ওয়েভার সনদ পেতে হয়রানি, দাবি বিদেশি ফিডার ভেসেল অপারেটরদের
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বিভিন্ন ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে বিদেশি পাতকাবাহী জাহাজে ওয়েভার সনদ পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা। এর ফলে শিপিংয়ের খরচ ও সময় দুটোই বাড়ছে বলে জানান তারা।
বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ (স্বার্থরক্ষা) বিধিমালা ২০২৩ অনুযায়ী, আবেদনের তিন কার্যদিবসের মধ্যে ওয়েভার সনদ প্রদানের কথা থাকলেও ১০ দিনেও পাচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন ফিডার অপারেটররা।
এর ফলে বন্দরে জাহাজ পৌঁছানোর পরও কন্টেইনার বোঝাইয়ের অনুমতি পাচ্ছে না জাহাজ মালিকরা। এতে প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকার জন্য জাহাজের আকার ভেদে ১০ থেকে ২০ হাজার ডলার জরিমানা গুনতে হচ্ছে তাদের।
আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজকে অগ্রাধিকার দিতে বাংলাদেশের পতাকাবাহী জাহাজ (স্বার্থরক্ষা) আইন ২০১৯ প্রণয়ন করে সরকার।
আইন অনুযায়ী, জাহাজে মোট পরিবাহিত পণ্যের ৫০ ভাগ দেশীয় পতাকাবাহী এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জাহাজে পরিবহনের বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়। জায়গা খালি না থাকলে আইনের বিধান অনুযায়ী বাধ্যতামুলক ওয়েভার সনদ নিতে হয় শিপিং এজেন্টরদের।
চট্টগ্রাম-কলম্বো রুটে চলাচলকারী একটি ফিডার ভেসেল অপারেটরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, "গত ৯ ফেব্রুয়ারি ওয়েভার সনদের জন্য আবেদন করা হলেও অনেক অনুরোধের পর ১৬ ফেব্রুয়ারি ওয়েভার সনদ দেয় নৌ বাণিজ্য দপ্তর। কলম্বো থেকে জাহাজ যাত্রা করতে চারদিন বিলম্ব হয়েছে। এতে জাহাজের ভাড়া বাবদ আমাদের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে।"
এ বিষয়ে মার্কেন্টাইল মেরিন অফিসের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ টিবিএসকে বলেন, "ওয়েভার সনদ পেতে ৩ দিনের বেশি সময় লাগার অভিযোগ সঠিক নয়। কোন বন্দরে জাতীয় পতাকাবাহী জাহাজে পণ্য নেওয়ার স্পেস খালি থাকলে বিদেশি জাহাজে ওয়েভার সনদ প্রদান করা হয় না।"
এদিকে ওয়েভার সনদ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন কার্যালয়ে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট রুটে চলাচলকারী বিদেশি কোম্পানির ফিডার ভেসেলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ টিবিএসকে বলেন, "চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোতে কন্টেইনারবাহী প্রায় ৯০টি ফিডার ভেসেল চলাচল করে। এর মধ্যে রয়েছে ৮ টি বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ। দেশীয় পতাকাবাহী জাহাজ দিয়ে প্রায় ২০ শতাংশ পণ্য পরিবহন সম্ভব। এই অবস্থায় ৮০ ভাগ পণ্যের জন্য ওয়েভার সনদ পেতে ১০ দিনের বেশি অপেক্ষায় থাকা অবান্তর।"
তিনি আরো বলেন, "বিষয়টি নিয়ে নৌ বাণিজ্য দপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসারের সাথে আগামী রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) আমাদের বৈঠক রয়েছে। সেখানে এসব সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হবে।"
শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর বছরে ৩০ লাখের বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়। চীন সহ সিঙ্গাপুর, কলম্বো, পোর্ট কেলাং, তানজুম পেলিপাস বন্দরে চলাচল করে ফিডার ভ্যাসেল।
শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশন জানায়, বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজে ৫০ শতাংশ পণ্য পরিবহনের কোন সুযোগ নেই।
অন্যদিকে ওয়েভার সনদের জন্য একটি জাহাজকে ১০ দিনের বেশি অপেক্ষায় রাখাও অযৌক্তিক। কারণ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর যেমন সিঙ্গাপুর, কলম্বো, পোর্ট কেলাং, তানজুম পেলিপাস বন্দরে ৫ দিনের মধ্যে জাহাজ পৌঁছে যায়।
আইন অনুযায়ী, বিদেশি জাহাজ মালিক বা তার প্রতিনিধিকে পণ্য বোঝাই করার পুর্বে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ নৌ বাণিজ্য দপ্তর (মার্কেন্টাইল মেরিন অফিস) বরাবর অনলাইনে আবেদন করতে হয়।