বগুড়ার দই, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া-আশ্বিনা পেল জিআই পণ্যের স্বীকৃতি
ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেল বগুড়ার দই। একইসঙ্গে শেরপুর জেলার তুলসীমালা ধান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া ও আশ্বিনা আমও জিআই সনদ পেয়েছে। এ নিয়ে দেশের ১৫টি পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেল।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) পণ্যগুলোকে ২৫ জুন জিআই সনদ প্রদান করেছে।
ডিপিডিটি'র ডেপুটি রেজিস্ট্রার (ট্রেডমার্কস) মোঃ জিল্লুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'বগুড়ার দইসহ মোট চারটি পণ্যের বিপরীতে জিআই সনদ ইস্যু করা হয়েছে।'
ডিপিডিটি সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ববিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল প্রপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশন (ডব্লিউআইপিও)-এর নিয়ম মেনে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিপিডিটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে। ২০১৩ সালে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (নিবন্ধন ও সুরক্ষা) আইন হয়। এরপর ২০১৫ সালে আইনের বিধিমালা তৈরির পর জিআই পণ্যের নিবন্ধন নিতে আহ্বান জানায় ডিপিডিটি।
কোনো পণ্যের জিআই স্বীকৃতির আবেদন এলে তা যাচাইবাছাই করে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। এরপর কারও কোনো আপত্তি থাকলে তা জানানোর জন্য দুই মাস সময় দেওয়া হয়।
এর আগে দেশে স্বীকৃতি পাওয়া জিআই পণ্যগুলো হলো জামদানি, ইলিশ, ক্ষীরশাপাতি আম, মসলিন, বাগদা চিংড়ি, কালিজিরা চাল, বিজয়পুরের সাদা মাটি, রাজশাহীর সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম।
সারদেশে দই তৈরি হলেও 'দইয়ের রাজধানী' হিসেবে পরিচিত বগুড়া। সেখানকার ব্যবসায়ীরা জানান, বগুড়ার শেরপুরের ঘেটু ঘোষের হাতে তৈরি হয়েছিল প্রথম দই। এখন ছোট-বড় মিলে অন্তত ৪০০ কারখানায় দই উৎপাদন করা হয়। প্রতিদিন গড়ে তৈরি হয় প্রায় ৫০ টন। উৎসব কিংবা ঈদে এ চাহিদা থাকে দ্বিগুণেরও বেশি।
বিমানবন্দর-ইপিজেড দাবি ব্যবসায়ীদের
প্রায় আড়াইশ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ দইয়ের জিআই স্বীকৃতিতে উল্লসিত জেলার ব্যবসায়ীরা। তারা এটিকে নতুন সম্ভাবনার আলো হিসেবে দেখছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, বগুড়ায় দৈনিক অন্তত এক কোটি টাকার দই বিক্রি হয়। দেশের ভেতরে তারা সব ধরনের সক্ষমতা অর্জন করেছেন। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে বিদেশে পাঠাতে গেলে তাদের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) ও আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর প্রয়োজন।
বগুড়ার অন্যতম প্রসিদ্ধ দই বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এশিয়া সুইটস-এর নুরুল বাশার চন্দন বলেন, দইয়ে জিআই স্বীকৃতি পাওয়া আমাদের জন্য দারুণ সুযোগ। জিআইস্বীকৃত হওয়ায় দই রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা বহুমুখী সুবিধা পাব। কিন্তু এই দইকে বিশ্ববাজারে নিতে হলে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।
দইয়ে সময়ের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভোক্তার কাছে পৌঁছে দিতে না পারলে দইয়ের স্বাদ ও মান পাওয়া যায় না। তাই দই বিদেশে দ্রুত পাঠাতে হলে প্রয়োজন সরাসরি বগুড়া থেকে বিমানব্যবস্থার।
'আমরা বিশ্বাস করি বিশ্ববাজারে রপ্তানির সম্পূর্ণ সক্ষমতা আমাদের আছে। কিন্তু কেবল বিমানবন্দর, ইপিজেড ব্যবস্থা পেলেই সেই আউটপুট দিতে পারব,' বলেন চন্দন।
বগুড়ার শতবর্ষী প্রতিষ্ঠান আকবরিয়া হোটেল। আকবরিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান হাসান আলী আলাল বলেন, জিআই স্বীকৃতির কারণে বিশ্বে বগুড়ার দইয়ের আলাদা পরিচয় প্রতিষ্ঠিত হলো।
রপ্তানির উদ্যোগ নেবেন জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা খোঁজখবর করেছি — সম্পূর্ণ শীতাতপনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনায় দই দেশের বাইরে পাঠানো সম্ভব। জাহাজে পাঠানো যায়, তবে বিমানে হলে সবচেয়ে ভালো হয়।'
ডিপিডিটি'র ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. জিল্লুর রহমান বলেন, 'আমাদের উদ্দেশ্য হলো জিআইয়ের মাধ্যমে পণ্যটির বাণিজ্যিকীকরণের পথ সুগম করা। পণ্যটি যখন বাইরের দেশে পাঠানো হয়, তখন জিআই স্বীকৃতি পণ্যের মান ও দাম নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে।'
স্বীকৃতি মেলার পরও এখনও অনেক কাজ বাকি আছে উল্লেখ করে মো. জিল্লুর রহমান বলেন, 'আমরা এখন ইউজার রেজিস্ট্রেশন করার প্রক্রিয়ায় যাব। আর একটা কমন লোগো হবে আমাদের। এটি নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলো পাবে।'
দই ব্যবসায়ীদের দাবিগুলো বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসনের চেষ্টা চলছে জানিয়ে বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, 'বিমানবন্দরের বিষয়ে বিভিন্ন কোরামে কথা তোলা হয়। এখন চারলেনের মহাসড়কের কাজ চলছে — এরপর রেলের কাজ হবে। তারপর সকল সমীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক থাকলে সরকার বিমানবন্দর তৈরি করতে পারে। আর ইপিজেড নিয়ে প্রস্তাবনা দেওয়া আছে।'