কাস্টমস কর্মীর যোগসাজশে স্বর্ণ চোরাচালানের অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালানে কাস্টমসের সিপাই পদে এক কর্মীর জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার সত্যতা পেয়ে আবদুর রহিম নামের ওই কর্মীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কাস্টমস।
ঘটনার তদন্তে গত ১৪ মার্চ গঠিত হয়েছে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি। তদন্তে সিপাই আবদুর রহিমের বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালানের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
এদিকে সূত্র মতে, দুবাই থেকে আনা স্বর্ণবার বিমানযাত্রীদের কাছ থেকে নিয়ে চোরাচালানকারীদের বুঝিয়ে না দেওয়ায় আবদুর রহিমকে তুলে দিয়ে মারধর করেছে চক্রটি। বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম হাউস এবং কাস্টমসের এয়ারপোর্ট, এয়ারফ্রেইট শাখায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
স্বর্ণ চোরাচালানকারীদের সাথে আবদুর রহিমের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি নজরে এলে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আবদুর রহিমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় কাস্টমস। ১৬ ফেব্রুয়ারি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ফাইজুর রহমান।
বরখাস্ত সংক্রান্ত চিঠিতে কাস্টম উল্লেখ করে, মোঃ আবদুর রহিম চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট ইউনিটে কর্মরত অবস্থায় চোরাচালানের সাথে জড়িত সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়। ঘটনার সত্যতাও পাওয়া যায়। অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
কাস্টমসের সিপাই পদের কর্মীদের কাজ হচ্ছে কাস্টমস অফিসের ডেসপাস সহ বিভিন্ন ধরনের দাপ্তরিক কাজে সাহায্য করা এবং কাস্টমসের সিনিয়র অফিসারদের প্রটোকল ডিউটি প্রদান করা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের জনপ্রশাসন শাখার ডেপুটি কমিশনার বদরুজ্জামান মুন্সি টিবিএসকে বলেন, কাস্টমসের সিপাহী আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে চোরাচালানকারীদের স্বর্ণ পাচারে সহযোগিতার অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার এইচ এম কবিরের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তদন্তে আবদুর রহিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ বিবেচনায় আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করে টিবিএসকে বলেন, দুবাই থেকে একটি চক্র কয়েকজন যাত্রীর মাধ্যমে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ১২টি স্বর্ণবার নিয়ে আসে। বারগুলো কাস্টমসের সিপাই আবদুর রহিমের কাছে জমা দেওয়ার কথা। চুক্তি অনুযায়ী, যাত্রীদের কাছ থেকে স্বর্ণবার বুঝে নিয়ে সেগুলো চোরাচালান চক্রের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিলো আবদুর রহিমের। কিন্তু যাত্রীরা ছয়টি বার আবদুর রহিমের কাছে জমা দেয়নি। ৬টি বার বুঝে না পেয়ে চোরাচালান চক্রটি আবদুর রহিমকে বিমানবন্দর এলাকা থেকে তুলে দিয়ে মারধর করে। তার দুই হাতের নয়টি আঙ্গুলের নখ থেতলে ফেলে।
স্বর্ণচোরাচালানের সাথে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর কেন্দ্রিক কয়েকজন সিএন্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ী এবং চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা জড়িত রয়েছে বলে ওই সূত্র টিবিএসকে নিশ্চিত করেছে। তারা আবদুর রহিমকে তুলে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে বলে জানায় ওই সূত্র।
এদিকে গত ১৭ মার্চ আবদুর রহিমের সাথে এই প্রতিবেদক সরাসরি দেখা করলে সে স্বর্ণ চোরাচালানের সাথে জড়িত নয় বলে দাবি করে। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে অসুস্থ থাকার কারণ জানতে চাইলে সে টিবিএসকে জানায়, পতেঙ্গা এলাকায় মটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তার কোমর এবং পা আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে তাকে এক মাসের বিশ্রামে থাকতে বলা হয় এবং আঙ্গুলে কোন চাপ না দেওয়ার পরামর্শ দেয় ডাক্তার। তবে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলার সময় তাকে অস্বাভাবিক দেখা যায়।
তদন্ত কমিটির আহবায়ক ডেপুটি কমিশনার এইচ এম কবিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'তদন্ত কমিটির বিষয়ে আমি এখনো অফিসিয়ালি চিঠি পাইনি। তদন্ত শুরু করলে বিস্তারিত জানাতে পারবো।'