ব্যবসা নিবন্ধন আরও ব্যয়বহুল হতে যাচ্ছে
যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি) তাদের সেবা ফি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এ বিষয়ে অবগত কর্মকর্তারা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন, এর ফলে দেশি-বিদেশি পাবলিক ও প্রাইভেট কোম্পানি, অংশীদারি কারবার ও সোসাইটিকে আরজেএসসির সেবা নিতে বাড়তি খরচ করতে হবে।
আরজেএসসির ৩৪টি সেবা নেওয়ার ফি দুই থেকে দশগুণ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে ২১টি সেবার ফি অপরিবর্তিত থাকছে। আর ৩টি সেবার বিপরীতে ফি প্রত্যাহার করা হয়েছে। ১২ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংস্থাটির এক সভায় এসব খসড়া প্রস্তাব করা হয়।
এ বিষয়ে আরজেএসসির রেজিস্ট্রার শেখ শোয়েবুল আলম দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ডকে বলেন, 'আরজেএসসির অধিকাংশ সেবার ফি প্রায় এক দশক আগে নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ব্যয় অনেক বেড়েছে। গ্রাহকের সেবার বিপরীতে খরচও বেড়েছে। যে কারণে নতুন করে সেবার ফি নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।'
তিনি জানান, 'কোন সেবায় নতুন ফি কত হবে, তার একটা খসড়া প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এখনও চূড়ান্ত হয়নি।'
এ বিষয়ে শোয়েবুল আলমের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, কার্যক্রম বেড়ে যাওয়ায় আরজেএসসির পরিচালনায় ব্যয়ও বেড়েছে। এ কারণে নতুন করে সেবার ফি নির্ধারণ করার কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিবন্ধন ফি বাড়ালে অতিরিক্ত খরচের চাপে নতুন উদ্যোক্তাদের ব্যবসা শুরু করা কঠিন হবে। এতে আনুষ্ঠানিক খাতের সম্প্রসারণ বাধাগ্রস্ত হবে।
বেসরকারি খাতের উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে গড়া প্রতিষ্ঠান বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট বা বিল্ড দীর্ঘদিন ধরে সহজে ব্যবসা ও ব্যবসার খরচ কমানো নিয়ে কাজ করছে। এ সংস্থার সাবেক চেয়ারপারসন আবুল কাশেম খান টিবিএসকে বলেন, 'বাংলাদেশে ব্যবসা করার খরচ বেশি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ফির বাইরেও অনেক খরচ করতে হয় উদ্যোক্তাদের। অনেক অপ্রয়োজনীয় কাজ ও খরচ রয়েছে। এতে ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে এই সংকটকালীন সময়ে আরজেএসসির সেবার ফি বাড়লে সেটা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য ভালো হবে না।'
ঢাকা চেম্বার অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক প্রেসিডেন্ট আবুল কাশেম আরও বলেন, 'সরকার যদি আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির সম্প্রসারণ করতে চায়, তাহলে বরং বিশেষ করে নতুন ব্যবসায়ীদের জন্য আরজেএসসির সমস্ত ফি তুলে দেওয়া উচিত। আর পুরোনো ব্যবসায়ীদের থেকে ফি নিতে হলেও সেটা যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে।'
কর্মকর্তারা বলেন, আরজেএসসি বর্তমানে যেসব সেবা দেয়, তার অধিকাংশের ফি নির্ধারণ হয়েছে প্রায় এক দশক আগে ২০১৩ সালের জুলাইয়ে। এরপর ২০১৬ সালের মে মাসে কিছু সেবার ফি বাড়ানো হয়। সময়ের সাথে গত অর্থবছরের (২০২১-২২) শেষের দিকে আরজেএসসিতে নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা বৃদ্ধি হয় ২ লাখ ৭০ হাজার।
তবে এসব কোম্পানির নথিপত্র সংরক্ষনের প্রয়োজনীয় অফিস স্পেস সংস্থাটির নেই বলে জানান আরজেএসসির কর্মকর্তারা। আবার প্রতি বছর নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা বাড়ছে। ফলে বিভিন্ন সেবার বিপরীতে খরচও বাড়ছে। অন্যদিকে আরজেএসসি সব কার্যক্রম অনলাইন ব্যবস্থায় নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। অনলাইন সার্ভার ব্যবস্থাপনায়ও খরচ বাড়ছে।
অন্যদিকে আরজেএসসির সেবা পেতে অনেকসময়ই নির্ধারিত ফির বাইরে অতিরিক্ত অর্থ খরচ ও রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে হয়রানির শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে সেবাগ্রহীতাদের। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার শেখ শোয়েবুল আলম বলেন, 'কোনো গ্রাহক হয়তো তার সুবিধা বা আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী সেবা না পেয়ে অভিযোগ তুলতে পারেন। কিন্তু আরজেএসসি তার সর্বোচ্চ সক্ষমতা দিয়ে গ্রাহকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
'প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন শেষ করা হচ্ছে। এজন্য কর্মকর্তারা বাড়তি সময় পর্যন্ত অফিস করেন। গ্রাহকদের কোনো ধরনের হয়রানি ছাড়া কাজ করা হচ্ছে।'
আরজেএসসি অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় জোর দিচ্ছে বলে জানান তিনি।
প্রধান প্রধান যেসব সেবার ফি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে
কোম্পানি নিবন্ধন করার আবেদন ফি ১ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছে আরজেএসসি। ফার্মের নামের ও প্রধান কারবারের স্থানের পরিবর্তন রেকর্ড করার ফি ২০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা, শাখা বন্ধ বা উদ্বোধন করার টোকা রাখা ফি ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফার্মের রদবদল বা বিলুপ্তি লিপিবদ্ধ করার ফি ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ভুল সংশোধন ফি ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০০ টাকা করার প্রস্তাব রয়েছে।
সোসাইটি নিবন্ধনের ফি ১০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা করা হচ্ছে। নামের ছাড়পত্র নেওয়ার ফি ১ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা করা হচ্ছে।
কোনো কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার তার শেয়ার হস্তান্তরের সময় রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে উপস্থিত হতে না পারলে সেক্ষেত্রে একটি নতুন সেবা ফি অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে আরজেএসসি গঠিত কমিশন আবেদনকারীর কোম্পানিতে যাবে। এজন্য কমিশনের যাতায়াত খরচ এবং সর্বনিম্ন ১০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা ফি ওই কোম্পানিকে পরিশোধ করতে হবে।