'ওশানগেটকে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল', বলছেন 'টাইটানিক' নির্মাতা ক্যামেরন
টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া সাবমার্সিবল 'টাইটান' এর পাঁচ আরোহী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২২ জুন) বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মার্কিন কোস্ট গার্ডের একজন কর্মকর্তা। এবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা জেমস ক্যামেরন সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে জানিয়েছেন, সাবমার্সিবলটি যে এ ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে, এমন একটা তীব্র অনুভূতি তার মধ্যে কাজ করছিল।
টাইটান নামক ওই সাবমার্সিবলের কাঠামোর 'ভয়াবহ ধরনের অন্তর্মুখী সংকোচনের' কারণে পাঁচ আরোহীর মৃত্যু হতে পারে বলে এখন পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে।
ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সঙ্গে 'টাইটানিক' নামক জাহাজটির নাম জড়িয়ে আছে। তবে টাইটানিকের নাম নিলে চলচ্চিত্র নির্মাতা জেমস ক্যামেরনের নামও চলে আসে। কারণ টাইটানিক ট্র্যাজেডির ওপর ভিত্তি করে তিনি নির্মাণ করেছিলেন সর্বকালের সেরা একটি হলিউড চলচ্চিত্র 'টাইটানিক'।
এই সিনেমা নির্মাণের আগে সমুদ্রের তলদেশে ৩৩বার গিয়েছেন জেমস ক্যামেরন। ক্যামেরন বিবিসিকে বলেছেন, রবিবার যখন 'টাইটান' সাবমার্সিবল নিখোঁজ হয়, তখন তিনি একটি জাহাজে ছিলেন এবং সোমবারের আগপর্যন্ত তিনি এই খবরই পাননি।
কিন্তু যখন তিনি জানতে পারলেন যে 'টাইটান' তার সাপোর্ট শিপের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং দিক হারিয়ে ফেলেছে, সাথেসাথেই তিনি সন্দেহ করেছিলেন যে একটা বিপর্যয় ঘটেছে।
"আমি তীব্রভাবে অনুভব করেছিলাম যে কি হতে যাচ্ছে এই সাব এর সাথে। সাব এর ইলেক্ট্রনিকস ও যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি অকেজো হয়ে যাওয়া এবং একই সাথে ট্র্যাকিং ট্রান্সপন্ডারও অকেজো হয়ে যাওয়া থেকে বোঝা যায় যে- এটা আর নেই", বলেন ক্যামেরন।
'অ্যাভাটার' নির্মাতা বলেন, "আমি সাথেসাথেই ডিপ সাবমার্সিবল কমিউনিটির কয়েকজনের সাথে ফোনে কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করি। এক ঘণ্টার মধ্যে কিছু বিষয় জানতে পারি। তারা অবতরণ করছিল। তারা সমুদ্রের ৩৫০০ মিটার নিচে ছিল এবং উদ্দেশ্য ছিল ৩৮০০ মিটার নিচে যাওয়ার।"
"তাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, তারা পথও হারিয়ে ফেলেছে। এ ধরনের উচ্চমাত্রার ঝুঁকিপূর্ণ ইভেন্টে আপনি একসাথে এই দুটি সমস্যায় পড়া মানে ভয়াবহ ব্যাপার। আর এটা শুনেই আমার মনে প্রথম যা সন্দেহ হয়, তা হলো সাবমার্সিবলটি ভেতরের দিকে দুমড়ে মুচড়ে গেছে", বলেন ক্যামেরন।
গেল সপ্তাহে জেমস ক্যামেরন বিবিসিকে বলেছিলেন, "যখন লোকজন ধাক্কার আওয়াজ, অক্সিজেন ফুরিয়ে যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি বলছিল, মনে হচ্ছিল একটা দীর্ঘ-দুঃস্বপ্নময় হেঁয়ালি চলছে। আমি জানতাম সাবমার্সিবলটা শেষবার যেই গভীরতায়, যে অবস্থানে থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে, ওটা সেখানেই আছে। আর পাওয়াও গেছে সেখানেই।"
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার রিমোটলি কন্ট্রোলড আন্ডারওয়াটার ভেইক্যাল মোতায়েনের পর এটা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই খুঁজে পাওয়া গেছে।
ক্যামেরন টাইটানিক ট্র্যাজেডির প্রসঙ্গ টেনে আরও বলেন, "এখন আমরা সমুদ্রের তলদেশে ঠিক একই জায়গায় আরও একটা ধ্বংসাবশেষ পেলাম, যা কিনা ১৯১২ সালে টাইটানিকের মতোই সতর্কবার্তা না মানার ফলে হয়েছে।"
"ওশানগেটকে সতর্ক করা হয়েছিল", বলেন ক্যামেরন।
এই চলচ্চিত্র নির্মাতা বলেন, কোম্পানিতে অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে কাজ করছিল এমন কেউ কেউ চাকরি ছেড়ে দিয়েছিল। যদিও তিনি এর কারণ জানাননি। এমনকি ডিপ সাবমার্জেন্স কমিউনিটির কিছু ব্যক্তি ওশানগেটকে চিঠিও দিয়েছিল এই বলে যে, "আপনারা ভয়াবহ বিপর্যয়ের পথে যাচ্ছেন।" যদিও এই চিঠি লেখকদের মধ্যে ক্যামেরন নিজে ছিলেন কিনা তা বলেননি।
এই ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠানটির অভিযানের বিষয়ে ক্যামেরন ছাড়া আরও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। ২০১৮ সালে সাবমার্সিবল বিশেষজ্ঞরা টাইটান নির্মাণের সময় ওশানগেটের নেওয়া পরীক্ষামূলক পদ্ধতির বিষয়ে 'সমন্বিত উদ্বেগ' প্রকাশ করেছিলেন এবং এটির যে নকশা, তাতে সম্ভাব্য 'বিপর্যয়' এর বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন।
নিউইয়র্ক টাইমস মেরিন টেকনোলজি সোসাইটির স্টকটন রাশকে দেওয়া একটি চিঠি উন্মোচন করেছে। সেই চিঠিতে মেরিন টেকনোলজি সোসাইটি বলেছে, কোম্পানিটির বর্তমান 'পরীক্ষা-নিরীক্ষামূলক' পদক্ষেপগুলো নেতিবাচক ফলাফল বয়ে আনতে পারে (সেটা হতে পারে ছোটখাট দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে বড় বিপর্যয়)'।
যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের একটি নথি থেকেও জানা গেছে, ২০১৮ সালের দিকে ওশানগেটের একজন কর্মী সম্ভাব্য নিরাপত্তা সমস্যার বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন।
নথিতে দেখা গেছে, কোম্পানির মেরিন অপারেশনস-এর পরিচালক ডেভিড লচ্রিজ একটি তদারকি রিপোর্টে প্রশ্ন তুলেছিলেন নিরাপত্তার বিষয়ে। এমটিএস এর চিঠি এবং ডেভিডের প্রশ্ন তোলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ওশানগেটের একজন মুখপাত্র।