চলতি বছরে বেসরকারি খাতে বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হবে ১.৬২ বিলিয়ন ডলার
চলমান ডলার সংকটের মধ্যেই চলতি ২০২৩ সালে দেশের বেসরকারি খাতকে দীর্ঘমেয়াদী বৈদেশিক ঋণের কিস্তি বাবদ ১.৬২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে দীর্ঘমেয়াদী ঋণের মূল (প্রিন্সিপাল অ্যামাউন্ট) বাবদ শোধ করতে হবে ১.২৭ বিলিয়ন ডলার। সেইসঙ্গে, ৩৫৪ মিলিয়ন ডলারের বেশি পরিশোধ করতে হবে সুদ বাবদ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ২০৪০ সালের মধ্যে সর্বোচ্চ সুদ পরিশোধ করতে হবে চলতি ২০২৩ সালে। ২০০৯ থেকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত ৩১ বছরের হিসাবেও এটি সর্বোচ্চ পরিমাণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বেসরকারি খাতের বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ আগের সময়ের তুলনায় হঠাৎ বেড়ে ১.৭৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। এই বাণিজ্যিক ঋণের বেশিরভাগই পরিশোধ করতে হবে টেলিযোগাযোগ খাতকে। তবে প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, আগামী দশকগুলোতে এই ঋণ পরিষেবা ক্রমান্বয়ে কমে যেতে পারে।
এদিকে, এত বেশি পরিমাণ বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে উল্লেখ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, "এসব ঋণ যখন নেওয়া হয়েছিল, তখন ডলারের দাম ৮৫ টাকার নিচে ছিল। এখন সেটি প্রায় ১০৯-১১০ টাকা। ফলে সুদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের আরও বেশি চাপ নিতে হচ্ছে। সেইসঙ্গে, ডলারের দাম আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে এসব বৈদেশিক ঋণ দ্রুত পরিশোধের একটি প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২২ সালে বেসরকারি খাতের দীর্ঘমেয়াদী ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ছিল ২.৮২ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছর ২০২১ সালের (২.১৮ বিলিয়ন ডলার) চেয়ে ২৯.৬ শতাংশ বেশি।
তবে এটি লক্ষণীয় যে, ২০২২ সময়কালে এ ধরনের নতুন ঋণের পরিমাণ ছিল ২.৮২ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছর ২০২১ (৪.০৫ বিলিয়ন ডলার) সালের তুলনায় ৩০.৩ শতাংশ কম।
ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আরফান আলী টিবিএসকে বলেন, "এমনিতেই এখন আমাদের ফরেক্স লিকুইডিটি খুব বেশি ভালো অবস্থানে নেই। এই পরিমাণ ডলার পরিশোধ করতে গেলে ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ আসবে। এটি আমাদের রিজার্ভের ওপরেও চাপ ফেলবে।"
গত এক বছরে টাকার প্রায় ১৯ শতাংশ অবমূল্যায়নের কারণে এসব ঋণ গ্রাহকদের ডলার কিনতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি খরচ করতে হবে উল্লেখ করে অভিজ্ঞ এই ব্যাংকার বলেন, "গ্রাহকদের এখন বেশি টাকা খরচ করে ডলার কিনতে হবে। এ কারণে ব্যবসায়ীদের ঋণ নিয়ে যতটুকু লাভবান হওয়ার কথা ছিল, সেটি তারা হবেন না।"
২০২২ সালের ডিসেম্বরের শেষে, বেসরকারি খাতের দীর্ঘমেয়াদী বৈদেশিক ঋণ ছিল ৭.৮৯ বিলিয়ন ডলার। এই ঋণের প্রায় ৭৩.৭ শতাংশের জন্য ফ্লোটিং ইন্টারেস্ট রেট, ২৪ শতাংশের জন্য ফিক্সড ইন্টারেস্ট রেট এবং ২.৩ শতাংশের জন্য নো ইন্টারেস্ট রেট ধার্য করা হয়।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হুসেন টিবিএসকে বলেন, "এসব ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে অবশ্যই আমাদের ডলারের ওপর চাপ পড়বে। সাধারণত, ভালো গ্রাহকেরা এই ঋণগুলো নিয়ে থাকেন, তাই তাদের খেলাপি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।"
"তবে ঋণ পরিশোধে খেলাপি হওয়া দেশের জন্য ভালো হবে না। ব্যাংকগুলোর ডলার লিকুইডিটি সিচুয়েশন আগের তুলনায় ভালো হচ্ছে। এখন আমাদের ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্স নেগেটিভ হলেও আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে আমরা একটি ভালো অবস্থানে চলে আসবো," যোগ করেন তিনি।