সৌদি আরবের বিতর্কিত ‘শর্তহীন বিয়ে’ নিয়ে নেটফ্লিক্সের ছবি ‘দ্য ম্যাচমেকার’
নেটফ্লিক্সে গত বৃহস্পতিবার মুক্তি পেয়েছে সাইকোলজিকাল থ্রিলার 'দ্য ম্যাচমেকার'। সৌদি আরবের সমাজে প্রচলিত 'মিসইয়ার' বা শর্তহীন বিয়ের যে রীতি, সেই প্রেক্ষাপটে সিনেমাটি নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ভ্যারাইটি।
সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন আবদুলমোহসেন আলধাবান। ২০১৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত 'লাস্ট ভিজিট' তার প্রথম সিনেমা, যেখানে সৌদি আরবের পিতৃতান্ত্রিক সংস্কৃতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
'টেলফাজ ১১' নামের মিডিয়া হাউজের প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে 'দ্য ম্যাচমেকার'। সিনেমায় হুসসাম নামের এক বিবাহিত আইটি কর্মকর্তা ও নূর আলখাদ্রা নামের এক নারী ইন্টার্নের চরিত্রকে ঘিরে থ্রিলার ধাঁচে গল্পটি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
সৌদি আরবে বহু আগে থেকেই গোপনে শর্তহীন বিয়ের (মিসইয়ার) চর্চা রয়েছে। এ বিয়ের শর্ত অনুযায়ী সহাবস্থান এবং ভরণপোষণের খরচ বহন করার মতো কিছু অধিকার থেকে স্বামীকে অব্যাহতি দিয়ে থাকেন স্ত্রী।
সৌদি আরবের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নতুনত্ব নিয়ে আসা সিনেমাটি নিয়ে প্রযোজক মোহাম্মদ আলহামুদের সাথে কথা বলেছে ভ্যারাইটি ডটকম। তিনি একইসাথে প্রোডাকশন হাউজ 'টেলফাজ ১১' এর হেড অব ডেভেলপমেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রশ্ন: 'দ্য ম্যাচমেকার' সিনেমাটি এতটা ভিন্নধর্মী কীভাবে তৈরি হল?
মোহাম্মদ আলহামুদ: প্রথমত আমরা নতুন একটা একটা জনরা নিয়ে পরীক্ষা করতে চেয়েছিলাম। সৌদি আরবের বেশিরভাগ সিনেমাই এখনো কমেডি ও ড্রামা জনরার। তাই আমরা টেলফাজের পক্ষ থেকে একটি সাইকোলজিকাল থ্রিলার বানাতে চাই। একইসাথে আমরা সিনেমায় সৌদি আরবের বিতর্কিত 'মিসইয়ার' প্রথাকেও তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। তাই আমরা এমন একটা গল্প বানাই যেখানে একটি চরিত্র 'ম্যাচমেকার' এর ভূমিকা পালন করবে। যিনি মরুভূমিতে থাকা একটি গোপন রিসোর্টে নির্দিষ্ট কিছু পুরুষকে আমন্ত্রণ জানান এবং তাদের জীবনে পরিবর্তন এনে দেন। এটাই ছিল আমাদের মূল আইডিয়া।
সিনেমায় সৌদি আরবের নারী ও পুরুষের মধ্যকার রসায়নকে নতুনভাবে চিত্রায়ন করা হয়েছে। প্রথম থেকেই আমরা এ ব্যাপারটি নিয়ে সচেতন ছিলাম। এজন্য একজন পুরুষ পরিচালকের পাশাপাশি রাইটিং বিভাগে একজন নারী লেখককেও রাখা হয়েছিল। পরিচালকের কাছে হয়তো সিনেমাটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার নিরিখে নির্মিত হতে পারে। কিন্তু আমরা সৌদি আরবের নারীদের বর্তমান অবস্থাই চিত্রায়নের চেষ্টা করেছি।
উদাহরণস্বরূপ, সিনেমায় একজন নারীকে অফিস ইন্টার্ন হিসেবে দেখা যায়। সৌদিতে এটি একটি নতুন মাত্রা। বিষয়টি এমন নয় যে, গল্পের প্রয়োজনে আমরা এমনটা করেছি। বরং এটা বর্তমানে সৌদি আরবের প্রতিদিনকার দৃশ্য। এখন আপনি এদেশে কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষকে একসাথে কাজ করতে দেখতে পারবেন। ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে।
প্রশ্ন: কোন ধরনের দর্শকদের কথা চিন্তা করে সিনেমাটি তৈরি করা হয়েছে?
মোহাম্মদ: আমরা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই সিনেমাটি তৈরি করেছি। কেননা এখানে 'ম্যাচমেকার' হিসেবে একজন নারীকে দেখানো হয়েছে। একইসাথে সিনেমায় আধুনিক সৌদি পুরুষকে দেখানো হয়েছে যার স্ত্রী হয়তো তার থেকেও ভালো চাকরি করছেন। আমি মনে করি তরুণ দর্শকরা সিনেমাটির ভিন্নধর্মী জনরার কারণে এটি পছন্দ করবেন। তবে নির্দিষ্ট কোনো দর্শকের কথা চিন্তা করে সিনেমাটি বানানো হয়নি।
প্রশ্ন: সামাজিক দিক থেকে সিনেমাটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
মোহাম্মদ: আপনি খুবই সিরিয়াস একটি বিষয় নিয়ে যদি একটি ভালো হরর সিনেমা তৈরি করেন, তবে সেটি তরুণ থেকে বয়স্ক সকল দর্শকই দেখবেন। আবার যদি একই বিষয় নিয়ে যদি একটি সোশ্যাল ড্রামা তৈরি করেন তবে হয়তো কেউ দেখবে না।
তাই একটি ভালো সাইকোলজিকাল থ্রিলার হিসেবে 'দ্য ম্যাচমেকার' সিনেমাটি তৈরি করতে আমরা খুবই বাস্তব একটি পরিবেশ খুঁজছিলাম। আল-উলা শহরে আমরা এমন একটা পরিবেশ খুঁজে পাই। প্রথমে আমরা সামাজিক দিকটির দিকে নজর না দিয়ে গল্পের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছি। জনরার উপর ভিত্তি করে সিনেমাটি নির্মাণ করতে চেয়েছি যেটি একইসাথে সৌদি সমাজের সাথে প্রাসঙ্গিক।