৬২৫ কোটি টাকার লোকসান নগদের, আশা জিইয়ে রেখেছে ৫১০ কোটির বন্ড
২০১৮ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ৬২৫ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস 'নগদ'। মূলত বিভিন্ন প্রচারমূলক এবং প্রশাসনিক ব্যয় বেশি হওয়ায় লোকসান হয়েছে বলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) জমা দেওয়া প্রসপেক্টাস থেকে জানা গেছে।
আয়ের ৫১ শতাংশ রাজস্ব ভাগাভাগির ভিত্তিতে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সঙ্গে চুক্তির অধীনে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটি ৫১০ কোটি টাকার একটি বন্ড ইস্যু করতে বিএসইসির অনুমোদন পেয়েছে; যা প্রতিষ্ঠানটিকে ঋণ পরিশোধে এবং কয়েক বছরের মধ্যেই ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করবে।
নগদ তার আয়ের ৬০ শতাংশের বেশি 'উদ্যোক্তা কমিশন'-এ ব্যয় করে বলে প্রসপেক্টাসে উল্লেখ করা হয়।
নগদের পাবলিক কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'অন্যান্য স্টার্টআপের মতো নগদও লোকসানের মুখে পড়েছে কারণ এটি মুনাফার চাইতে ব্যবসা সম্প্রসারণেই বেশি মনোযোগ দিয়েছে।
'এসব প্রচেষ্টার সুবাদে নগদের গ্রাহকসংখ্যা সাড়ে ৭ কোটিতে পৌঁছেছে। আমরা আশাবাদী, নগদের মুনাফা করতে বেশি সময় লাগবে না।'
নগদ তাদের প্রসপেক্টাসে বলেছে, ২০২৫ সালের মধ্যে তারা লাভজনক কোম্পানিতে পরিণত হবে।
প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ২০২৪ সালে নগদের আয় বেড়ে দাঁড়াবে ১,১৪৪ কোটিতে, ২০২৫ সালে তা হবে ১,৩২৪ কোটি। ২০২৫ সালে প্রতিসষ্ঠানটির নিট মুনাফা হবে ২৮ কোটি টাকা।
প্রসপেক্টাস থেকে আরও জানা যায়, শুরুতে এমএফএস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানটি কোনো আয় করতে পারেনি, বরং ২.৯৪ কোটি টাকার লোকসান দেয়।
২০২১-২২ অর্থবছরে নগদের আয় ধীরে ধীরে বেড়ে দাঁড়ায় ৫১৭ কোটিতে; সঙ্গে লোকসানও বেড়ে ২৬২ কোটি টাকা হয়।
শুরুর দিকে অন্যান্য এমএফএস কোম্পানিগুলোও লোকসানের মুখ দেখেছিল; সেই পরিপ্রেক্ষিতে আগামী বছরগুলোতে ঘুরে দাঁড়ানোর অনুপ্রেরণা পায় নগদ।
ব্র্যাক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানির অধীনে পরিচালিত নগদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান 'বিকাশ' যেমন ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে টানা চার বছর লোকসান দিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি ২০১৪ সাল থেকে মুনাফা কারতে শুরু করে যা ২০১৮ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
তবে নগদ যখন ব্যবসা শুরু করে, তখন বিকাশ তাদের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন পরিষেবায় ব্যাপক বিনিয়োগ করে। এর ফলে ২০২১ সাল পর্যন্ত তিন বছর লোকসানে ছিল কোম্পানিটি।
২০২২ সালে আবারও মুনাফার ধারায় ফেরে বিকাশ; চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকেও মুনাফার ধারা অব্যাহত থাকে।
এ পর্যন্ত বিকাশের মোট লোকসানের পরিমাণ ১০২ কোটি টাকা।
নগদ কেন বন্ড ইস্যু করছে
ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ঋণ নিয়েছিল নগদ। এখন ৫১০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করে এই ঋণ পরিশোধ করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। বিএসইসি সম্প্রতি নগদের বন্ড ইস্যুর বিষয়ে অনুমতি দিয়েছে। বন্ডের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর।
২০২১-২২ অর্থবছরের আর্থিক বিবরণী অনুসারে, ৬১৭.৬০ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে নগদের। এর মধ্যে বন্ড থেকে ৪০০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হবে। বাকিটা ব্যবহার করা হবে কোম্পানির কার্যকরী মূলধন হিসেবে।
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম টিবিএসকে বলেন, 'প্রথমদিকে, কমিশন নগদকে শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন দিয়েছিল, যেহেতু কোম্পানিটির কোনো সিআইবি (ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো) ছাড়পত্র ছিল না। ছাড়পত্র পাওয়ার পর, কমিশন এখন নগদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সম্মতি দিয়েছে।'
বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের সঙ্গে পরিষেবা চুক্তির মাধ্যমে অস্থায়ী এমএফএস লাইসেন্স নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে নগদ।
তবে এনবিএফআই হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নগদের জন্য 'নগদ ফাইন্যান্স পিএলসি' নামে একটি লাইসেন্স ইস্যু করেছে।
সামিট গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ফরিদ খান এই এনবিএফআই-এর চেয়ারম্যান হবেন। আর নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক থাকবেন কোম্পানিটির পরিচালকের দায়িত্বে।
মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, 'নগদ ফাইন্যান্স পিএলসির সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবসা পরিচালনা করবে নগদ লিমিটেড। কোম্পানিটিকে এনবিএফআইটির সাবসিডিয়ারি করার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।'