ভারত থেকে কাঁচামরিচের আমদানির খবরে দাম কমার আশ্বাস
ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসেই ভোমরা ও বেনাপোল দিয়ে ভারত থেকে ১১টি ট্রাকে করে কাঁচামরিচ দেশে এসেছে। পাঁচ দিনের ছুটি শেষে আমদানি হওয়া কাঁচামরিচ সরবরাহ বাড়াবে এবং দ্রুতই বাজার দাম কমাতে ভূমিকা রাখবে বলে জানা যায়।
কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, গত ২৫ জুন থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত মোট ৯৩ মেট্রিক টন কাঁচামরিচ দেশে প্রবেশ করেছে। যদিও এই সময়ে আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে ৩৬,৮৩০ মেট্রিক টন।
ভোমরা স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম খান টিবিএসকে বলেন, ঈদুল আজহার পাঁচদিনের ছুটি শেষে ভোমরা স্থলবন্দরে শুরু হয়েছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। আমদানির শুরুতে ছয় ট্রাক কাঁচামরিচ বোঝাই ভারতীয় ট্রাক দেশে এসেছে। যার প্রতি ট্রাকে কাঁচামরিচ রয়েছে ৮-১২ টন।
তিনি জানান, এসব কাঁচামরিচ স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি ঢাকাতেও সরবরাহ করা হবে। তবে আমদানি করা মরিচের দামের বিষয়ে কোন কথা বলতে চাননি।
একইভাবে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৫টি ট্রাকে ৩৪ মেট্রিক টন কাঁচামরিচ আমদানি হয়েছে গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
ঈদের আগে হঠাৎ করেই সারাদেশে কাঁচামরিচের দাম বাড়তে শুরু করে। বাজার সামাল দিতে কৃষি মন্ত্রণালয় গত ২৫ জুন মরিচ আমদানির অনুমতি দেওয়া শুরু করে। তবে ঈদের ছুটিতে স্থলবন্দরগুলো বন্ধ থাকায় আমদানিও বন্ধ হয়ে যায়। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা বাজারে চরম অস্থিরতা তৈরি করে।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সোমবার থেকে এই আমদানি আরও বাড়বে।
কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্ল্যান্ট কোয়ারেন্টাইন উইংয়ের তথ্য বলছে, রবিবার পর্যন্ত ১০৪টি আমদানি অনুমতিপত্রের (আইপি) মাধ্যমে ৩৬,৮৩০ মেট্রিক টন কাঁচামরিচ আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দেশে ৯৩ মেট্রিক টন কাঁচামরিচ আমদানি হয়েছে।
উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ের উপ-পরিচালক (আমদানি) মুহাম্মদ লিয়াকত হোসেন খান টিবিএসকে বলেন, 'ছুটি শেষে স্থলবন্দরগুলো দিয়ে আমদানি স্বাভাবিক হলে দ্রুতই বাজারও নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।'
ভোমরা কাস্টমস কার্যালয়ের ডেপুটি কমিশনার নিয়ামুল হাসান টিবিএসকে জানান, 'ঈদের ছুটি শেষে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হয়েছে রোববার থেকে। আমদানি শুরু হওয়ায় এর প্রভাব স্থানীয় বাজারেও পড়বে।'
তিনি বলেন, প্রতি মেট্রিক টন কাঁচামরিচের উপর ৫০০ ডলার করে কাস্টমস ডিউটি নেওয়া হয়।
এদিকে টিবিএসের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানান, ভারত থেকে প্রতি মেট্রিক টন কাঁচামরিচ কেনা হচ্ছে ১৫০ রুপির বেশি দিয়ে। প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ১০৯ টাকা হিসেব ধরলে প্রতি কেজি কাঁচামরিচে কাস্টমস ডিউটি দিতে হয় ৫৪.৫ টাকা।
স্থানীয়ভাবেও বাজারে কাচামরিচের সরবরাহ বাড়ছে। বেশি দাম হওয়ার কারণে কৃষকরা যতটা সম্ভব দ্রুত বাজারে কাঁচামরিচ নিয়ে আসছেন। যদিও অনেকেই ক'দিন ধরে বলছেন, বৃষ্টিতে মরিচের ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছিল।
টিবিএসের বগুড়া প্রতিনিধির পাঠানো তথ্য বলছে, বগুড়ার মহাস্থানগড় হাটে কাঁচামরিচের দাম একদিনের ব্যবধানে ৫০০ টাকা থেকে কমে গতকালই ২৫০ টাকায় নেমে এসেছে। এর প্রধান কারণই ছিল সরবরাহ বেড়ে যাওয়া।
প্রভাব পড়েছে ঢাকার বাজারেও। পাইকারি বাজারে ৪০-৮০ টাকা পর্যন্ত দাম কমে ৩৪০-৩৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যদিও এই প্রভাবটা এখনো খুচরা পর্যায়ে সেভাবে পড়েনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে ৩.২৩ লাখ মেট্রিক টন কাঁচামরিচ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও উৎপাদন হয়েছে ২.৯৮ লাখ মেট্রিক টন। এ বছরও উৎপাদন কমে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। চলতি বছর গ্রীষ্মের শুরুতে অতিরিক্ত তাপমাত্রা এবং ঈদের আগে থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষা দুটোই উৎপাদনের উপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।