গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ডের ডলারের ঋণ টাকায় ফেরত দিতে চায় বিটিএমএ
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ডের (জিটিএফ) ডলারে নেয়া ঋণ টাকায় পরিশোধ করতে চায় বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। একইসঙ্গে টেক্সটাইল প্রতিষ্ঠানগুলো জিটিএফ ঋণের নির্দিষ্ট সুদহার বেঁধে দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে দাবি জানিয়েছে।
সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফারাহ মোঃ নাসেরের সঙ্গে বিটিএমএ'র বৈঠক হয়। এসময় তারা ঋণ পরিশোধের বিশেষ সুবিধা, ইডিএফ তহবিলের সীমা ও পরিশোধের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করেন।
টেক্সটাইল, লেদার, জুট, ম্যানুফ্যাকচারিং এবং রপ্তানিমুখী সংস্থাগুলোর জন্য ২০১৬ সালে ২০০ মিলিয়ন ডলারের ফাইন্যান্সিং স্কিমের সাথে জিটিএফ ফান্ড চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক; যেন পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি এবং আনুষঙ্গিক আমদানি করা যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বিটিএমএ কর্মকর্তারা বৈঠকে বলেন টেক্সটাইল মিলগুলো জিটিএফ ফান্ড থেকে ২-৩% সুদে ঋণ পেত কারণ ২ বছর আগে সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট (এসওএফআর) কম ছিল। বর্তমানে এই রেট বেড়ে যাওয়ায় প্রায় ৮% এর বেশি সুদ দিতে হচ্ছে; তাই এ রেটটা ৫% নির্ধারণ করা যেতে পারে।
তারা বলেন, "বর্তমানে জিটিএফ ফান্ড থেকে যে পরিমাণ ঋণ রয়েছে তা টাকায় পরিশোধের অনুমোদন দিলে প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সহায়ক হবে।"
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, "কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জিটিএফ ঋণ কারা পাবে এবং এর পরিশোধ কিভাবে হবে তার স্পষ্ট সার্কুলার রয়েছে। এটা ডলারে ঋণ সুবিধা পায় এবং ডলারেই পরিশোধ করতে হয়। এখানে নতুন করে টাকায় পরিশোধ করার সুযোগ নেই।"
তিনি আরও বলেন, "ব্যবসায়ীরা টার্ম লোন ও ঋণের সুদসহ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত পেমেন্ট স্থগিত চায়। তাদের বলা হয়েছে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের সুবিধা ছিল। এখন নতুন করে সময় বৃদ্ধি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিকল্পনায় নেই।"
এদিকে বিটিএমএ কর্মকর্তারা বৈঠকে বলেছেন, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে তাদের ঋণ সুবিধা ৩০ মিলিয়ন ডলার করা উচিত। একইসঙ্গে কোভিডকালীন সময়ের ন্যায় তাদের ঋণ পরিশোধের সুযোগ ৩৬০ দিন করার দাবি জানিয়েছে বৈঠকে।
এছাড়া বৈঠকে টেক্সটাইল মালিকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে টেক্সটাইল মিলগুলোতে তৈরি সুতা ও কাপড় অবিক্রিত থাকায় তারল্য সংকট রয়েছে। এ সংকট মেটাতে টার্ম লোনসহ অন্যান্য ঋণ ও ঋণের সুদসহ পরিশোধ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত স্থগিত চেয়েছিলেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, বর্তমানে ইডিএফের ঋণ পরিশোধের সময় রয়েছে ১৮০ দিন। একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোর কাছে আবেদন করলে আরও ৯০ দিন বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।
"ব্যাংকগুলো ডলারের সংকট থাকায় ১৮০ দিনের মধ্যেই ঋণের অর্থ ফেরত চাচ্ছে। ব্যাংকগুলো গ্রাহকের আবেদন না নিলে তাহলে কী করার আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। আমরা টেক্সটাইল মালিকদের আশ্বস্ত করেছি ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়ে জানাবো যেন আপনাদের ৯০ দিন সময় বৃদ্ধির বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখে", বলেন তিনি।
এদিকে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট ফজলে শামীম এহসান বলেন, "আমি মনে করি কোভিডের চেয়ে এখনকার সমস্যা আরও জটিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের কোভিডকালে যে সুবিধাগুলো দিয়েছে আমরা প্রায় যথাসময়ে পরিশোধ করে দিয়েছি। এই সংকটে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া সুবিধাগুলো না কমিয়ে আরও বাড়ানো উচিত।"