শুধু ঢাকাতেই দিনের বেলায় ৬০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং
রাতের চেয়ে বিদ্যুতের চাহিদা তুলনামূলকভাবে কম থাকা সত্ত্বেও দিনের বেলায় শুধু ঢাকাতেই ৬০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হয়েছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, বিগত কয়েকদিনের তথ্যানুযায়ী দেশে প্রায় ২,০০০ মেগাওয়াটেরও বেশি বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।
ফলে সারাদেশের গ্রাহকেরা দিনের বিভিন্ন সময়ে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের শিকার হচ্ছেন।
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি)-এর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'সন্ধ্যার পর চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির অবনতি হবে।'
তিনি বিদ্যুৎ সরবরাহের এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য গ্যাস সংকটকে দায়ী করেন।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'আসলে আমরা কম গ্যাসের সরবরাহ পাচ্ছি, তাই আমরা সারাদেশে অন্তত ২৫টি জেনারেশন ইউনিট বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছি।'
তবে তিনি বলেন, বিপিডিবি যদি গ্যাসের স্বাভাবিক সরবরাহ পায় তাহলে তাদের গ্যাসচালিত প্ল্যান্ট থেকে ছয় হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, 'কিন্তু এখন আমরা চার হাজার ৬৬৭ মেগাওয়াট উৎপাদন করছি এবং গ্যাসের ঘাটতির জন্য প্রায় এক হাজার ৮৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না।'
অন্যদিকে, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কাউসার আমীর আলী জানান, সংস্থাটির আওতাধীন এলাকায় দিনে ৩০৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে।
তিনি ইউএনবিকে বলেন, 'ডেসকো এক হাজার ১১১ মেগাওয়াটের চাহিদার বিপরীতে প্রায় ৮০০ মেগাওয়াট পাচ্ছে।'
ঢাকা শহরের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম এবং পূর্ব অংশে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্ব ডেসকোকে দেওয়া হয়েছে এবং ঢাকা শহরের দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি)।
ডিপিডিসি-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ডিপিডিসি'র আওতাধীন এলাকায় প্রায় ৩৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি রয়েছে, যা সন্ধ্যার পর বাড়তে পারে।
তিনি বলেন, ডিপিডিসি এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের বেশি চাহিদার বিপরীতে এক হাজার ২৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন করছে, তাই ৩৪০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং করতে হচ্ছে।
তবে ভোক্তাদের অভিযোগ, তারা আরও অনেক বেশি লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছেন।
কিছু এলাকায় মানুষ প্রতি ঘণ্টায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের অভিযোগ করেছেন।
রাজধানীর নিকেতন এলাকার বাসিন্দা আবদুস সেলিম বলেন, 'ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যায় এবং আমরা প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিং হতে দেখছি।'
একই অভিজ্ঞতা জানালেন মগবাজার এলাকার নাজিম উদ্দিন।
রোববার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, দেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হতে দুই দিন সময় লাগবে।
তিনি মন্ত্রণালয়ে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, 'বিদ্যুত ও গ্যাস সরবরাহে বর্তমান বিঘ্নের উন্নতি হবে, কারণ দুটি এলএনজি টার্মিনালের মধ্যে একটি দুদিনের মধ্যে সরবরাহ পুনরায় শুরু করবে।'
তিনি বলেন, দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের পর একটি টার্মিনাল নিরাপদ স্থানে এবং অন্যটি নিজস্ব অবস্থানে অবস্থান করছে।
এই স্থগিতাদেশের ফলে গ্যাস সরবরাহে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেয়, যা সারাদেশে বর্তমান লোডশেডিং-এর সূচনা করে।
তিনি বলেন, তবে আমি আশা করি যে দুইদিনের মধ্যে একটি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে, যা ৪০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতি করবে। অন্য এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ পুনরায় শুরু করতে ১০ থেকে ১২ দিন সময় লাগবে।