লন্ডনে প্রদর্শিত হতে যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ব্যক্তিগত গয়নার সংগ্রহ
প্রয়াত অস্ট্রিয়ান শিল্প সংগ্রাহক হাইডি হর্টেনের সংগ্রহে থাকা সাতশোরও বেশি গয়না আগামী শনিবার থেকে লন্ডনে প্রদর্শিত হবে। হর্টেনের এই সংগ্রহকে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ব্যক্তিগত গয়নার সংগ্রহ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। লন্ডনে প্রদর্শনের পর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় রেকর্ড ১২০ মিলিয়ন পাউন্ডের দাতব্য নিলামে তোলা হবে গয়নাগুলো; খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
অস্ট্রিয়ান বিলিয়নিয়ার হাইডি হর্টেনের ব্যক্তিগত সংগ্রহের এই গয়নাগুলো এই মুহূর্তে ওয়ার্ল্ড ট্যুরে রয়েছে। অর্থাৎ এই গয়নাগুলো একে একে প্রদর্শিত হবে নিউইয়র্ক, সিঙ্গাপুর, তাইপেই ও লন্ডনে। আগামী মাসে জেনেভায় ক্রিস্টি'স-এ এবং অনলাইনে এগুলোর নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে কিছু মহামূল্যবান, বিশেষ গয়না আগামী শনিবার থেকে বুধবার পর্যন্ত সেন্ট্রাল লন্ডনের সেন্ট জেমস নিলামঘরে জনসাধারণের জন্য প্রদর্শন করা হবে।
হাইডি হর্টেনের সংগ্রহে রয়েছে একটি হোয়াইট গোল্ড ও হীরার কার্টিয়ার আংটি, যার মধ্যে আছে সানরাইজ রুবি। এটি বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান নন-ডায়মন্ড রত্নপাথর হিসেবে পরিচিত। আট বছর আগে একটি নিলাম থেকে ৩০.৪ মিলিয়ন ডলার মূল্যে এই গয়নাটি কিনেছিলেন হর্টেন। ২৫.৯ ক্যারেটের বিরল 'পিজন'স ব্লাড' মিয়ানমার রুবিটিকে সুইস রত্বতাত্ত্বিক ইনস্টিটিউট আখ্যা দিয়েছে 'প্রকৃতির এক অদ্বিতীয় সম্পদ' হিসেবে। এই আংটিটি আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
নিলামে আরও থাকবে 'ব্রিয়লেট অব ইন্ডিয়া' নামে পরিচিত ৯০.৩৮ ক্যারেটের কালারলেস ডায়মন্ড কাটের একটি হীরার নেকলেস যা আমেরিকান জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান হ্যারি উইনস্টনের তৈরি। আরও আছে একটি তিন লহরী প্রাকৃতিক মুক্তার নেকলেস, যাতে সংযুক্ত আছে ১১ ক্যারেটের পিংক ডায়মন্ড ক্লাসপ। এটি ৭ থেকে ১০ মিলিয়ন ডলার দামে বিক্রি হতে পারে।
সব মিলিয়ে হাইডি হর্টেনের গয়নার নিলাম থেকে ১৫০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি (১২০ মিলিয়ন পাউন্ড) আয় হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। যদি তা হয়, তাহলে এটিই হবে নিলামে বিক্রি হওয়া সবচেয়ে মূল্যবান ব্যক্তিগত গয়নার সেট। এর আগে ২০১১ সালে ব্রিটিশ-আমেরিকান অভিনেত্রী এলিজাবেথ টেইলরের গয়নার সংগ্রহ নিলামে রেকর্ড ১১৬ মিলিয়ন ডলারে এবং ২০১৯ সালে কাতারের আল-থানি পরিবারের গয়নার সংগ্রহ ১০৯ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়েছিল।
ক্রিস্টি'স এর 'গহনা' শাখার আন্তর্জাতিক প্রধান রাহুল কাদাকিয়া হাইডি হর্টেনের ধনসম্পদকে 'দ্য কালেকশন অব লাইফটাইম' বলে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, "বুলগেরি থেকে শুরু করে ফন ক্লিফ অ্যান্ড আর্পেলস, ছোট্ট কোনো ব্যক্তিগত স্মৃতি থেকে শুরু করে ব্রিয়লেট অব ইন্ডিয়া'র মতো রত্ন... এটা একজন সংগ্রাহকের স্বপ্ন।"
বিলিয়নিয়ার হাইডি হর্টেনের স্বামী হেলমুট হর্টেন ছিলেন ডিপার্টমেন্ট স্টোর ম্যাগনেট। ১৯৮৭ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর প্রায় ২.৭ বিলিয়ন পাউন্ডের মালিক হন হিডি। অস্ট্রিয়ান এই বিলিয়নিয়ার নারী ২০২২ সালের জুনে মৃত্যুবরণ করেন।
মৃত্যুর সময় হাইডি হর্টন কোনো সরাসরি কোনো উত্তরসূরি রেখে যাননি। ফলে তার বিপুল সম্পত্তি কে পাবে তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পাশাপাশি তাদের সম্পদের উৎস নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, নাৎসি বাহিনী যেসব ইহুদিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিল, হেলমুট হর্টেন সেগুলো দখল করেছেন।
হর্টেনের সংগ্রহ নিয়ে জার্মানির উরটসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদদের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'হেলমুট হর্টেন নাৎসি রাষ্ট্রের তৈরি অর্থনৈতিক পরিস্থিতি থেকে লাভবান হয়েছিলেন। তবে ইহুদিদের ওপর চাপ সৃষ্টির পেছনে তার কোনো সক্রিয় ভূমিকা নেই।"
ক্রিস্টি'স এর এই নিলাম থেকে প্রাপ্ত সব টাকা যাবে হর্টেন ফাউন্ডেশনে। ভিয়েনায় একটি পাবলিক আর্ট মিউজিয়াম নির্মাণ করেন যেন সেখানে তার সংগ্রহগুলো রাখা যায় এবং চিকিৎসা গবেষণা কাজে অর্থায়নের জন্য ২০২০ সালে হর্টেন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হাইডি।
কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, হাইডি হর্টেন কালেকশন জাদুঘর উদ্বোধনের কয়েকদিন পরেই তিনি মারা যান। এই জাদুঘরে ফ্রান্সিস বেকন, গুস্তাব ক্লিমট, ডেমিয়েন হার্স্ট, ইগন শিলা ও পাবলো পিকাসোর মতো শিল্পীদের শিল্পকর্ম রয়েছে।
তারুণ্যে হাইডি হর্টেন ছিলেন খুব ভালো একজন আইস স্কেটার। সারাজীবনই তিনি আইস হকির ভক্ত ছিলেন এবং অস্ট্রিয়ান টিম ইসি-কেএসির সমর্থক ছিলেন। এই দলটিকেও তিনি এক বছরে ৩ মিলিয়ন ইউরো দান করেছিলেন বলে জানা যায়। দলটি হাইডি হর্টেনের নামে একটি স্টেডিয়ামের নামকরণ করেছে।