টেস্ট দলের অনুশীলনে বিশ্রামে ‘কখনও ক্লান্ত না হওয়া’ সাকিব
ব্যস্ত সূচি থাকে এখন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের। দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় বলে সাকিব আল হাসানের মাঠের ব্যস্ততাও বেশ। দুটি ফরম্যাটের নেতৃত্বে থাকায় বরং তার ব্যস্ততা বাকি অনেকের চেয়েই বেশি। দল গোছানো, পরিকল্পনা সাজানো, মিটিং; আরও কতো কী সামলাতে হয় তাকে। তারকা এই অলররাউন্ডার অবশ্য মাঠের বাইরেও সমানভাবে ব্যস্ত।
'দুর্ভাগ্যজনক' হলেও সত্যি যে, তার এই ব্যস্ততা প্রায়ই মাঠের ব্যস্ততাকেও ছাড়িয়ে যায়। এই যেমন খেলা, ব্যক্তিগত কাজ সেরে ক্লান্ত হয়ে পড়া সাকিব বিশ্রাম নিলেন টেস্ট দলের অনুশীলনের প্রথম দিনে। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের জন্য রোববার মিরপুরে অনুশীলন শুরু করেছে বাংলাদেশ, কিন্তু শুরুর দিনেই অধিনায়ককে সঙ্গে পায়নি দল।
গত কিছুদিন যতোটা ব্যস্ততায় সাকিবের দিন গেছে, তাতে বিশ্রাম লাগতেই পারে তার। কিন্তু মাঠের মতো মাঠের বাইরের কাজেও সাকিবকে 'সুপারম্যান' মনে করেন অনেকেই। বিস্ময়ভরা কণ্ঠে অনেকেই বলে ওঠেন, 'একজন মানুষ একসঙ্গে এতোকিছু সামলাতে পারেন কীভাবে!' এমন প্রশ্ন যাদের মনে, তাদের মনেই এবার প্রশ্ন জাগতে পারে এতো ব্যস্ততা সামলেও ক্লান্ত না হওয়া সাকিবের এখন কেন বিশ্রামের দরকার হলো!
পারফরম্যান্সে সাকিব বাংলাদেশ দলের সুপারম্যান, তা সর্বজন স্বীকৃত। মাঠের বাইরেও ধকল সামলানোয় তিনি কীভাবে অক্লান্ত, সেটার একটা বর্ণনা দেওয়া যাক। সিলেটে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে অনুশীলনের ব্যাপারটাকে ঐচ্ছিক কার্যক্রমে পরিণত করে ফেলেছিলেন সাকিব। বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের কারণে দলীয় অনুশীলনও একদিনের জন্য হয়ে ওঠে ঐচ্ছিক!
অনুশীলনে সাকিবের অনুপস্থিতি অবশ্য নতুন কোনো ঘটনা নয়, তবে সিরিজ চলাকালীন তাকে যেভাবে ভ্রমণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সারতে দেখা গেছে, সেটা কারও কারও কাছে বাড়াবাড়ি পর্যায়ের। সিরিজের মাঝেই সিলেট থেকে দুবার ঢাকা এসেছেন সাকিব। একবার অংশ নিয়েছেন নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে, আরেকবার বাংলাদেশ বিমানের শুভেচ্ছাদূত হতে।
ওয়ানডে সিরিজ শেষে সিলেট থেকেই চট্টগ্রামে যায় দুই দল। কিন্তু ব্যতিক্রম সাকিব, তিনি গেছেন নিজের মতো করে। দুই সিরিজের মাঝে নিজের ক্যান্সার ফাউন্ডেশনের পথচলার শুরুতে ঢাকায় থাকতে হয় বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডারকে। এই কাজ সেরে চট্টগ্রামে যাওয়া সাকিব দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির পর আবারও ঢাকা আসেন ব্যক্তিগত কাজেই।
অল্প সময়ের মধ্যেই আবার চট্টগ্রামে গিয়ে দলের সঙ্গে যোগ দেওয়া বাংলাদেশ অধিনায়ক সিরিজ শেষেও তাড়াহুড়ো করে ঢাকা ফেরেন। তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টির পরপরই ঢাকা ফিরে পরদিন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে খেলতে নামেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার। এই ম্যাচ শেষ করাতেও তাড়া ছিল তার।
৯ বলে ৫ রান করা সাকিব নিজের ১০ ওভার শেষ করে ম্যাচ শেষ হওয়ার অপেক্ষাও করেননি। গত কয়েক বছর ধরে ইয়ামাহার শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করে আসা বাংলাদেশ অলরাউন্ডার মোটর প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটির একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ম্যাচের ৮ ওভার বাকি থাকতেই বিকেএসপি ছাড়েন। সময় স্বল্পতা থাকায় গাড়ি বাদ দিয়ে হেলিকপ্টারে চড়ে অনুষ্ঠানে ঠিক সময়ে পৌঁছান সাকিব, ভাড়াটা তিনিই বহন করেছেন বলে জানা গেছে।
ইয়ামাহার সঙ্গে পুরনো সম্পর্ক, আগেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন; সাকিব তাই যেভাবেই হোক প্রতিষ্ঠানটির অনুষ্ঠানে ঠিক সময়ে পৌঁছেছেন। এ ছাড়া তার গত কয়েক দিনের কার্যক্রমও বলে দেয়, কথা দিয়ে কথা রাখেন তিনি। এ পথে টানা ব্যস্ততাও তাকে ক্লান্ত করতে পারে না। এ কারণে প্রশ্ন ওঠে কোনো কিছুতেই ক্লান্ত না হওয়া সাকিবের বিশ্রামের দরকার এখন কেন, যেদিন কিনা বাংলাদেশ দলের অনুশীলন শুরু!
বাংলাদেশ দলের প্রতি সাকিবের নিবেদন, প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। ভাঙা আঙুলসহ আরও অনেকবার চোট নিয়ে খেলা, দীর্ঘ ভ্রমণ করে এসেই মাঠে নেমে যাওয়াসহ এমন আর অনেক কাজে ফুটে উঠেছে দলের প্রতি তার নিবেদনের ব্যাপারটি। কিন্তু সেই সাকিবই যখন হাজার ব্যস্ততার মাঝেও মাঠের বাইরের সব কাজ সারতে পারলেও অধিনায়ক হয়েও টেস্ট দলের অনুশীলনে অনুপস্থিত থাকেন, তখন তার বিশ্রামের কারণ, দলের প্রতি নিবেদনসহ আরও কিছু বিষয় আলোচনায় উঠে আসে।
ইংল্যান্ডকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করা বাংলাদেশের আরও ভালো সময় কেটেছে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। দাপুটে পারফরম্যান্সে অনেক মাইলফলক গড়ে ২-০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জেতা বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতেও দাপট জারি রেখে প্রথম দুই ম্যাচ দিয়েই সিরিজ নিশ্চিত করে। শেষ টি-টোয়েন্টির পারফরম্যান্স বাদ দিলে আইরিশদের বিপক্ষে 'রাজার' আসনে ছিল বাংলাদেশ।
দারুণ দুটি সিরিজ শেষে এবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে চোখ বাংলাদেশের, ম্যাচটি শুরু হবে আগামী ৪ এপ্রিল। চার মাস পরে দীর্ঘতম ফরম্যাটে খেলা, ম্যাচের দুদিন আগে অনুশীলন শুরু করেছে বাংলাদেশ। রোববার ড্রেসিংরুমে দলের সঙ্গে প্রধান কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহের মিটিংয়ের পর বেলা ২টায় শুরু হয় অনুশীলন।
কোচের সঙ্গে মিটিং শেষে ২টার পর পর মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আসতে শুরু করেন ক্রিকেটাররা। মূল মাঠে সবাই ফিল্ডিং অনুশীলন করেন, সেন্টার উইকেটের পাশে ব্যাটিং করেছেন তামিম ইকবাল, লিটন কুমার দাস, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল হাসান জয়রা। অনেকে ব্যাটিং অনুশীলন সেরেছেন ইনডোরে। স্কোয়াডের বাকি সদস্যরা থাকলেও কেবল সাকিবের দেখা মেলেনি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ হোটেলে বিশ্রামে ছিলেন তিনি।
একদিন অনুশীলনে উপস্থিত না থাকাটা নিশ্চয়ই তেমন বড় কোনো ব্যাপার নয়। দলের অনুমতি সাপেক্ষে নানা কারণে অনেকেই অনুশীলনে অনুপস্থিত থাকেন। পারফরম্যান্সে উজ্জ্বল থাকতে সাকিবের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের অনুশীলনে নিয়মিত ঘাম ঝরানোও হয়তো জরুরি নয়। কিন্তু যে ক্রিকেটার ক্লান্তিকে এক পাশে সরিয়ে রেখে একধারে মাঠ ও মাঠের বাইরে সামলান, সেই ক্রিকেটার যখন অধিনায়ক হয়েও দলের অনুশীলনে যোগ না দিয়ে বিশ্রামে থাকেন, তখন কিছু প্রশ্ন উঠেই যায়। যদিও আফসোস, এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো কেউ নেই বিসিবিতে।