্রবৃদ্ধি নেমে আসে ২৪.৬৭ শতাংশে। সেপ্টেম্বরে ঋণাত্বক প্রবৃদ্ধি হয় -০.১৭ শতাংশ। এরপর অক্টোবর ও নভেম্বরে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়। অক্টোবরে ৩.৯১ শতাংশ এবং নভেম্বরে ১৪.১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় কাস্টমসে।
তবে ডিসেম্বর এবং জানুয়ারিতে আবারো প্রবৃদ্ধি কমে যায়। ডিসেম্বরে -৯.১৮ শতাংশ এবং জানুয়ারিতে -৪.৩৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত কাস্টমসের সার্বিক প্রবৃদ্ধি ৮.২৮ শতাংশ।
তবে ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে অর্থাৎ জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি ছিলো ২৫.২৬ শতাংশ। অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে প্রবৃদ্ধি কমে যায় প্রায় ১৭ শতাংশ।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জানুয়ারিতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৬৬৫২ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৪৭৪৪.৬১ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৮.৬৭ শতাংশ কম।
ডিসেম্বরে ৬৬০৪ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছিলো ৪৩৮৮.০৫ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৩.৫৫ শতাংশ কম। চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরে সবচেয়ে কম রাজস্ব আদায় হয়েছে ডিসেম্বরে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৪ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। আর জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম সাত মাসের লক্ষ্যমাত্রা ৪৩ হাজার ২১২ কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৩৪ হাজার ৯১৫.৭৪ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিলো ৩২২৪৬.৫৩ কোটি টাকা।
২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৮২৯৬.২৬ কোটি টাকা রাজস্ব আয় কম হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যা শতাংশ হিসেবে ১৯.২০ ভাগ কম।
এদিকে, চট্টগ্রাম কাস্টমসে ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৪ হাজার ৭৫ কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছিল ৫৯ হাজার ১৫৯.৮৩ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪.৭০ শতাংশ।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার মোঃ বদরুজ্জামান মুনশি টিবিএসকে বলেন, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায় গত অর্থবছরের তুলনায় কমেছে। যেসব পণ্যে শুল্ক কর কম বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্য, ক্যাপিটাল মেশিনারীতে পণ্য আমদানি বেড়েছে। কিন্তু রাজস্ব আদায় বেশি হয় এমন পণ্য যেমন- গাড়ি, কসমেটিকস, ইলেকট্রনিক্স সহ বিলাসজাতীয় পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় রাজস্ব আদায় কমে গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে কাস্টমসের রাজস্ব আয়েও ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক বাণিজ্য মন্দা চলছে। ডলার সংকটের কারণে আমদানি সীমিত করেছে সরকার। প্রয়োজনীয় পণ্যও আমদানি করা যাচ্ছে না। ফলে রাজস্ব আয়ে বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম টিবিএসকে জানান, 'আগে ডলারের দাম ৮৪ টাকা হলেও এখন সেটি ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ফলে আমদানি পণ্যের দাম এবং শুল্ক দুটোতেই ব্যবসায়ীদের বাড়তি অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে কাস্টমসেও রাজস্ব আয় কমে গেছে। যুদ্ধ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এই সংকটের কোন সমাধান দেখছি না।'