সরকারকে বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয়ের ক্ষমতা দিয়ে করা বিইআরসি আইনের সংশোধন বাতিল চায় ক্যাব
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইনের সাম্প্রতিক সংশোধনী বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অভ বাংলাদেশ (ক্যাব)।
আগে বিইআরসি শুনানির মাধ্যমে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করত। আইন মন্ত্রণালয় গত বছরের ডিসেম্বরে একটি গেজেট জারি করে সংশোধনী ঘোষণা করে। এ সংশোধনীর ফলে সরকার জ্বালানি তেলের পাশাপাশি গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয় করার ক্ষমতা পায়।
দেশে 'জ্বালানি ন্যায়বিচার' নিশ্চিত করতে ১৩ দফা দাবিতে ক্যাব দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ এবং জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটিকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
শনিবার (২৯ এপ্রিল) রাজধানীর সিরডাপ অডিটোরিয়ামে 'জ্বালানি সংকট ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন' শীর্ষক এক সেমিনারে ক্যাবের সহসভাপতি অধ্যাপক এম শামসুল আলম এ খাতে স্বচ্ছতা আনা এবং দুর্নীতি দূরীকরণে সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ প্রস্তাব দেন।
প্রস্তাবের মধ্যে আরও রয়েছে জ্বালানি খাতে প্রতিযোগিতাহীন যেকোনো আইন নিষিদ্ধ করা, এ খাতে বেসরকারি ও সরকারি বিনিয়োগের মিশ্রণ না করা, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও সংস্থাগুলোকে তাদের নিজস্ব কারিগরি জনবল দিয়ে পরিচালনা করা প্রভৃতি।
ক্যাবের ১৩ দফা দাবির মধ্যে আরও আছে: কস্ট বেসিসে ৫০ শতাংশের অধিক বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদন সরকারি মালিকানায় হতে হবে; গ্যাস উন্নয়ন তহবিল, বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিল, জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিলের অর্থ যথাক্রমে গ্যাস অনুসন্ধান, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জ্বালানি আমদানিতে ব্যয় ভোক্তার ইকুইটি বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হতে হবে; প্রাথমিক জ্বালানি মিশ্রে স্বল্প ও মধ্য মেয়াদি পরিকল্পনায় কয়লা ও তেলের অনুপাত কমাতে হবে এবং নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান ও মজুত বৃদ্ধিসহ নবায়যোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্বারা জ্বালানি আমদানি নিয়ন্ত্রিত হতে হবে; বিদ্যুৎ, জীবাশ্ম ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন নীতি, আইন, বিধি-বিধান ও পরিকল্পনা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সম্পাদিত প্যারিস চুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।
যেকোনো মূল্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। আইনের বিশেষ বিধানগুলোর ফলে জ্বালানি আমদানি সহজতর হয়েছে এবং জ্বালানি-সংশ্লিষ্ট খনিজের জরুরি নিষ্কাশন ও ব্যবহারের ক্ষমতা পাওয়া গেছে। ২০১০ সালে প্রণীত এ আইনের বিশেষ বিধানের মেয়াদ কয়েকবার বাড়ানো হয়েছে। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে শেষবারের মতো মন্ত্রিসভা ২০২৬ সাল পর্যন্ত আরও পাঁচ বছরের জন্য আইনটির মেয়াদ বাড়ানোর একটি প্রস্তাব অনুমোদন করে।
ক্যাব চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাম্যবাদী দলের সভাপতি দিলীপ বড়ুয়া, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার ড. শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের সহসম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম, অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ, স্থপতি ইকবাল হাবিব ও আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
সেমিনারে দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইনের সমালোচনা করে রাশেদ খান মেনন বলেন, এই আইনের মাধ্যমে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে যাতে কোনো সরকারি কর্মকর্তার দুর্নীতির বিচার না হয়।
তিনি বলেন, এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে কিন্তু সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। উপরন্তু ভোক্তাদের ক্যাপাসিটি চার্জও দিতে হচ্ছে।
অধ্যাপক বদরুল ইমাম অভিযোগ করেন, রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বাপেক্স অধিকাংশ গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান করলেও সংস্থাটির সক্ষমতা ব্যবহার করা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমেরিকান ইউএসজিএস তাদের জরিপে দেখেছে যে দেশে এখনও ৩২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) অনাবিষ্কৃত গ্যাস রয়েছে। কিন্তু সরকার সেই গ্যাস উৎপাদনে আগ্রহী নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দিলীপ বড়ুয়া বলেন, ক্ষমতাসীন দল এখন রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করে, দুর্নীতি করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পরিপন্থী কাজ করছে।
ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, 'আমি জ্বালানির বিষয়টি বেশি বুঝি না। তবে এখানে যে দুর্নীতি চলছে সেটি বুঝতে বোদ্ধা হওয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই। আনেক আমলা নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের দিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাজ করছেন। এটা খুবই দুঃখজনক।'