৯৬ বছর বয়সে মারা গেলেন সংগীতশিল্পী ও নাগরিক অধিকারকর্মী হ্যারি বেলাফন্টে
সংগীতশিল্পী ও অভিনেতা হ্যারি বেলাফন্টে ম্যানহাটনের নিজ বাড়িতে ৯৬ বছর বয়সে মারা গেছেন।
কনজেসটিভ হার্ট ফেইলিওরের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তার মুখপাত্র কেন সানশাইন।
ইতিহাসের অন্যতম সফল আফ্রিকান-আমেরিকান এ পপ তারকার তুমুল জনপ্রিয় সংগীতের তালিকায় আছে আইল্যান্ড ইন দ্য সান, মেরি'স বয় চাইল্ড, ডে-ও (দ্য ব্যানানা বোট সং) ইত্যাদি।
তবে তার জীবনের সর্বোচ্চ অর্জনের তালিকায় জ্বলজ্বল করবে যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গদের নাগরিক অধিকার আদায়ের জন্য তার লড়াই।
তার মৃত্যুতে তাৎক্ষণিকভাবে শোক প্রকাশ করা তারকাদের মধ্যে রয়েছেন অভিনেত্রী মিয়া ফারো। এক টুইটে তিনি বেলাফন্টেকে 'সুগায়ক' এবং 'একজন তীব্র আদর্শিক ও যত্নশীল মানুষ' হিসেবে অভিহিত করেছেন।
কিং অভ ক্যালিপসো খেতাব পাওয়া বেলাফন্টের জন্ম ১৯২৭ সালে, নিউ ইয়র্কের হার্লেমে।
হাই স্কুলে থাকতেই পড়ালেখা ছেড়েছিলেন বেলাফন্টে। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন নৌবাহিনীতে যোগ দেন তিনি।
স্বপ্ন ছিল অভিনয়শিল্পী হওয়ার। যুদ্ধের পর সে লক্ষ্যে এরউইন পিসকাটোরের বিখ্যাত ড্রামাটিক ওয়ার্কশপ-এ অভিনয় শেখা শুরু করেন হ্যারি বেলাফন্টে। তার সঙ্গে তখন সেখানে আরও অভিনয় শিখেছিলেন মারলন ব্র্যান্ডো, ওয়াল্টার ম্যাথ ও টনি কুটিস প্রমুখ।
নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন ক্লাবে গান গেয়ে অভিনয় শেখার খরচ চালাতেন বেলাফন্টে। ওই সময় তিনি গেয়েছিলেন মাইলস ডেভিস, চার্লি পার্কারের মতো শিল্পীদের দলে।
এর মাধ্যমেই একটি রেকর্ডিংয়ের চুক্তি পান তিনি। ওই রেকর্ডিংয়ের জন্য মার্কিন লাইব্রেরি অভ কংগ্রেস-এ ফোক সংগীত নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি।
১৯৫৬ সালে হ্যারি বেলাফন্টের তৃতীয় অ্যালবাম ক্যালিপসো মুক্তি পাওয়ার পরপরই বিলবোর্ডে শীর্ষে উঠে আসে। ক্যালিপসোই কোনো একক শিল্পীর অ্যালবাম যা প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে এক মিলিয়নের বেশি কপি বিক্রি হয় বলেও কথিত আছে।
১৯৫৩ সালে জন মুরে অ্যান্ডারসনের মিউজিক্যাল আলমানকার মাধ্যমে ব্রডওয়েতে অভিষেক ঘটে হ্যারি বেলাফন্টের। সহচরিত্রে কাজের জন্য টনি অ্যাওয়ার্ডও জেতেন তিনি।
এরপর সিনেমাতে কাজ শুরু করেন তিনি। আইল্যান্ড ইন দ্য সান সিনেমায় প্রথম মূল চরিত্রে অভিনয় করেন এ সংগীতশিল্পী।
নিজের ক্যারিয়ারজুড়ে ৩০টির বেশি অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন হ্যারি বেলাফন্টে।
হ্যারি বেলাফন্টে আর মার্টিন লুথার কিং ছিলেন কাছের বন্ধু। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার আন্দোলনের স্পষ্ট সমর্থক ছিলেন বেলাফন্টে। আন্দোলনে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি মার্টিন লুথার কিংসহ অন্যান্য অধিকারকর্মীদের জেল থেকে ছাড়িয়ে আনতে জামিনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি।
নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গেও সুসম্পর্ক ছিল বেলাফন্টের। আফ্রিকায় দারিদ্র্য, বর্ণবাদ ও এইডসের বিরুদ্ধেও ক্যাম্পেইন চালিয়েছিলেন তিনি। হয়েছিলেন ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূতও।
ইথিওপিয়ায় দুর্ভিক্ষের ওপর একটি সংবাদ প্রতিবেদন দেখে হ্যারি বেলাফন্টে ঠিক করেছিলেন, মার্কিন শিল্পীদের গান গেয়ে অর্থ উত্তোলন করতে হবে।
১৯৮৫ সালে এ উদ্দেশ্যে উই আর দ্য ওয়ার্ল্ড শীর্ষক তারকামণ্ডিত সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেন তিনি। সেখানে একটি গানে কণ্ঠ মিলিয়েছিলেন মাইকেল জ্যাকসন, স্টিভি ওয়ান্ডার, ব্রুস স্প্রিংস্টিন, বব ডিলান, রে চার্লসের মতো তারকারা।
মার্কিন সংগীতাঙ্গন তখন অহংবোধে পরিপূর্ণ। কেবল বেলাফন্টেরই অন্যদের কাছে পর্যাপ্ত বিশ্বাসযোগ্যতা ও সম্মান ছিল এমন একটি ইভেন্টে সকল সংগীতশিল্পীকে সমবেত করার।
বয়স ৮০'র কোঠায় পৌঁছালেও বর্ণবাদ, আয়বৈষম্য নিয়ে অবিরাম প্রতিবাদ করে গিয়েছিলেন হ্যারি বেলাফন্টে।
বেলাফন্টের ঝুলিতে পুরস্কার ও সম্মাননার অভাব নেই। তিনি পেয়েছেন কেনেডি সেন্টার অনার, ন্যাশনাল মেডেল অভ আর্টস ইত্যাদি পুরস্কার। এমি, গ্র্যামি, অস্কার, ও টনি — বিনোদন জগতের এ চারটি বড় পুরস্কার অর্জন করা বিরল শিল্পীদের একজন হ্যারি বেলাফন্টে।