পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ: ৫৪৯ জনের বিরুদ্ধে ডিএমপির ১১ মামলা
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সব প্রবেশমুখে শনিবার (২৯ জুলাই) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ডাকা অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশের ওপর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির ৫৪৯ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অন্তত ১১টি মামলা দায়ের হয়েছে।
রোববার (৩০ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন থানায় পুলিশ ও ভুক্তভোগীরা বাদী হয়ে পৃথক ১১টি মামলা দায়ের করেন বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার কেএন নিয়োতি রায়।
রাজধানীর কদমতলী, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা পশ্চিম, উত্তরা পূর্ব, বংশাল, বিমানবন্দর ও সূত্রাপুর থানার পুলিশ উপ-পরিদর্শকরা (এসআই) এবং ভুক্তভোগী লোকজন এসব মামলা দায়ের করেন।
দায়েরকৃত এসব পৃথক মামলায় ৪৬৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে; এছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৭০ থেকে ৮০ জনকে। বিএনপির সিনিয়র নেতারা এসব মামলা থেকে বাদ পড়েছেন।
রোববার (৩০ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া ১১টি মামলায় বিএনপির ১৪৯ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, "দায়েরকৃত এসব মামলার বাইরেও আরো কয়েকটি থানায় (দারুস সালাম, ডেমরা ও উত্তরা পশ্চিম থানা) বেশ কয়েকটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।"
শনিবার বিএনপির কর্মসূচির মধ্যে পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদেরকে সশস্ত্র অবস্থান ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ফারুক হোসেন বলেন, পুলিশের কার্যক্রমের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কার্যক্রমে কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
সাভারে বিএনপির দুইশতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা
এদিকে, সাভারের আমিনবাজার এলাকা থেকে ককটেল সাদৃশ্য ৬টি বিস্ফোরক উদ্ধার, আশুলিয়ার নিরিবিলি এলাকায় বাসে অগ্নিসংযোগ-ভাংচুর ও রসায়ন মোড় এলাকায় রিক্সা পোড়ানোর পৃথক ৩টি ঘটনায় বিএনপির অন্তত দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করে সাভার ও আশুলিয়া থানায় পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এরমধ্যে শনিবার (২৯ জুলাই) দুপুরে আমিনবাজার এলাকা থেকে ৬টি ককটেল সাদৃশ্য বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় সাভার মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলায় ঢাকা জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি কফিলউদ্দিন, ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান সালাহউদ্দিন বাবু, ঢাকা জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক খোরশেদ আলমসহ অন্তত ৪০/৪৫ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশের একটি সূত্র।
অপরদিকে, শনিবার বিকেলে আশুলিয়ার নিরিবিলি এলাকায় বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনায় বিএনপির অজ্ঞাতনামা ২৫/৩০ জন নেতাকর্মীকে আসামি করে আশুলিয়া থানায় পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ বাসের মালিক।
এছাড়া, একইদিনে বিকাল সাড়ে ৫টায় আশুলিয়া টঙ্গাবাড়ি রসায়ন মোড় এলাকায় মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় একটি রিক্সা পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে বিএনপির ৩০ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ১০০/১৫০ জনকে আসামী করে পৃথক আরেকটি মামলা দায়ের করেছে আশুলিয়া থানা পুলিশ।
শনিবার (২৯ জুলাই) ঢাকার প্রবেশপথে বিরোধী দল বিএনপির পাঁচ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি শেষ হয় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মধ্য দিয়ে।
মাতুয়াইলে পুলিশ ৬০ রাউন্ড টিয়ারশেল ও ৩৫১ রাউন্ড শিশা এবং রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে মামলায়।
ধোলাইপাড় এলাকায় যেখানে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে লাঠিপেটা করা হয়, সেখানে ১৩৮ রাউন্ড শর্ট কার্তুজ গুলি, ৮ রাউন্ড টিয়ারশেল এবং তিন রাউন্ড বাটন শেল ছোঁড়ে পুলিশ।
অবস্থান কর্মসূচিতে হামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানুল্লাহ আমানসহ দুই শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে বিএনপি।
এছাড়া, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদসহ ১২৪ নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলেও দাবি করে তারা।
এদিকে, শনিবার রাজধানীতে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল সোমবার (৩১ জুলাই) সারাদেশে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।