পাঁচ মাসে পাঁচ মহাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চূড়া ছুঁতে চান রত্না
‘মানুষ যতটুকু সত্যিকারের বাঁচে, বোধহয় রুদ্ধশ্বাসে নিজের স্বপ্নপূরণের পথ বেয়ে চলায়। বাকী পৃথিবীর সকল চাপ অতিক্রম করে।’ নিজের ফেসবুক পোস্টে নিজের করা প্রিয় উক্তি এটি। এমনটাই বিশ্বাস করেন চিত্রা পাড়ের রত্না - শত বাঁধা স্বত্ত্বেও কারও চাপে স্বপ্নকে পরিত্যাগ না করে এগিয়ে যেতে হয়।
পাঁচ মাসে পাঁচ মহাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চূড়া ছুঁতে চান চিত্রা পাড়ের রত্না। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অঙ্কের শিক্ষক মেয়েটি আইডল মানেন মাশরাফিকে।
চিত্রা পাড়ের মেয়ে। পেশায় শিক্ষক। কিন্তু পাহাড় তার প্রেম ও প্রেমিক। ছোটবেলা থেকেই মায়ের কাছে গল্প শুনেছেন, মায়ের ছোটবেলা কেটেছে পাহাড়ের কোলে সাগরের তীরে। কিন্তু বাবার কাজের এবং পৈতৃক ভিটারসুত্রে চিত্রার পাড়ে চলে এলেও মায়ের মনে দাগ কেটে থাকা পাহাড় ছোট্ট মেয়েটির মনেও হাতছানি দিতে লাগল! বড় হতে হতে তা যেন পেয়ে বসলো রত্নাকে।
২০১৬ থেকে সেই প্রেম যেন হৃদয়ের গভীরে গেঁথে বসে। এরপর বাংলাদেশের প্রথম পর্বতারোহন ক্লাব বিএমটিসির সাথে যুক্ত হন রত্না। এভারেস্ট জয়ী এম এ মুহিতের নেতৃত্বে বাংলাদেশের কেওক্রাডং চূঁড়া ছুঁয়ে দেওয়ার সময় রত্নার নাম হয়ে যায় আয়রন লেডি। জীবনের চারপাশের অজস্র বাঁধা তাকে নিয়মিত আঘাত দিতে থাকে। কিন্তু মাশরাফিকে আইডল মেনে সামনে এগিয়ে চলা রত্না কোনো বাধাকে বাধা মনে করেননা।
শারীরিক সক্ষমতা তৈরীতে তিনি ২০১৬ থেকে এখন পর্যন্ত পর্বতারোহণের মৌলিক ও উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এশিয়ার বিখ্যাত পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ দানকারী প্রতিষ্ঠান নেহেরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টিইনিয়ারিং থেকে,যা ভারতের উত্তরাখন্ডে অবস্থিত।
চলতি বছরের আগস্ট থেকে পাঁচ মহাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উচ্চতার পর্বতগুলোতে উড়াতে চান লাল সবুজের পতাকা। শুরু করতে চান ইউরোপের ডিকটাও পাহাড় চূড়া ছুঁয়ে দেওয়ার মাধ্যমে। ৫২০৫ মি. উচ্চতা এই রাশিয়ার পাহাড় চূড়ার। তার পর একে একে আফ্রিকা, ওশেনিয়া, অষ্ট্রেলিয়া এবং ল্যাটিন মহাদেশ দক্ষিণ আমেরিকার্ চূড়াগুলো। অর্থ্যাৎ আফ্রিকার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বত চূড়া মাউন্ট কেনিয়া-ব্যাটেইন পিক(৫১৯৯) মি., ওশানিয়ার সুমান্ত্রি-নাগা পুলু (৪৮৭০মি.), অষ্ট্রেলিয়ার টাউনসেন্ড (২২০৯মি.)এবং দক্ষিণ আমেরিকার ওজোস ডেল সালাদো (৬৮৯৩মি.) ছূড়া ছুঁয়ে দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এই আয়রন লেডি পর্বতারোহী নারী।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বীরবিক্রম বাবা এস আফজাল হোসেন। যোদ্ধা বাবার মেয়ে রত্না বিশ্বাস করেন, নতুন যুদ্ধে দেশকে আলোকিত করতে পারবেন, অনেক বাধা পেরিয়ে হলেও।
রত্না বলেন, এই অভিযান বাংলাদেশের অর্জনের জায়গায় সংযোজন করবে নতুনত্ব। কেননা এমনটি ঘটলে তা কোনো বাংলাদেশীর জন্য এটিই হবে প্রথম কারও সাফল্য। আমি বিশ্বাস করি প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এই গর্ব স্পর্শ করতে পারবো।আর তাই সবগুলো মহাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চূড়া স্পর্শের অঙ্ক মেলানোর শপথ নিয়েছি।’
প্রয়োজন উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা। রত্নার বিশ্বাস তার আইডল মাশরাফি, যিনি তার এলাকার সংসদ সদস্যও-তিনি পাশে দাঁড়াবেন এই অভিযাত্রায়। এছাড়াও নারীর ক্ষমতায়নে কিংবা অগ্রযাত্রায় সবসময় অবদান রাখা পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানগুলোও পাশে থাকবে বলে বিশ্বাস রত্নার।