দেশের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্ধেক বরাদ্দ ৭ জেলায়
বাংলাদেশের এডিপি প্রকল্পে সর্বোচ্চ বরাদ্দপ্রাপ্ত ৭টি জেলাই মোট বরাদ্দের ৫০ ভাগ বরাদ্দ পাচ্ছে, অথচ স্বল্প বরাদ্দপ্রাপ্ত ২৫টি জেলা পাচ্ছে মাত্র ১৩ ভাগ।
ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) একটি গবেষণায় বিষয়টি উঠে আসে।
শনিবার আইপিডি সম্পাদিত 'বাংলাদেশের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দের আঞ্চলিক বিন্যাস' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি একটি ওয়েবিনারের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। আইপিডি'র পক্ষ থেকে গবেষণাটি করেন পরিকল্পনাবিদ রেদওয়ানুর রহমান ও সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান।
গবেষণাটিতে ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন বাজেটের সাধারণ সরকারি সেবা, প্রতিরক্ষা এবং জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষা খাত ব্যতীত বাকি ১২টি খাতের চলমান প্রকল্পের বাজেটসমূহের জেলা ও আঞ্চলিক অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে স্থানিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যাতে এডিপির প্রায় ৭০ ভাগ প্রকল্পকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।
তবে এই গবেষণায় জাতীয় প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে দেশের জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ মেগা প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পদ্মা বহুমুখী সেতু, পদ্মা রেলসেতু ও যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু রেলসেতুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
গবেষণা প্রতিবেদনের মূল উপস্থাপনায় অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বৈষম্য পরিমাপক 'পালমা রেশিও' অনুযায়ী যার মান ৩.৭২, যা এখন ও দেশের মধ্যে উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দের উচ্চ বৈষম্যকেই নির্দেশ করে। ঢাকা জেলা উন্নয়ন বরাদ্দের ২১ ভাগ পাচ্ছে, তবে বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বিভিন্ন বড় প্রকল্প চলমান থাকায় দ্বিতীয় স্থানে আছে কক্সবাজার (শতকরা ৯ ভাগ)। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে আছে চট্টগ্রাম (৬.৮৫ ভাগ) ও নারায়ণগঞ্জ (৩.৮৫ ভাগ)।
বরাদ্দপ্রাপ্তির দিক থেকে সবচেয়ে কম পাচ্ছে মেহেরপুর জেলা (০.৩৬ ভাগ) ও পঞ্চগড় (০.৩৯ ভাগ)। এর উপরেই আছে চুয়াডাঙ্গা (শতকরা ০.৪১), ঠাকুরগাঁও (০.৪৩), ঝালকাঠি (০.৪৫), ঝিনাইদহ (০.৪৮), বরগুনা (০.৪৮) ও জয়পুরহাট (০.৪৮ ভাগ)।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দের আঞ্চলিক বৈষম্য এখনও দৃশ্যমান আছে। বাংলাদেশের সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের জন্য উন্নয়ন বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ ও টেকসই অর্থনৈতিক উদ্যোগ দরকার।
তিনি আরও বলেন, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল (পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট), উত্তর পূর্বাঞ্চল (নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ) এবং মধ্য দক্ষিণাঞ্চল (মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, রাজবাড়ী) এলাকায় উন্নয়ন বাজেটের বরাদ্দ মধ্যাঞ্চল তথা ঢাকা এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল তথা চট্টগ্রাম অঞ্চলের তুলনায় তাৎপর্যপূর্ণভাবে কম। ফলে এসব অঞ্চলের অনেক এলাকাতেই দারিদ্র্যের হারও তুলনামূলকভাবে বেশি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে সমগ্র দেশের সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আঞ্চলিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাজেটের বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।
আঞ্চলিক বিবেচনায় বৃহত্তর ঢাকা অঞ্চল (পুরাতন বৃহৎ জেলা) পাচ্ছে শতকরা ৩২ ভাগ ও চট্টগ্রাম অঞ্চল পাচ্ছে ১৫ ভাগ। বিপরীতে সর্বনিম্ন বরাদ্দ পাচ্ছে বৃহত্তর কুষ্টিয়া (১.৫৩ ভাগ), পার্বত্য অঞ্চল (১.৬০), বৃহত্তর বগুড়া (১.৬৮) ও বৃহত্তর দিনাজপুর (১.৮০ ভাগ)। ফলে দেশের জেলা ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বাজেট বরাদ্দের মধ্যে ব্যাপক ভিন্নতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
তবে দেশের পদ্মা সেতু চালু হবার পাশাপাশি বিভিন্ন অবকাঠামো ও উন্নয়ন উদ্যোগের কারণে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে উন্নয়ন বৈষম্য কমার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আইপিডির উপদেষ্টা অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের সুষম আঞ্চলিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বিশেষায়িত এলাকা তথা পাহাড়ি অঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল, হাওর এলাকা ও চরাঞ্চলের উন্নয়নের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর এলাকার দারিদ্র্যের হার স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও কেন ৭৯ শতাংশ, সেই বিশ্লেষণ করে এই ধরনের এলাকাসমূহের জন্য বিশেষ বাজেট বরাদ্দ ও টেকসই অর্থনৈতিক উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
উন্নয়ন গবেষক রেদওয়ানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে সরকারি -বেসরকারি উদ্যোগে অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে, যা প্রশংসনীয়। কিন্তু এক্ষেত্রেও অধিকাংশ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে হচ্ছে, যা সরকারের উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ নীতিমালার সাথে সাংঘর্ষিক।