মার্কেট নির্মাণের আগ পর্যন্ত তাঁবু টাঙিয়ে ব্যবসা করতে চান বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা
নতুন করে ভবন নির্মাণের আগ পর্যন্ত বঙ্গবাজারে আগুনে পুড়ে যাওয়া মার্কেটের জায়গায় ছাড়তে চাচ্ছেন না ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসয়ীরা। তারা বলছেন, সরকার মার্কেট তৈরির কাজ শুরুর আগ পর্যন্ত চৌকি পেতে, তাঁবু টাঙিয়ে অস্থায়ীভাবেই তারা ব্যবসা পরিচালনা করতে চান, আগুন লাগার কারণে যেমটা ঈদের আগে থেকে করে আসছেন তারা।
তবে সেখানে অস্থায়ী দোকানে তারা কতদিন ব্যবসা চালাতে পারবেন, সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
গত ৪ এপ্রিল ভোরে দেশের অন্যতম বড় পাইকারি মার্কেট বঙ্গবাজারে আগুন লাগে। আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে যায় মার্কেটটি। এরপর ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষাপটে পুড়ে যাওয়া মার্কেটের লোহা-লক্কর সরিয়ে সেখানে ইট বিছিয়ে, বালু ছিটিয়ে ১.৭৯ একর জায়গা সমতল করা হয়। ঈদুল ফিতর পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে ব্যবসায়ীদের চৌকি পেতে পণ্য বিক্রির অনুমতি দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন।
শুক্রবার বঙ্গবাজার এলাকার মার্কেটে সাপ্তাহিত বন্ধের দিনেও দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা শ্রমিক এনে কাজ করছেন। চৌকির চারদিকে বাশেঁর খুঁটি গেড়ে দিচ্ছেন। ওপরে মাচার মতো দিচ্ছেন যাতে রোদ ও বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
রওশন আরা গার্মেন্টসের মালিক মোঃ মইন উদ্দিন বলেন, ঈদের ছুটির পর থেকেই এখানে কাপড় বিক্রি করছি। শুনেছি, ঈদুল আযহার আগে এখানে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে না। তাই চৌকির ওপরে বাশেঁর ছাউনি দিচ্ছি, যেন রোদ গায়ে না লাগে। আমরা আগামী ঈদ পর্যন্ত এখানেই ব্যবসা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।"
মইন উদ্দিন জানান, দৈনিক প্রায় এক থেকে দুই হাজার টাকার বেচাবিক্রি হয়।
সারা জীবনের সমস্ত আয় ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, "সরকার যেন আমাদের এখানে দ্রুত মার্কেট করে দেয়। বছরখানেকের মধ্যে মার্কেট না হলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।"
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোঃ রাসেল সাবরিন টিবিএসকে বলেন, ব্যবসায়ীরা চৌকিতে কতদিন ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন সে বিষয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আগামী সপ্তাহে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।
গত মঙ্গলবার (২ মে) ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, "বঙ্গবাজারে ব্যবসায়ীরা চাইলে আমরা নতুন ভবন নির্মাণের দিকে এগিয়ে যাব এবং মার্কেট নির্মাণ কাজ শুরু হলে তা দ্রুত সময়ের মধ্যেই হয়ে যাবে।"
এদিকে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "একটি পূর্ণাঙ্গ মার্কেট যেন নির্মাণ হয়, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে সিটি কর্পোরেশনকে। আমরা এ বিষয়ে একটি বৈঠক করবো সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে। ঈদের পর বন্ধ ছিল, তাই এ বিষয়ে কথা বলা যায় নি। আশা করি আগামী সপ্তাহে এ বিষয় একটি বৈঠক হবে। তখন সব বিষয় উঠে আসবে।"
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩০৩.০৫ কোটি টাকা।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অগ্নিকাণ্ডে কমপ্লেক্সের সাতটি মার্কেটের ৩ হাজার ৮৪৫টি দোকানের মালামাল পুড়ে অন্তত ২৮৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।