গরমে কেন ডাবের পানি শুধু তৃষ্ণা না, আরো যে উপকার করে
তৃষ্ণা মেটাতে সাধারণত পানিই পান করা হয়। তবে তীব্র গরমে তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি দৈহিকভাবে আরও নানা উপকারিতা পেতে ডাবের পানি হতে পারে বেশ কার্যকরী।
মূলত কচি ডাবের ভেতরে থাকে বিপুল পরিমাণ পানি; যা ডাবের পানি নামে পরিচিত। এই পানিতে দেহের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ খনিজও থাকে। প্রতি কাপ ডাবের পানি থেকে প্রায় ৪৫ ক্যালরি শক্তি পাওয়া হয়; বিপরীতে ফ্যাটের পরিমাণ নেই বললেই চলে।
১. ইলেক্ট্রোলাইটের চাহিদা পূরণ
প্রতি কাপ ডাবের পানিতে প্রায় ৪০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে। যা সাধারণত পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ কলার একই পরিমাণে বিদ্যমান। দেহে পটাশিয়ামের চাহিদা পূরণ হলে হৃদপিণ্ড ভালো থাকে। একইসাথে রক্তচাপ থাকে নিয়ন্ত্রণে।
কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যার সমাধান ও স্বাস্থ্যকরভাবে পেশী ফাংশনের জন্যও পটাসিয়াম একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ। তবে এক্ষেত্রে পাশাপাশি পর্যাপ্ত সোডিয়ামের উপস্থিতিও প্রয়োজনীয়।
ইলেক্ট্রোলাইট হিসেবে শুধু পটাশিয়াম নয়, বরং ডাবের পানিতে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ফসফেটের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ অল্প পরিমাণে থাকে। পরিশ্রম করলে দেহ থেকে ঘাম ও মূত্র আকারে প্রচুর পরিমাণে ইলেক্ট্রোলাইট বের হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ডাবের পানি হতে পারে বেশ স্বাস্থ্যকর পানীয়।
২. ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ও দীর্ঘায়ু নিশ্চিতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। তেমনই একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হচ্ছে ভিটামিন সি; যা ডাবের পানিতে বিদ্যমান। এক কাপ ডাবের পানি প্রতিদিনের ভিটামিন সি'র চাহিদার ২৭ শতাংশ পূরণ করতে পারে। এই ভিটামিন একইসাথে কোষের ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া থেকে রক্ষা করে।
৩. সার্বিক সুস্বাস্থ্যে সাহায্য
দেহের সার্বিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে ডাবের পানির ভূমিকা ঠিক কতটুকু, সেটি নিয়ে আরও গবেষণা জরুরী। তবে সাধারণভাবে দেখা যায়, ডাবের পানি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
অন্যদিকে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ মেডিকেল রিসার্চ এন্ড হেলথ সাইন্সেস এ প্রকাশিত এক গবেষণাও দেখা যায় যে, ডাবের পানি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়াও তৃষ্ণা মেটাতে পানির পরিবর্তে ডাবের পানি পান করলে সেটা দেহের পানির চাহিদা পূরণের সাথে সাথে সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।
তবে নেই সোডিয়াম
অধিক পরিশ্রমের ফলে দেহ থেকে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম খরচ হয়ে যায়। ডাবের পানিতে পর্যাপ্ত পটাশিয়াম থাকলেও দেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রোলাইট সোডিয়াম থাকে না। ফলে দেহে পানিশূন্যতা তৈরি হলে ডাবের পানি পান করলে অন্য নানা খনিজের চাহিদা পূরণ হলেও সোডিয়ামের চাহিদা পূরণ হয় না।
এ বিষয়ে একাডেমী অফ নিউট্রেশন এন্ড ডায়েটিক্সের মুখপাত্র ইয়াসি আনসারি বলেন, "খেলাধুলার ক্ষেত্রে পানিশূন্যতা রোধে ডাবের পানির পরিবর্তে বরং বাজারে থাকা নানা ইলেক্ট্রোলাইটিক বেভারেজকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। কেননা খেলোয়াড়দের তীব্র পরিশ্রমের কারণে দেহে সোডিয়ামের পরিমাণ কমে যেতে পারে এবং এতে করে মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।"
ইয়াসি আনসারি আরও বলেন, "খেলোয়াড়দের ঘণ্টাখানেক দৌড়ানোর পর দেহের জন্য যে শক্তি ও শর্করার দরকার হয়, সেটা ডাবের পানির তুলনায় স্পোর্টস বেভারেজগুলো বেশি পূরণ করতে পারে। তবে এক ঘণ্টার চেয়ে কম দৌড়ালে তুলনামূলক কম শক্তি খরচ হয়। তখন ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকের পরিবর্তে ডাবের পানি পান করা যেতে পারে যদি না ঘামের মাধ্যমে অনেক বেশি খনিজ দেহ থেকে বের হয়ে যায়।"