‘তুমিও তো পুরোনো হয়েছ, তোমাকে ফেলে দেব?’ পুরোনো গাড়ি বদল প্রসঙ্গে চালককে জাফরুল্লাহ
অডিটোরিয়ামের এক কোনায় দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন ভদ্রলোক। বয়স বছর পঞ্চাশেক হবে।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মরদেহ শহীদ মিনারে নেওয়া ও জানাজা বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য জানাতে বুধবার (১২ এপ্রিল) সকালে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানেই কাঁদতে দেখা যায় মো. রফিকুল ইসলামকে — তিনি ডা. জাফরুল্লাহর গাড়িচালক।
২০০৫ সাল থেকেই জাফরুল্লাহর গাড়ি চালাচ্ছেন তিনি। এ ১৭ বছরে চালকের বাইরেও তিনি জাফরুল্লাহর কার্যত একজন সঙ্গী হয়ে ওঠেন।
রফিকুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সব জায়গায় আমি তাকে নিয়ে গেছি। দুর্যোগের রাতে, ঝুঁকি মাথায় নিয়ে আমি স্যারকে নিয়ে যেতাম — রাত একটা-দুইটায়ও তাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি।'
'স্যার কখনো আমাকে ড্রাইভারের চোখে দেখেননি, পাশে বসিয়ে খাওয়াতেন। সব সময় বাচ্চাদের পড়াশোনার খবর নিতেন। বাচ্চাদের জন্য খাবার দিতেন,' তিনি বলেন।
রফিকুল জানান, জাফরুল্লাহর শরীর খারাপ থাকত বলে তিনি মাঝে মাঝে রাস্তায় অসুস্থ হয়ে যেতেন। 'আমাকে প্রেশার মাপা শিখিয়েছিলেন। গাড়িতে অসুস্থ হলে আমি সামলাতাম,' বলেন রফিকুল।
জাফরুল্লাহর গাড়ি অনেক পুরোনো ছিল বলে বড় হোটেলে গেলে অন্য চালকেরা রফিকুলকে বলতেন, 'তোমার স্যার এত কম দামি গাড়িতে চড়েন, নতুন গাড়ি কিনতে বলতে পারো না?'
একদিন রফিকুল জাফরুল্লাহকে গাড়ি পুরোনো হয়ে যাওয়ার কথা বলায় ডা. জাফরুল্লাহ তাকে উত্তর দিয়েছিলেন, 'তুমিও তো পুরোনো হয়েছ, তোমাকে কি ফেলে দেব?'
বিভিন্ন জায়গায় চাকরির প্রস্তাব পেয়েও যাননি রফিকুল। 'স্যারের যে ভালোবাসা-সম্মান পেয়েছি, তা ছেড়ে কোথাও যাওয়ার কথা কখনো ভাবিনি। স্যার কখনো আমার কাছে মালিক ছিলেন না, তিনি ছিলেন নিজের মানুষ — যার কাছে সব আবদার করা যায়, যিনি সব সমস্যার সমাধান করে দেন,' বলেন রফিকুল।