সিএমএসএমই খাতের সকল সেবা একক সংস্থার অধীনে হওয়া প্রয়োজন: বিশেষজ্ঞরা
এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (সিএমএসএমই) খাতের নিবন্ধন, অর্থায়ন, ব্যবসা উন্নয়নসহ সব সেবা একক সংস্থার অধীনে হওয়া প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এর পাশাপাশি কুটির, অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য আলাদা এবং মাঝারি শিল্পের জন্য আলাদা নীতিমালা দরকার রয়েছে বলেও মনে করেন তারা।
রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পর্যটন ভবনে এসএমই ফাউন্ডেশন এবং আইএলও বাংলাদেশ-এর উদ্যোগে যৌথভাবে 'ন্যাশনাল পলিসি ডায়লগ অন প্রায়োরিটিস ফর এসএমই ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ' অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইএলও বাংলাদেশের এসএমই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ গুঞ্জন ডালাকোটি এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজিম হাসান সাত্তার।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, এশিয়ার প্রায় সব দেশে সিএমএসএমই খাতের উন্নয়নে একক সংস্থা থাকলেও বাংলাদেশে ভিন্ন সংস্থা থাকায় সমন্বয়হীনতার কারণে প্রয়োজনীয় সেবা পান না উদ্যোক্তারা। এজন্য সিএমএসএমই প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন, অনুমোদন কর প্রদান একই প্রতিষ্ঠান থেকে হওয়া প্রয়োজন।
সেইসঙ্গে, সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের ব্যবসা উন্নয়ন সেবা, অর্থায়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তর, বাজারজাতকরণসহ সব সেবা নিশ্চিত করতে ওয়ান স্টপ এসএমই হেল্পডেস্ক গঠন করা দরকার। রপ্তানি সম্ভাবনাময় এসএমই ক্লাস্টারসমূহে মান নিয়ন্ত্রণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন সেবা প্রদানে কমন ফ্যাসিলিট সেন্টার এবং আলাদা সিএমএসএমই রপ্তানি উন্নয়ন সংস্থা গঠনেরও পরামর্শ দেওয়া হয় সেমিনারে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, "ব্যাংকগুলো বড় বড় উদ্যেক্তাদের ঋণ দেওয়ার বিষয় উৎসাহী। মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যেক্তাদের কথা তেমন চিন্তা করছে না। তারা দেখে শুধু টাকাটা কীভাবে রিটার্ন পাবে। অথচ টাকা কিন্তু বড়রা ফেরত দেয় না। তারা টাকা খেয়ে ফেলে।"
তিনি বলেন, এসএমই উদ্যেক্তারা যাতে সহজে ঋণ পায়, সহজভাবে যাতে তাদের অর্থায়নটা পায় সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, ব্যাংকের পরিচালক হাতে গোনা, উদ্যোক্তারা হাতে গোনা কয়েকজন। তাদের বাইরে নতুন কোনো লোক তৈরি হচ্ছে না।
"আমরা উন্নয়ন অনেক করেছি। রাস্তা-ঘাট, এলিভেটের এক্সেপ্রেসওয়ে করেছি। কিন্তু এইখাতে আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন হওয়া দরকার। যেই অর্থ বড় উদ্যোক্তাদের একজনকে ঋণ হিসেবে দিচ্ছি। সেই টাকা যদি ১০ জন এসএমই উদ্যোক্তাকে দেই, তাহলে সেটা আরও বেশি কাজে দেবে," যোগ করেন তিনি।
২০২৬ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে স্নাতক, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে এসএমই খাতের গুরুত্বের ওপর জোর দেন মন্ত্রী।
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে ৯০ শতাংশের বেশি ব্যবসা এসএমই ধরনের। দেশের জিডিপিতে এই খাতের অবদান ২৫ শতাংশেরও বেশি।
এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, "একজন নারী উদ্যোক্তা যখন ব্যাংকে ঋণ নিতে যায়, তখন তার গ্রান্টার কে হবেন- তার স্বামী না কি তার বাবা- সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। কেন এ প্রশ্ন করা হবে? এটা যদি হয় তাহলে কীভাবে উন্নতি করবো আমরা?"
"ক্ষুদ্র প্রান্তিক উদ্যেক্তারা ঋণ পাচ্ছেন না। এখানে আরও জোরালোভাবে কাজ করতে হবে," যোগ করেন তিনি।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন মো. মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের শ্রম সচিব মো. এহসান ই এলাহী।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর তুমো পাউটিয়ানেন এবং এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মফিজুর রহমান।