খোলা বাজারে অতিরিক্ত দামে ডলার বিক্রি করায় ৭ মানিচেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত
খোলাবাজার অর্থাৎ কার্ব মার্কেটে অতিরিক্ত দামে ডলার বিক্রির কারণে ৭টি মানিচেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এছাড়া, আরও ১০টি প্রতিষ্ঠানকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক টিবিএসকে বলেন, "গত এক সপ্তাহে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশকিছু মানিচেঞ্জারের দাম যাচাই-বাছাইয়ে মার্কেট পর্যবেক্ষণ করে। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, তাদের অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক নির্ধারিত দরের চেয়ে তারা বেশি দরে ডলার বেচাকেনা করছে; তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তাদের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নিয়েছেন।"
তিনি আরও বলেন, "আমাদের পরিদর্শন নিয়মিত থাকবে। যে প্রতিষ্ঠান মার্কটে অস্থিরতা তৈরি করতে অতিরিক্ত দামে ডলার বিক্রি করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
খোলা বাজারের ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা যায়, গত এক মাসের ব্যবধানে খোলাবাজারে প্রতি ডলার ৬ টাকা বেড়ে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকায় ডলার বেচা বিক্রি হচ্ছে। যদিও মানিচেঞ্জারগুলো সর্বোচ্চ ১১২ টাকা ৫০ পয়সায় ডলার বিক্রি করতে পারবে।
লাইসেন্স স্থগিত করা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে– ইয়র্ক মানি এক্সচেঞ্জ, জামান মানি চেঞ্জিং হাউজ, জেনি মানি এক্সচেঞ্জ, স্ট্যান্ডার্ড মানি এক্সচেঞ্জ, মার্সি মানি এক্সচেঞ্জ, জেবি মানি এক্সচেঞ্জ ও বেঙ্গল মানি এক্সচেঞ্জ।
অন্যদিকে, বিভিন্ন অনিয়মে সম্পৃতক্ততার দায়ে আরও ১০টি মানিচেঞ্জারের ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে– নিউ প্রাইম মানি চেঞ্জার, উত্তরা মানি চেঞ্জার, মিসা মানি এক্সচেঞ্জ, যমুনা মানি এক্সচেঞ্জ, পাইওনিয়ার মানি এক্সচেঞ্জ, বুড়িগঙ্গা মানি এক্সচেঞ্জ, স্কাফ মানি চেঞ্জার, হযরত খাজা বাবা মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্র, গ্লোরি মানি এক্সচেঞ্জ এবং মাতৃক মানি চেঞ্জার।
বর্তমান নিয়মে মানিচেঞ্জার অ্যাসোসিয়শনের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈঠকের সিদ্ধান্তের আলোকে ব্যাংকের তুলনায় মানিচেঞ্জারগুলো ডলার বেচেকেনায় সর্বোচ্চ এক টাকা পার্থক্য রাখতে পারবে। বর্তমানে ব্যাংকগুলো ১১১ টাকা ৫০ পয়সায় নগদ ডলার বিক্রি করছে।
এদিকে, বুধবার (৩০ আগস্ট) রাজধানীর দৈনিক বাংলা মোড় ও গুলশানে চারটি মানি এক্সচেঞ্জে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। অভিযানে প্রায় দুই কোটি মার্কিন ও কানাডিয়ান ডলার এবং ৩৮ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় হুন্ডির কারবারে জড়িত একাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।
জানা যায়, বুধবার দৈনিক বাংলা মোড়ে আরএস ভবনের দ্বিতীয় তলায় নিহন মানি এক্সচেঞ্জে অভিযান পরিচালনা করে এনএসআই ও বিএফআইইউ। অভিযানে ১ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার (১ কোটি ৯০ লাখ ৪০ হাজার টাকা), ৩০ হাজার কানাডিয়ান ডলারসহ (২৬ লাখ ৫৫ হাজার টাকা) আরও কিছু বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও টাকা পাওয়া গেছে।
এদিন সকালে গুলশান-১-এর নাভানা টাওয়ারে সাব মানি এক্সচেঞ্জ ও লর্ডস মানি এক্সচেঞ্জ এবং গুলশান দুই-এর ল্যান্ডমার্ক টাওয়ারে মেট্রো মানি এক্সচেঞ্জে অভিযান পরিচালন চালায় এনএসআই ও বিএফআইইউ।
লর্ডস মানি এক্সচেঞ্জে নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে ও বহির্ভূতভাবে ডলার কেনা-বেচা করতে দেখা যায়। পরবর্তীতে নিয়ম মেনে ব্যবসা পরিচালনার জন্য মালিকদের সতর্ক করে দিয়েছেন এনএসআই ও বিএফআইইউয়ের কর্মকর্তারা।
এবিবি-বাফেদা রেট অনুযায়ী, বর্তমানে রেমিট্যান্সের রেট ১০৯ টাকা, এক্সপোর্ট বিল পাচ্ছে ১০৮.৫০ টাকা, ও বিসি সেলিং রেট ১০৯.৫০ টাকা রয়েছে।
মানিচেঞ্জারের সঙ্গে সম্পৃক্ত কয়েকজন জানান, ব্যাংকগুলোর ডলার বেচার দরে একটি বড় ফাঁকি আছে। তারা ১১১ টাকা ৫০ পয়সা বললেও আসলে দর পড়ছে ১১৫ টাকার বেশি। কেননা, ১১১ টাকা ৫০ পয়সার ওপর ব্যাংক ৩ শতাংশ হারে ৩ টাকা ৩৪ পয়সা সার্ভিস চার্জও নিচ্ছে। সার্ভিস চার্জের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট বাবদ কেটে রাখছে আরও ৫২ পয়সা।
তারা আরও জানান, এর বাইরে অনেক ব্যাংক আবার এন্ডোর্সমেন্ট চার্জ নিচ্ছে। সব মিলিয়ে ব্যাংক থেকে নগদ ডলার কিনতে ১১৫ টাকা ৩৬ পয়সা থেকে ১১৬ টাকার বেশি পড়ে যাচ্ছে। এতে করে নগদ ডলার বেচাকেনায় মানিচেঞ্জারে ঝুঁকছেন মানুষ।