ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর অসমাপ্ত কাজ শেষ করার আহ্বান
সদ্য প্রয়াত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা জানানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো তার অসমাপ্ত কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। রোববার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে স্বাস্থ্য আন্দোলন কর্তৃক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন বক্তারা।
'গণমূখী স্বাস্থ্যসেবার জন্য সংগ্রাম- ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা ও স্মৃতিচারণ' শীর্ষক ওই সভায় আলোচকরা বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে জনমানুষ তাদের মুক্তিদাতা হিসেবে দেখতো। তার রাজনীতি কখনো 'পাওয়ার হাউজকেন্দ্রীক' ছিলনা। তার লক্ষ্য ছিল একটাই; আর তা হলো সাধারণ মানুষের উপকার হয় কি-না তা দেখা।
জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে বুঝতে হলে তাকে পড়তে হবে। তার অসমাপ্ত যে কাজ আছে, তা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে; তাহলেই তার প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানো হবে বলে উল্লেখ করেন তারা।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব বলেন, "ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী অনেকের কাছে অ্যাবস্ট্রাক্ট। তাকে আমরা দেখেছি, চিনি কিন্তু বুঝিনি, সেটা আমাদের দুর্ভাগ্য।"
"ডা. জাফরুল্লাহ প্রতি শ্রদ্ধা থাকবে, তবে তা মাজার বানিয়ে নয়। তার অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে," বলেন তিনি।
বিশিষ্ট কলামিস্ট ও লেখক ফরহাদ মজহার বলেন, জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে শুধু একজন ডাক্তার হিসেবে দেখলে সেটি ভুল হবে। সমাজকে বদলে দেওয়া, সমাজের চিন্তাকে বদলে দেওয়ার কাজটি তার মত কেউ করতে পারেনি।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ছেলে বারিশ চৌধুরী বলেন, তার বাবা বিভিন্ন দেশ ঘুরে ঘুরে যেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নেই, সেখানে মেডিকেল ক্যাম্প করতেন। তাকেও সঙ্গে নিয়ে যেতেন।
তিনি বলেন, "তখন দেখেছি কারও বাসায় মেডিকেল ক্যাম্প করা হতো, রান্নাঘরে ওটি বানানো হতো। যুদ্ধের মত ক্রাইসিস সময়ে তিনি দেখিয়েছেন, যে নারীর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, ট্রেনিং দিলে তারাও সেবা দিতে পারেন।"
"তিনি বলতেন, আমাদের দেশের স্বাস্থ্যসেবা কখনো উন্নত হবে না, যতদিন পর্যন্ত আমাদের দেশের ভিআইপিরা বিশ্বাস না করে এটা উন্নত করতে হবে।"
"এছাড়া তিনি অতিরিক্ত ওষুধ খাওয়ার বিরুদ্ধে ছিলেন। তিনি বলতেন এত ওষুধ খেলে রোগী এমনিই অসুস্থ হবে। আমার অসুখ হলে তিনটি ওষুধ দিয়ে আমার চিকিৎসা করতেন- প্যারাসিটামল, ভিটামিন সি ও ঝাল গরুর মাংস," যোগ করেন বারিশ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. কাজী কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, ডা. জাফরুল্লাহ নেই, তার প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কোনোভাবেই যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তার কাজগুলো যেন আরও ভালো করে চলতে থাকে, সে লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, "ডা. জাফরুল্লাহ কোনো শিল্পপতি ছিলেন না, কিন্তু অনেক শিল্পের আইডিয়া তার কাজ থেকে এসেছে। তার প্রতিষ্ঠিত ফার্মাসিউটিক্যালস দেশের অন্যান্য ফার্মাসিউটিক্যালসগুলোর জন্য আদর্শ মডেল হিসেবে কাজ করেছে। তিনি এমন আরও অনেক কিছু আমাদের জন্য করে গেছেন, যা সারাজীবন মানুষ মনে রাখতে বাধ্য।"
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সমন্বয়ক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. মনজুর কাদির, দ্য ইউনিয়নের কন্সাল্টেন্ট অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুর আলম তাহিন, বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. এম মুশতাক হোসেন।