কর অব্যাহতি যুক্ত হতে পারে ভর্তুকির হিসাবে
বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে কর অব্যাহতি দেওয়া অর্থের পরিমাণকে সরকারের ভর্তুকির মধ্যে হিসাবভুক্ত করার কথা ভাবছে সরকার। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর সুত্রে জানা গেছে এ তথ্য।
আগামীকালের (১ জুন) বাজেট বক্তৃতায় এ বিষয়টি নিয়ে ঘোষণা দিতে পারেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল।
সরকারের এমন উদ্যোগ যৌক্তিক নয় বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও নীতি বিশ্লেষকরা।
এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের প্রত্যক্ষ কর ব্যয় (যা কর অব্যাহতি হিসেবে হিসাব করা হয়) এর পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার সামান্য বেশি।
অন্যদিকে আগামী অর্থবছরে সরকারের সরাসরি ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি।
সব মিলিয়ে আগামী অর্থবছরে প্রাক্কলিত ভর্তুকির পরিমাণ হতে পারে প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা।
বর্তমানে সরকারের প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের একটি বড় অংশ আসে অফিস কর্মচারীদের বেতন-ভাতার উপর প্রদত্ত কর অব্যাহতি থেকে।
এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬১ শতাংশই ছিল বেতন, ভাতাসহ অন্যান্য খাতের কর ছাড়।
সরকার বেতনের উপর ৫০ শতাংশ কর ছাড় দেয়। এছাড়া যাতায়াত ভাতায় ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত কর ছাড় রয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করে পাওয়া বেতন ভাতাও ট্যাক্স ফ্রি।
আবার বাংলাদেশে জাতিসংঘের বিভিন্ন অফিসে কর্মরত ব্যক্তিদের বেতনও করমুক্ত।
অন্যদিকে সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন, গ্র্যাচুইটিসহ আরো কিছু ভাতা করমুক্ত।
সবমিলিয়ে আলোচ্য অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিলো ৭৭ হাজার কোাটি টাকার কিছু বেশি।
এর বাইরে মাইক্রো ফাইন্যান্স, রেমিট্যান্স, জ্বালানি ও খনিজ, ইকোনমিক জোন ও হাই-টেক পার্কে অবস্থিত শিল্প, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল, আইটি ও সফটওয়্যার, পোল্ট্রি ও মৎস্য খাতের আয়, শেয়ার থেকে ক্যাপিটাল গেইন ইত্যাদি খাতে সরকার ট্যাক্স এক্সেম্পশন বা রিডিসড রেট এ ট্যাক্স আদায় করে থাকে।
এদিকে সরকারের যে সরাসরি ভর্তুকির হিসাব রয়েছে, তা নিয়েও আপত্তি জানিয়ে ওই হিসাব থেকে সেভিংস ইনস্ট্রুমেন্টের সুদসহ আরো কিছু বিষয় বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল মনেটারি ফান্ড-আইএমএফ।
এর মধ্যে সরকার নতুন করে ট্যাক্স এক্সপেনডিচারকে ভর্তুকের মধ্যে হিসাবভুক্ত করার উদ্যোগ নিল।
অর্থনীতিবিদ ও পাবলিক পলিসি অ্যানালিস্ট ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ভর্তুকি এবং কর ছাড়ের আলাদা উদ্দেশ্য রয়েছে। সরকার দেশের সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাকে বাস্তবের চেয়ে বড় কিছু হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য ভর্তুকি হিসেবে কর ছাড় বিবেচনার কথা ভাবতে পারে; কিন্তু প্রস্তাবিত উদ্যোগটি যথাযথ বাজেটের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।"
"ভর্তুকি হলো প্রত্যক্ষ আর্থিক প্রণোদনা; অন্যদিকে কর ছাড় হলো খরচ কমানো বিষয়ক প্রণোদনা। দুটি বিষয় এক নয়," বলেন তিনি।