উচ্চ আদালতে রায় ও আদেশে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়ছে
দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়ছে। কয়েকজন বিচারপতি বাংলায় রায় ও আদেশ দেন। মাঝে মাঝেই বাংলায় আবেদন দাখিল করেন কয়েকজন আইনজীবী। শুনানিতে এখন বাংলার ব্যবহারও বেশি।
পাশাপাশি, সুপ্রিম কোর্টের উভয় (আপিল ও হাই কোর্ট) বিভাগের বিচারপতিদের দেওয়া ইংরেজি রায় বিচারপ্রার্থীদের বোধগম্য করতে অনুবাদ করা হচ্ছে বাংলা ভাষায়।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে যাত্রা শুরু করে দুই বছরে সুপ্রিম কোর্টের অনুবাদ সেল প্রায় ২০০টি ইংরেজি রায় বাংলায় রূপান্তর করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সংবলিত 'আমার ভাষা' নামের একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে এ কাজে।
উচ্চ আদালতের ইংরেজি রায় বিচারপ্রার্থীদের বোধগম্য করতে বাংলায় অনুবাদের উদ্যোগকে প্রশংসনীয় পদক্ষেপ বলছেন আইনজীবীরা। তবে উদ্যোগটি পুরোপুরি সফল করতে হলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীলভাবে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন তারা।
রায় অনুবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মাদ সাইফুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমার ভাষা সফটওয়্যার ব্যবহার করে খুব ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে। মাত্র পাঁচ সদস্যের টিম নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের অনুবাদ সেল কাজ করলেও এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ রায় অনুবাদ করা সম্ভব হয়েছে।"
সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে সর্বপ্রথম মরহুম বিচারপতি আমীরুল ইসলাম চৌধুরী বাংলা ভাষায় রায় লেখা থেকে শুরু করেন। ১৯৮৯-৯০ সালের দিকে তিনিই প্রথম বাংলা ভাষায় রায় প্রদান করে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন।
পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময় বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, বিচারপতি হামিদুল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানও বাংলা ভাষায় রায় প্রদান করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেন, "আমি বিচারপতি হওয়ার পর বাংলা হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের প্রায় ২০০ রায় বাংলা ভাষায় প্রদান করি। এরপর এখন অনেক বিচারপতিই বাংলা ভাষায় রায় ও আদেশ প্রদান করেন।"
তিনি বলেন, "এখন সুপ্রিম কোর্ট ইংরেজি রায় বাংলা ভাষায় অনুবাদ করছে। এটি বেশ ভালো উদ্যোগ।"
"তবে এই অনুবাদ করা রায় যাতে করে কোনো মামলায় নজির হিসেবে উপস্থাপন করা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ, অনুবাদ করা রায়ে মূল রায়ের মূল বিষয়বস্তু অনেক সময় বাদ পড়তে পারে," যোগ করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বিচারপতি খায়রুল হক সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল, স্বাধীনতার ঘোষণা, স্বাধীনতাযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থান সংরক্ষণ, চার নদী সংরক্ষণসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় বাংলায় দেন।
এখন আপিল বিভাগের বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম হাইকোর্টের বিচারক থাকা অবস্থায় প্রায় ১৫ হাজার রায় ও আদেশ বাংলায় প্রদান করেছেন।
গত ১ ফেব্রুয়ারি চেম্বর জজ আদালতের বিচারকের দায়িত্ব পালনকালে তিনি সকল আদেশ বাংলা ভাষায় দেন এবং ওইদিন ঘোষণা করেন যে তিনি সকল রায় ও আদেশ বাংলা ভাষায় প্রদান করবেন।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, "উচ্চ আদালতের বিচারপতি, আইনজীবী, বেঞ্চ সহকারী যারা আছেন, তারা দীর্ঘদিন একটি কাঠামোর মধ্যে ইংরেজি ভাষায় কাজ করে আসছেন। তাই চাইলেই খুব দ্রুত উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার পুরোপুরি চালু করা সম্ভব নয়।"
"সফটওয়্যার ব্যবহার করে রায় অনুবাদের উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। তবে সাধারণ মানুষ যেন আসলেই উপকৃত হয় সেভাবেই কাজ করতে হবে। রায় প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট বিচারপতিদেরও অনুবাদের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে," যোগ করেন তিনি।