সেপ্টেম্বরে আমদানি এলসি নিষ্পত্তি বেড়েছে ২৪ শতাংশ
চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিনিয়োগে স্থবিরতাসহ নানা কারণে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) নিষ্পত্তি কমলেও সেপ্টেম্বরে ওভারডিউ পেমেন্ট থাকায় এলসি নিষ্পত্তির হার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে আমদানি এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫.৮৭ বিলিয়ন ডলারে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১.১৫ বিলিয়ন ডলার বেশি। গত অর্থবছরের এ সময়ে এলসি নিষ্পত্তির পরিমাণ ছিল ৪.৭২ বিলিয়ন ডলার।
এলসি নিষ্পত্তি বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ আলী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'জুলাই মাসে ইন্টারনেট বন্ধ থাকা ও ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় আমদানির পেমেন্ট করা যায়নি। অগাস্ট মাসে বেশ কিছুদিন অস্থিরতা থাকাসহ নানা কারণে আমদানি পেমেন্ট ঠিকমতো করতে পারেননি ব্যবসায়ীরা।
'তাই সেপ্টেম্বরে এই দুই মাসের কিছু ওভারডিউ পেমেন্ট করতে হয়েছে। নিষ্পত্তি বেড়ে যাওয়ার এটিই মূল কারণ।'
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এলসি পেমেন্ট করা হয়েছে ১৬.২১ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময় শেষে এলসি পেমেন্ট করা হয়েছিল ১৬.৬১ বিলিয়ন ডলার।
খাতভিত্তিক আমদানি এলসি পেমেন্টের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় চলতি বছর সবচেয়ে বেশি ২৫ শতাংশ এলসি পেমেন্ট কমেছে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভোগ্যপণ্য আমদানি কমেছে ১৭.৬ শতাংশ।
এছাড়া পেট্রোলিয়াম ও অন্তর্বর্তী পণ্যসহ প্রায় সব ধরনের পণ্য আমদানি পেমেন্ট কমলেও শিল্পের কাঁচামাল আমদানির পেমেন্ট বেড়েছে ৮.৩ শতাংশ।
সরকারি আমদানির ওভারডিউ পেমেন্টের চাপ আগের তুলনায় কমে এসেছে মন্তব্য করে একটি বেসরকারি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আগস্টের মাঝামাঝিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আহসান এইচ মনসুর সরকারি এলসির প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার ওভারডিউ পেমেন্টগুলো করার জন্য সচেষ্ট হন।
এখন এই ওভারডিউ পেমেন্ট ১ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এই পেমেন্টগুলো করা হয়ে গেলে ডলারের ওপর চাপ আরও কমে আসবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সেপ্টেম্বর মাসে এলসি খোলা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কিছুটা কমে এসেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে আমদানি এলসি খোলা হয়েছে ৫.৫৭ বিলিয়ন ডলারের। আর গত অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে ৫.২০ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমদানিনির্ভর দেশ হিসেবে প্রতি মাসে বাংলাদেশের আমদানি অন্তত ৫-৬ বিলিয়ন ডলার হওয়া উচিত। অর্থনীতির আকার অনুযায়ী বাংলাদেশের আরও বেশি আমদানির প্রয়োজন। ফলে সামনের দিনগুলোতে আমদানি এলসি খোলা বাড়লে সেটি অর্থনীতির জন্য ভালো হবে।
তবে বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তারা জানান, চলতি অক্টোবর মাসে আমদানি এলসি খোলার চাপ খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না। কারণ, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনও পুরোপুরি স্থিতিশীল হয়নি। ফলে ব্যবসায়ীরা এখন নতুন ধরনের বিনিয়োগে যেতে চাচ্ছেন না বলে আমদানিও খুব বেশি বাড়ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রথম তিন মাসে আমদানি এলসি খোলা হয়েছে ১৫.৫৯ বিলিয়ন ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময় শেষে এলসি খোলা হয়েছিল ১৬.৭২ বিলিয়ন ডলারের।
কয়েকটি ব্যাংক জানিয়েছে, রেমিট্যান্সের ডলার কেনায় বেশিরভাগ ব্যাংক ১২০-১২১ টাকা রেট দিচ্ছে। আর আমদানি পেমেন্টে রেট ধরা হচ্ছে ১২১-১২২.৫০ টাকা।