ব্যবসায়ীদের হয়রানির কথা শুনতে চাইলেন না এনবিআর চেয়ারম্যান
ব্যবসায়ীদের কথা শুনতে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও যখন মাঠ পর্যায়ে হয়রানি আর অনিয়ম নিয়ে কথা এলো, তখনই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম তা শুনতে আগ্রহ দেখালেন না।
অভিযোগকারী ব্যক্তিকে বক্তব্যের মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বললেন, "আজকে এখানে বসেছি বাজেট বিষয়ক পলিসি নেওয়ার সময় যে সমস্ত বিষয় আলোচনা হবে, সেজন্য। এসব অভিযোগ আমাদের আরেক ফোরামে আলোচনা হবে।"
রোববার (৫ মার্চ) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে প্রাক বাজেট আলোচনা চলাকালে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
আলোচনায় বাংলাদেশ অ্যাগ্রো ফিড ইনগ্রিডিয়েন্টস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আমিরুল ইসলাম বক্তব্য প্রদানকালে আমদানি পণ্য, কিংবা কাঁচামালের এইচএস কোড নিয়ে হয়রানির প্রসঙ্গ তোলেন।
তিনি বলেন, "আমরা মাঝেমধ্যেই দেখি, আমাদের এসআরওতে যে এইচএস কোড অনুমোদন আছে, তা চট্টগ্রাম বন্দর (কাস্টমস) মানছে না। যখন তারা ভিন্ন কোডের অধীনে পণ্য মূল্যায়ন করে, তখন আমরা হয়রানির সম্মুখীন হই (এতে আমাদের অতিরিক্ত ট্যাক্স খরচ করতে হয়)।"
হারমোনাইজড সিস্টেম (এইচএস) কোড হল পণ্য শ্রেণিবদ্ধকরণের একটি মানসম্মত সংখ্যাসূচক পদ্ধতি। সারা বিশ্বের শুল্ক কর্তৃপক্ষ এই পদ্ধতি পণ্য শনাক্তের কাজে ব্যবহার করে থাকে।
এনবিআরের অনুমোদিত এইচএস কোড যাতে সব কাস্টম হাউজে মেনে চলা হয়, তার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "নাহলে আমরা হয়রানির শিকার হচ্ছি। ল্যান্ডিং ট্যাক্স, শিপিং চার্জ বাড়ছে। অনৈতিক কাজতো আছেই, সেগুলো থেকেও আমরা অব্যাহতি চাই।"
এছাড়া, আমদানিকৃত পণ্যের আসল মূল্যের তুলনায় মূল্যায়ন করার সময় কাস্টমস কর্তৃক বেশি শুল্ক ধরার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, "অনেক সময় আমাদের যদি তিন বা দুই ডলার থাকে (আমদানি মূল্য), তারা (কাস্টমস কর্মকর্তারা) অ্যাসেসমেন্ট করে পাঁচ ডলারে।"
"আমার মনে হয় এগুলো রাজস্ব আহরণের অপকৌশল," যোগ করেন তিনি।
এরপরই এনবিআর চেয়ারম্যান তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, "এসব অভিযোগ আমাদের আরেক ফোরামে আলোচনা হবে। সেখানে আমাদের মেম্বারা আছেন, লিখিত অভিযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। আজকে এখানে বসেছি বাজেট বিষয়ক পলিসি নেওয়ার সময় যে সমস্ত বিষয় আলোচনা হবে, সেজন্য।"
"আপনারা (ব্যবসায়ীরা) শুধু হয়রানির কথা বলেন। কিন্তু আপনি নিজের বিষোয়টা কি দেখেছেন, নিজের কাগজপত্র ঠিকমত দিয়েছেন কিনা? এইসএস কোড ঠিকমতো অনুসরণ করেছেন কিনা?," বলেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
এনবিআর সদস্য মাসুদ সাদিকও এনবিআর চেয়ারম্যানের সুরেই বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, "আমাদের কাছে হাজার হাজার প্রমাণ আছে (আমদানিকারক কর্তৃক এইচএস কোড অনিয়মের)। আপনাদের মনমত কাজ না হলেই আপনারা অনিয়মের কথা বলেন।"
আলোচনায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস, বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন ছাড়াও কাগজ, মুদ্রণ, প্রকাশনাসহ ১৬টি সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।