শরীর নিয়ে খুশি নন, তবু ৯০ বছর বয়সেও বডিবিল্ডিং প্রতিযোগিতা জিতে চলেছেন!
নিজেকে আরও আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করার মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছেন এমন অনেক মার্কিন নাগরিকের মতো জিম আরিংটনও নিজের শরীর নিয়ে খুব একটা খুশি নন। কিন্তু শুধুমাত্র আত্ম-উপলব্ধির জোরে ৯০ বছর বয়সে এসেও একাধিক বডিবিল্ডিং প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়ে চলেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
গত বুধবার গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস-এ প্রকাশিত হয়েছে জিম আরিংটনের সাক্ষাৎকার, সেখানে তিনি বলেছেন কিভাবে তিনি এমন শারীরিক ফিটনেসের অধিকারী হলেন যা তার অর্ধেক বয়সী অনেক লোকের চাইতেও উন্নত। ২০১৫ সালে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস প্রথম তাকে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক বডিবিল্ডার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল।
লস অ্যাঞ্জেলেসের বাসিন্দা আরিংটন সাক্ষাৎকারে আরও ব্যাখ্যা করেন করেন কেন নিজের এই শারীরিক গঠন তার তেমন পছন্দ নয়।
"আমি এইসব চমৎকার ফিটনেসের দিকে দেখি এবং জানতাম যে আমি সব বাকি সবাইকে ছাড়িয়ে যাই তবেই এমন হতে পারবো। আর আমি সেটাই করেছি", বলেন আরিংটন। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ডেটাবেজে ৪০ হাজারেরও বেশি বিশ্বরেকর্ড নথিভুক্ত রয়েছে।
সাত দশকেরও দীর্ঘ সময়ের বডিবিল্ডিং ক্যারিয়ারে আরিংটন নিয়মিত প্রতি সপ্তাহে তিন দিন জিমে যান ভারোত্তলন করতে এবং প্রতিটি সেশন দুই ঘণ্টার। তিনি নিজেই নিজেকে বলেন 'এই পরিশ্রম করতে হবে', কারণ কথায় আছে 'কষ্ট না করলে কেষ্ট মেলে না'।
আরিংটন যেখানে ওয়ার্কআউট করেন, সেখানকার এক ট্রেইনার গিনেসকে বলেন, তারা প্রায় প্রতিদিনই আরিংটনকে দেখতে পান এবং জিম 'তার নিজের ৬০ শতাংশ গ্রাহকের তুলনায় কিংবা এই জিমে আসা বাকি সবার চেয়ে ভালো কাজ করেন।'
আরিংটন এই কঠোর পরিশ্রমের ফলে যে ফিটনেস তৈরি করেছেন, তার ফলেই গতবছর মেন'স হেলথ ম্যাগাজিনের জন্য নগ্ন হয়ে ছবি তোলার জন্য তাকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। এ ঘটনার এক মাস পরে আরিংটনকে নিয়ে হইচই পড়ে যায় কিছু মহলে। গিনেস বলছে, তিনি নেভাডার রেনোতে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব বডিবিল্ডিং অ্যান্ড ফিটনেস প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন এবং মেন'স ওভার সেভেন্টি বিভাগে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন।
ওভার-এইটটি বিভাগেও তিনিই একমাত্র প্রতিযোগী ছিলেন, তাই সেটিও তিনিই জেতেন।
নিয়মিত জিমে গিয়ে ভারোত্তলন চর্চা আরিংটনের সফলতার একটি অংশ; কিন্তু গিনেস বলছে, তিনি রুটিনমাফিক ডায়েটও মেনে চলেন।
অতীতের স্মৃতিচারণ করে আরিংটন বলেন কিভাবে আগে তিনি প্রচুর দুধ এবং গরুর মাংস খেতেন; কারণ এই দুটি খাদ্যে তার অ্যালার্জি ছিল না। আর এগুলো প্রোটিনেরও ভাল উৎস, যা মাংসপেশী মজবুত করতে সাহায্য করে।
কিন্তু খাবারের এই অভ্যাসের ফলে আরিংটনের শরীরে প্রদাহ হতো, যেহেতু তিনি বয়স্ক ছিলেন। তাই তিনি তার ডায়েট আমূল বদলে ফেলেন। আরিংটন জানান, এখন তিনি মূলত মাশরুম, অলিভ অয়েলে তৈরি খাবার এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
আমি বুঝতে পারলাম যে এমনটা করলেই আমি অনুশীলন চালিয়ে যেতে পারব, বলেন আরিংটন।
তিনি গতবছর রেনোতে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার মাধ্যমে আবারও রেকর্ড গড়েছেন। কিন্তু জন্মের পর থেকেই এমন সুগঠিত দেহ ছিল না আরিংটনের। প্রিম্যাচিওরড বেবি হিসেবে জন্মগ্রহণ করা আরিংটনের ওজন ছিল আড়াই কেজি। তিনি জানান, তিনি ছোটবেলা থেকেই অ্যাজমা এবং অন্যান্য অসুস্থতায় ভুগেছেন।
কিন্তু একসময় নিজের দুর্বলতা তার কাছে অতিষ্ঠ লাগে এবং ১৯৪৭ সালের দিকে তিনি ভারোত্তলন অনুশীলন শুরু করেন। তখন তার বয়স ছিল ১৫ বছর। এরপর থেকেই তিনি নিয়মিত বডিবিল্ডিং শো'গুলোতে অংশগ্রহণ করে আসছেন, যার মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা মনিকার বিখ্যাত মাসল বিচও রয়েছে।
কিশোর বয়সে নিজের দুর্বল শরীরের ব্যাপারে আরিংটন বলেন, "আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না, কারণ আমি একজন সুপারহিরো হতে চেয়েছিলাম।"