নিখোঁজ ব্যক্তিকে পাওয়া গেল কুমিরের পেটে
বন্ধুদের সাথে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ এক অস্ট্রেলিয়ান জেলের মৃতদেহের অবশিষ্টাংশ পাওয়া গেছে একটি কুমিরের পেটে। সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, কেভিন ডারমোডি নামের ওই ব্যক্তিকে সর্বশেষ গত শনিবার নর্দার্ন কুইন্সল্যান্ডের কেনেডি বেন্ড-এ দেখা গিয়েছিল। জায়গাটি নোনা পানির কুমিরদের আবাসস্থল হিসেবে সুপরিচিত।
দুই দিন ওই অঞ্চলে খোঁজাখুঁজির পর পুলিশ দুটি বিশালাকার কুমিরকে ইউথানাইজ (ব্যথাহীন মৃত্যু) করা হয় এবং তাদের পেটে মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খুঁজে পাওয়া যায়।
পুলিশের ভাষ্যে, 'খুবই নির্মম মৃত্যু' হয়েছে ডারমোডির। তার মৃতদেহ শনাক্ত করতে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়া হবে।
৬৫ বছর বয়সী কেভিন ডারমোডি একজন অভিজ্ঞ জেলে এবং কেপ ইয়র্কে এই কমিউনিটির একজন গণ্যমান্য সদস্য।
বিবিসি জানিয়েছে, কুমির দুটির একটি ছিল লম্বায় ১৩.৪ ফুট এবং অন্যটি ৯.১ ফুট। যে জায়গায় কেভিনকে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল, সেখান থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে কুমির দুটিকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
দুটি কুমিরের মধ্যে একটি কুমিরের পেটে মানবদেহের অংশ পাওয়া গেলেও, বন্যপ্রাণী কর্মকর্তাদের ধারণা- কেভিনের মৃত্যুতে দুটি কুমিরেরই হাত আছে।
কেভিনের সঙ্গে থাকা অন্যান্য জেলেরা কুমিরের আক্রমণ নিজ চোখে দেখেননি ঠিকই, কিন্তু তারা পানির ঝাপটা এবং সেই সঙ্গে কেভিনকে চিৎকার করতে শুনেছেন বলে জানিয়েছেন।
কেপ ইয়র্ক উইকলি'কে কেভিনের বন্ধু জন পিটি বলেন, "আমি দৌড়ে গিয়েছিলাম কিন্তু তার দেখা পাইনি, শুধু তার ফ্লিপ-ফ্লপ তীরে পড়ে ছিল।"
অস্ট্রেলিয়ার ট্রপিক্যাল নর্থে কুমিরের সংখ্যা বেশি হলেও, কুমিরের আক্রমণের ঘটনা বিরল। ১৯৮৫ সাল থেকে হিসাব রাখতে শুরু করার পর থেকে, কেভিনের মৃত্যু কুইন্সল্যান্ডে মাত্র ১৩তম প্রাণঘাতী আক্রমণের ঘটনা।
এর আগে ২০২১ সালে কুইন্সল্যান্ডের হিনচিনব্রুকে একই রকম ঘটনায় কুমিরের আক্রমণে এক জেলের মৃত্যু হয়। ২০১৬ ও ২০১৭ সালেও প্রাণঘাতী আক্রমণের ঘটনা ঘটে।
১৯৭৪ সালে শিকারের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে কুইন্সল্যান্ডে কুমিরের সংখ্যা ৫০০০ থেকে বেড়ে প্রায় ৩০,০০০ এ দাঁড়িয়েছে।
তবে কুইন্সল্যান্ডের ব্যবস্থাপনা প্রোগ্রামের আওতায়, যেসব স্থানে কুমিররা জনসাধারণের নিরাপত্তায় ঝুঁকি তৈরি করে, সেসব জায়গা থেকে কুমিরদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে; কখনো কখনো ইউথানাইজ করা হয়েছে, যদিও এটি খুবই বিরল।
তবে কুমিরের সংখ্যার দিক থেকে কুইন্সল্যান্ডকে পেছনে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়ার নর্দার্ন টেরিটরি (এনটি)। এ অঞ্চলে প্রায় ১০০,০০০ কুমিরের বাস যা পৃথিবীর মধ্যে সর্বোচ্চ।
নদীর আশেপাশে 'ক্রোকওয়াইজ' হওয়া, অর্থাৎ সতর্কবার্তা মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে নানা ক্যাম্পেইন করা হলেও, ২০০৫ সাল থেকে প্রতি বছর এই টেরিটরিতে গড়ে ১-২টি কুমিরের হাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটতোই। তবে ২০১৮ সাল থেকে এখানে কুমিরের হাতে মৃত্যুর কোনো ঘটনা ঘটেনি।