ফেব্রুয়ারিতে ১১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ১২.১৪ শতাংশে নেমেছে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি
আমদানি কমে যাওয়া এবং বিশ্ব অর্থনীতি সংকটে থাকায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি গত এগারো মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ১২.১৪%-এ নেমে এসেছে, যা ২০২২ এর জানুয়ারিতে ছিল ১২.৬২%। গত বছরের মার্চে প্রবৃদ্ধি ১২.২৯% ছিল।
ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও ইমরানুল হক টিবিএসকে বলেন, "বেসরকারি খাতের ঋণের গ্রোথ তখন বাড়ে যখন উৎপাদন পুরোদমে চালু থাকে। আমাদের বেসরকারি খাতের ঋণের গ্রোথ কমার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো আমাদের গত কয়েক মাস জুড়ে আমদানির পরিমাণ কমে গেছে।"
তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী পণ্যের চাহিদার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে, যার কারণে শিল্প কারখানা উৎপাদন কমিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ডলারের বিপরীতে টাকার ব্যাপক পতনের কারণে দেশের ব্যাংকিং খাতে তারল্য ও ডলার সংকট হয়েছে। যার ফলে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রভাব পড়েছে।
ইমরানুল হক বলেন, "সাধারণত নতুন করে শিল্প প্রতিষ্ঠান শুরু করতে হলে ক্যাপিটেল মেশিনারিজ, ইন্ড্রাস্টিয়াল র মেটেরিয়াল আমদানি করতে হয়। এখন ব্যাংকগুলোর ডলারের সংকটের কারণে আমদানি অনেকটা কমে গেছে। যা বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলেছে।"
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে আমদানি লেটার অফ ক্রেডিট (এলসি) খোলার হার প্রায় ২৫% কমেছে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি মেয়াদে এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ৩৯.৪৬ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২২ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ বিলিয়ন ডলার কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, জুলাই-জানুয়ারি মেয়াদে পেট্রোলিয়াম ছাড়া ক্যাপিটেল মেশিনারি, ভোগ্যপণ্য, মধ্যবর্তী পণ্য এবং শিল্পের কাঁচামাল আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ক্যাপিটেল মেশিনারির জন্য এলসি খোলা হয় ১.৪১ বিলিয়ন ডলারের, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪.২৫ বিলিয়ন ডলার।
ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক শীর্ষ অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন টিবিএসকে বলেন, "বেসরকারি খাতের ঋণ চাহিদা কম থাকার অন্যতম কারণ হলো, বিশ্ববাজারের ঘোলাটে অবস্থার মধ্যে নতুন করে উৎপাদনের পরিমাণ কেউ বাড়াতে চাচ্ছে না।"
তিনি আরও বলেন, "আমাদের গত বছরের জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী ছিল তার কারণ, সেসময় বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম অনেক বেশি ছিল। এখন অনেক পণ্যের দাম কমেছে, তাতে আমদানি নির্ভর ঋণের গ্রোথ অনেকটা কমেছে।"
আরো দুটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমদানি কমে যাওয়া ছাড়াও বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমার কারণ হলো, অনেক ব্যাংক তারল্য সংকটে রয়েছে।
তারা বলেন, কয়েকটি ব্যাংকের ঋণ বিতরণে অনিয়ম মার্কেটে প্রকাশ হওয়ায় অধিকাংশ ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে। এই ব্যাংকগুলো ঋণ দেওয়ার তুলনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এসএলআর ও সিআরআর জমা রাখতেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক তফসিলি ব্যাংক পরিসংখ্যান প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ইসলামী ব্যাংকগুলোর আমানত ব্যাপক কমেছে।
২০২২ এর জুন প্রান্তিক শেষে ইসলামী ব্যাংকগুলোর আমানত ছিল ৩ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। ২০২২ এর ডিসেম্বর শেষে তাদের আমানতের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা।