এপ্রিলে সঞ্চয়পত্রে নীট বিক্রি ৫৮১ কোটি, অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ
গত এপ্রিল মাসে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে নীট ঋণ নিয়েছে ৫৮১ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও সরকারের চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে আগামী দুই মাসে নীট ঋণ প্রয়োজন ২৩,৫৭৯ কোটি টাকা।
সরকারের চলতি অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। সরকার সংশোধিত বাজেটে এর আকার কমিয়ে করা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের (জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত) দশ মাসে সরকার এই খাত থেকে ঋণ নিয়েছে ৬৮ হাজার কোটি টাকা। যদিও এই সময়ে গ্রাহকের বিনিয়োগ (আসল-মুনাফা) বাবদ পরিশোধ করেছে ৭১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। যার অর্থ সরকারের নীট ঋণ নেগেটিভ রয়েছে ৩৫৭৯ কোটি টাকা।
যদিও আগের অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে সরকারের নীট ঋণ ছিল ১,৭৫১৮ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা বলেন, চলতি অর্থবছরের সঞ্চয়পত্রে ঋণের সুদ হার কম, বিনিয়োগে নানা শর্ত ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় গ্রাহকের এই খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ কম ছিল। এছাড়া সরকারও সুদ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এই খাত থেকে ঋণ কমিয়ে দিয়েছে।
'তবে আগামী দুই মাসে সরকারের ঋণের পরিমাণ বাড়তে পারে কারণ অর্থবছরের শেষ সময়ে সরকার বেশি ঋণ নেয়।'
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের দশ মাসের মধ্যে মাত্র চারমাস সরকারের সঞ্চয়পত্রে নীট ঋণ পজেটিভ ছিল। এর মধ্যে অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই-আগস্টে ছিল ৪০১ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে ৩৭ কোটি টাকা এবং এপ্রিলে ৫৮১ কোটি টাকা।
সঞ্চয় ব্যুরোর একজন কর্মকর্তা বলেন, 'সরকারও এই খাত থেকে ঋণের তুলনায় মুনাফা বেশি পরিশোধ করেছে। কারণ সরকারের ব্যাংক ঋণের তুলনায় সঞ্চয়পত্রের ঋণের সুদহার বেশি হওয়ায় সরকারের সুদ ব্যয় বেশি হচ্ছে। যার কারণে ঋণের সুদ ব্যয় কমাতে সরকার সঞ্চয়পত্রে ঋণের লাগাম টানছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরামর্শ অনুসরণ করছে সরকার। আইএমএফের পরামর্শ হলো, সরকারের ঋণের সঞ্চয়পত্র থেকে এক-চতুর্থাংশের বেশি হবে না।'
অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদ প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৪২,৬৭৫ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এটি বাড়িয়ে ৪৫,১০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা আরও কমিয়ে ১৮,০০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ৪৯ শতাংশ কম।
এবারের লক্ষ্যমাত্রা বিগত ৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৯,৬১০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল সরকার। ওই সময় প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ কোটি টাকার সামান্য বেশি।
সাধারণত দেশের পেনশনার সহ মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তরা তাদের জমানো অর্থ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে থাকেন। বর্তমানে ব্যাংকগুলোর আমানতের সর্বোচ্চ সুদহার ৬ শতাংশ। আর সঞ্চয়পত্রের সুদহার মেয়াদভেদে সর্বোচ্চ ১১.৫২ শতাংশ। ফলে এ খাত থেকে সরকার ঋণ নেওয়া কমালে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ টিবিএসকে বলেন, "সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেওয়া কিংবা সঞ্চয়পত্রের সুদ কমানো মোটেই উচিত নয়। কারণ, এই সুদ দেশের মানুষ পায় এবং এই সুদের টাকাও দেশেই থাকে।"