নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ৬ বছর: রায় কার্যকর না হওয়ায় হতাশ স্বজনরা
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ৬ বছর পূর্ণ হলো আজ সোমবার। নিম্ন আদালতের পর উচ্চ আদালতে ২০১৮ সালে ২২ আগস্ট ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রেখে বাকি আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা বহাল রাখেন। বর্তমানে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে। দেড় বছর ধরে মামলাটি আপিল বিভাগে থাকায় নিহতের আত্মীয়-স্বজনরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। নিহতদের পরিবারসহ নারায়ণগঞ্জবাসী সাত খুন মামলার রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন ।
এ মামলায় ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালত সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র্যাব-১১-এর চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার এম মাসুদ রানাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদন্ড এবং ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদানের আদেশ দেন।
আলোচিত সাত খুনে নিহতরা হলেন- নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকার, যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান স্বপন, স্বপনের গাড়ির চালক জাহাঙ্গীর, নজরুলের সহযোগী তাজুল ইসলাম, নজরুলের বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন ও চন্দন সরকারের গাড়ি চালক ইব্রাহিম। নিহতের সাতটি পরিবারের মধ্যে ৫টি পরিবার উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে এখন অর্থকষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
সাত খুনে নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেন, সাত খুন মামলায় রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি। দীর্ঘ ছয় বছর ধরে বিচারের আশায় আমরা দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে ১৫ জনের ফাঁসি বহাল রেখেছে। বর্তমানে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে। কিন্তু প্রায় দেড় বছর ধরে মামলাতে আপিল বিভাগে ঝুলে থাকার কারণে আমরা ন্যায়বিচার পাচ্ছিনা।
তিনি দাবি করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ যেন দ্রুত মামলাটির শুনানির শেষ করে রায় প্রদান করেন। উচ্চ আদালত থেকে সাত খুনের আসামীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি দন্ডাদেশসহ যে রায়টি হয়েছে সেই রায়টি যেন সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে বহাল থাকে। আমরা এ্যাটর্নি জেনারেলের সাথে কথা বলেছি, তিনি আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন সাত খুন মামলায় কাউকে ছাড় দেয়া হবে।
বিউটি বলেন, সাত খুনে সাতটি পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। এদের মধ্যে ৫টি পরিবার এখন চরম অর্থকষ্টে দিনাদিপাত করছে। নিহত তাজুল ইসলামের পিতা আবুল খায়ের বলেন, আমারা নিম্ন আদালত থেকে আসামীদের ফাঁসির রায়টি দ্রুততম সময়ে পেয়েছি। কিন্তু মামলাটি এখনও উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে আটকে আছে। আমরা বর্তমানে সাত খুন মামলাটি নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছি। কারণ আসামীরা খুবই প্রভাবশালী ও টাকাওয়ালা লোক।
তিনি আরও বলেন, আমরা সাত খুন মামলার রায়টি জীবিত থাকতে দেখে যেতে চাই। কারণ আমরা জানতে পেরেছি সাত খুনে নিহত সিরাজুল ইসলাম লিটনের বাবা গত দুই দিন আগে মারা গেছেন। তিনি তার ছেলের হত্যার বিচার দেখে যেতে পারলেন না। আমরা ৭ খুন মামলার রায় দ্রুত কার্যকর করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানাই।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের রাষ্টপক্ষের আইনজীবি পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, সাত খুন মামলাটি উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে আপিল শুনানীর অপেক্ষায় রয়েছে। হাইকোর্ট ডিভিশনে সাত খুন মামলায় যে সাজাটি বহাল রেখেন সেই রায়ের বিরুদ্ধে আসামীপক্ষ আপিল বিভাগে আপিল করেছেন। আশা করি এ বছরই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এখন তো করোনা ভাইরাসের কারণে উচ্চ আদালতের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তাই এ মামলাটি এখন একই অবস্থায় আছে। এ মামলাটি আপিল বিভাগে শেষ হলে এরপর রিভিউ হবে।
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ২৬ জনের ফাঁসি ও ৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজার রায় হয়। আসামি পক্ষের আপিলের পর হাইকোর্ট বিভাগ নিম্ন আদালতে যেখানে ২৬ জনের ফাঁসি আদেশ ছিল সেখানে হাইকোর্ট ১৫ জনকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। মৃত্যুদন্ড ১০ জনকে সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছেন। তবে মূল আসামীদের মৃত্যুদন্ড বহাল আছে। অন্যান্য আসামিদের সাজা বহাল রেখেছেন।
তিনি আরও বলেন, হাইকোর্ট যে রায়টি দিয়েছেন আমরা আশা করি আপিল বিভাগেও সেই একই রায়টি বহাল থাকবে।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলায় হাজিরা দিয়ে ফেরার পথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনকে অপহরণ করা হয়।
অপহরণের তিনদিন ৩০ এপ্রিল নজরুলসহ ৬ জন ও ১ মে লিটনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীর বন্দরের শান্তিরচর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।