অর্থবছরের সাত মাসে এলসি ওপেনিং কমেছে ২৫%
চলতি অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) আমদানি এলসি ওপেনিং কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। সরকারের আমদানিতে কড়াকড়ি ও বিশ্ববাজারের রেটের সঙ্গে আমদানিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্যাশ টু ক্যাশ পর্যবেক্ষণের ফলে এলসি ওপেনিং কমেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি মেয়াদে ওপেনিং হয় ৩৯.৪৬ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৪.৭৯% বা ১৩ বিলিয়ন ডলার কম।
তবে চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারিতে এলসি সেটেলমেন্ট হয়েছে ৪৬.৮২ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় বেড়েছে ২.৮৬ শতাংশ।
আমদানি কড়াকড়ির শুরুতে অর্থাৎ ২০২২ সালের এপ্রিলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৪.০১ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের জানুয়ারি শেষে রিজার্ভ দাড়িয়েছে ৩২.২২ বিলিয়ন ডলারে।
ব্যাংকাররা বলেন, আমদানিতে কোন শর্ত না থাকায় ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ও বিলাস দ্রব্যের (লাক্সারি গুডস) ব্যাপক আমদানি হয়েছে। তবে গত এপ্রিল থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া বাকি সকল পণ্য আমদানিতে সরকারের কড়াকড়ি আরোপের পর আমদানি এলসি ওপেনিংয়ের পরিমাণ অনেক কমে এসেছে।
তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে পেট্রোলিয়াম ব্যতীত ক্যাপিটাল মেশিনারিজ, কনজ্যুমার গুডস, ইন্টারমিডিয়েট গুডস এবং শিল্পের কাঁচামালের আমদানি ব্যাপক কমেছে।
চলতি অর্থবছরের এই সাত মাসে ক্যাপিটাল মেশিনারির জন্য এলসি ওপেনিং হয়েছে ১.৪১ বিলিয়ন ডলার। যদিও ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৪.২৫ বিলিয়ন ডলার।
এছাড়া চলতি অর্থবছরের এই সাত মাসে কনজ্যুমার গুডস ও ইন্টারমিডিয়েট গুডস আমদানির পরিমাণ কমেছে যথাক্রমে ১৮.২২% ও ৩৩.৩০%।এ সময়ে এই দুই খাতে আমদানি হয়েছে ৪.৭ ও ৩ বিলিয়ন ডলার।
গত বছরের এপ্রিল থেকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখতে আমদানিতে লাগাম দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। একের পর এক নির্দেশনা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রথম আমদানিতে ২৫% নগদ মার্জিনের ঘোষণা আসে গত বছরের ১৭ এপ্রিল। এরপর কয়েকবারে বাড়িয়ে গত জুনে বিলাস দ্রব্যসহ ২৭ ধরণের পণ্যের আমদানির ক্ষেত্রে ১০০% মার্জিন করা হয়। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি এলসি খুলতে ২৪ ঘণ্টা আগে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, "আমদানিতে কড়াকড়ি থাকলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে নেই। বরং কেন্দ্রীয় ব্যাংক এর জন্য ডলার সহায়তা দিচ্ছে।"
তিনি বলেন, "ডলার যাতে গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যয় হয় সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন ব্যাংকগুলোর আমদানিতে তদারকি বাড়িয়েছে। এখন গ্রাহক পণ্য আমদানির জন্য যে রেট দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেগুলো বিশ্ববাজারের রেটের সঙ্গে যাচাই-বাছাই করছে। যার কারণে যে আমদানিতে রেট নিয়ে ত্রুটি দেখা যায় তা সঙ্গে সঙ্গে বাদ দেয়া হয়। একইসঙ্গে লাক্সারি গুডস আমদানির আবেদন এলেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেগুলো বিশেষ পর্যালোচনা করে। যার কারণে ওভারঅল আমদানি কমেছে।"
কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, আমদানি কমার অন্যতম কারণ সরকারের আমদানিতে কড়াকড়ি ও ব্যাংকগুলোর ডলারের সংকট।
তারা আরও বলেন, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে আমদানিকারকদের ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে গেছে কিন্তু সেই তুলনায় প্রফিট তেমন ভালো হয়নি যার কারণেও অনেক ব্যবসায়ী আমদানি কমিয়েছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর টিবিএসকে বলেন, "বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে আমদানি কমানোর কোন বিকল্প নেই। তবে একেবারে কমিয়ে দিলে হবে না। আমাদের দেশের কার্যক্ষমতা স্বাভাবিক রাখতে ন্যূনতম গড়ে প্রতি মাসে ৬ বিলিয়ন ডলারের আমদানি রাখা দরকার।"