ব্যাটটি কীভাবে প্রিয় হলো, সেই গল্প শোনালেন সাকিব
পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে অনেক ব্যাটই থাকে সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালদের। কোনোটা অনুশীলনের আবার কোনোটা ম্যাচের। অনুশীলনের ব্যাট দিয়ে সাধারণত ম্যাচ খেলেন না ক্রিকেটাররা। যদিও ২০১৯ বিশ্বকাপে ইতিহাস গড়া সাকিব আল হাসানের ব্যাটটির গল্প ভিন্ন। এটা সাকিবের অনুশীলনের ব্যাটই ছিল।
এই ব্যাটটি দিয়ে বাংলাদেশ অলরাউন্ডার এতটাই অনুশীলন করেছেন যে, ব্যাটটির সাথে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায় তার। সম্পর্কের টান থেকেই ব্যাটটি নিয়ে ম্যাচ খেলতে নেমে পড়েন সাকিব। এর পরের গল্প সবারই জানা। এই ব্যাট দিয়েই বিশ্বকাপে দুটি সেঞ্চুরি ও ৫টি হাফ সেঞ্চুরিতে ৬০৬ রান করেন সাকিব।
করোনাভাইরাস যুদ্ধেও এই ব্যাটটিকে ঢাল বানিয়েছেন সাকিব। প্রিয় ব্যাটটি নিলামে ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার। পুরো অর্থই খরচ করা হবে করোনাভাইরাস দুর্গতদের সাহায্যে। নিলামের অংশ হিসেবে অকশন ফর অ্যাকশন পেজ থেকে লাইভে এসে এই ব্যাটটির গল্প শুনিয়েছেন সাকিব। এই ব্যাট নিয়ে তার পুরো বক্তব্য তুলে ধরা হলো।
'ব্যাটটির গল্প বলতে গেলে শুরু করতে হবে আইপিএল থেকে। মূলত দুইটা ব্যাট ছিল। ওই আইপিএলের সময়ে আমি চিন্তা শুরু করেছি যে, আমি এভাবে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি নেব। দুইটা ব্যাট দিয়ে আমি নেটে সব সময় অনুশীলন করতাম। আপনারা জানেন হয়তো বা নিউজে দেখেছেন যে, সালাহউদ্দিন স্যার ওই সময় ভারতে গিয়েছিলেন আমাকে অনুশীলন করানোর জন্য। তো ওই সময় আমি যতদিন ব্যাটিং করেছি এই ব্যাট আর আরেকটা ব্যাট ছিল, সেটা দিয়ে করেছি। তবে কখনও উদ্দেশ্য ছিল না যে এই দুই ব্যাটের কোনোটা দিয়ে আমি খেলব।'
'অনুশীলনে অনেক বল হিট করা হয়। তো স্বাভাবিকভাবেই ব্যাটের ক্ষতি বেশি হয়। এ কারণে আমাদের অনুশীলন ও ম্যাচ ব্যাট আলাদা থাকে। এরপর যখন আইপিএল শেষ হয়ে গেল, আমরা আয়ারল্যান্ড গেলাম। তখন আমার কাছে নতুন ব্যাট ছিল। কিন্তু কোনো কারণে এই ব্যাটটি ধরে আমার কাছে মনে হলো, ব্যাটটি আমার কাছে ভালো লাগছে। অনেকদিন ধরে নেট করতে করতে ব্যাটটির সাথে একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়।'
'ওই ব্যাট ধরার পর আমি সাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম। অনেক দিন ধরে কিছু ব্যবহার করলে সেটার সাথে যতটা অভ্যস্ত হবেন, ঠিক ও রকমই। তো ওই সিরিজে প্রথম ম্যাচ খেলার আগে আমি যখন ব্যাটটি ধরলাম, আমার কাছে মনে হলো এটা দিয়েই খেলব। যদিও আমার ম্যাচ ব্যাটগুলো ছিল। তো প্রথম ম্যাচ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেললাম, আমরা ম্যাচ জিতলাম। এরপর আয়ারল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ম্যাচ খেললাম। যদিও ইনজুরির কারণে আমি ফাইনাল খেলতে পারিনি। ওই সময় ব্যাটটি বেশি ব্যবহার করা হয়েছে।'
'বিশ্বকাপে আমার এই ব্যাটে লেখা ছিল এটা তিন অথবা দুই নম্বর। আমার ঠিক খেয়াল নেই। ব্যাটের হ্যান্ডেলের ভেতরে লেখাটা আছে, দেখতে হবে কত নম্বর ব্যাট ছিল। এক নম্বর কখনই ছিল না। যখন আয়ারল্যান্ডে এই ব্যাটটি দিয়ে ভালো খেললাম, তারপর ম্যাচ ছাড়া এই ব্যাটটি আর ধরিনি। বিশ্বকাপে এই ব্যাট দিয়ে প্রথম ম্যাচ খেললাম। রান করলাম। তারপর এটা দিয়েই চলছিল। মাঝখানে উডটা বের হয়ে আসছিল। অনেক দিন খেললে এমন হয়। আমরা ব্যাট টেপ লাগিয়ে ঠিক করে আবার খেলি। আমরা যারা ক্রিকেট খেলি, তারা ভালোভাবে এটা বুঝতে পারবে।'
'ওই ব্যাটটিতেই টেপ লাগিয়ে লাগিয়ে খেলেছি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের পর থেকে প্রতি ম্যাচেই একটি করে টেপ লাগিয়ে খেলছিলাম। ভালো ব্যাটিং করছিলাম যেহেতু, অনেক বল ফেস করতে হচ্ছিল। তাই প্রতি ম্যাচেই ছোট্ট করে একটু টেপ লাগিয়ে খেলতে হতো আমাকে। হ্যান্ডেলে আবার একটু সাউন্ডও হতো। ভয়ও লাগতো এটা ভেবে যে, সাউন্ড শুনে আম্পায়ার আবার কখন আউট দিয়ে দেন। তবে একটা সুবিধাও ছিল। ব্যাটটি যখন আমি দুই-তিনবার ট্যাপ করি, ওই সাউন্ড আবার চলে যায়। আবার বল ফেস করার পর যদি ব্যাটটি নাড়াই, ওই সাউন্ডটা আসে।'
'এরপর ওই ব্যাট দিয়েই আমি ব্যাটিং করেছি পুরো বিশ্বকাপে। অন্য ব্যাট আমার ধরতেও হয়নি। একটা ব্যাট নিয়েছিলাম, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১২০ করার পর ওই ব্যাটে আর এক রানও করিনি। আমি বুঝতে পেরেছি আমি যে এই ব্যাটটি ছাড়া বিশ্বকাপে ভালো কিছু করা যাবে না। আমি চেষ্টাই করিনি অন্য কোনো ব্যাট দিয়ে। এই ব্যাটটি সুস্থ রেখে কীভাবে পুরো বিশ্বকাপ চালানো যায়, সেটার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।'