কিম জং উনের ব্যক্তিগত, বুলেটপ্রুফ ট্রেন, যেন এক চলন্ত দুর্গ!
রাশিয়া, চীন আর উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত যেখানে মিলেছে, সোমবার সেখানে দেখা মেলে সবুজরঙা এক ট্রেনের। সবুজের মাঝে হলদে রেখা টানা সাঁজোয়া ট্রেনটির রঙ বলে দেয়, এটি চালিত হয় একজনমাত্র যাত্রীকে ঘিরে- উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন।
এমনিতে কিম জং উন বিদেশ সফরে সচরাচর যান না; গেলেও আকাশপথের চেয়ে রেল বেছে নেন- ঠিক যেমনটি এর আগে তার বাবা এবং দাদা করতেন।
এবারের সফরে কিম জং উনের গন্তব্যস্থল রাশিয়া। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কিম জং উনের বিস্তৃত পরিসরে আলোচনার আশা রয়েছে।
এর মধ্য দিয়ে চার বছরেরও বেশি সময় পর উত্তর কোরিয়ার বাইরে ভ্রমণ করছেন কিম।
বুলেটপ্রুফ: যেন ধীর গতির সুরক্ষিত দুর্গ
কিম জং উনের ব্যক্তিগত ট্রেনটির পরিসর এককথায় ব্যাপক।
২০০৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার চোসুন মিডিয়া আউটলেট কিম জং উনের পিতা কিম জং ইলের ব্যবহৃত ট্রেনের বিবরণ প্রকাশ করে। তখন অনুমান করা হয়, ট্রেনটির ইঞ্জিন প্রায় ৯০টি গাড়ি টেনে নিতে পারে। তবে সাম্প্রতিক অনুমান বলছে, এ সংখ্যা ২১- এ নেমে এসেছে।
একাধিক প্রতিবেদনে এটিও বলা হয়েছে যে, কিমের প্রধান ট্রেনের সাথে আরও দুটি ট্রেন যাতায়াত করে- একটি ট্রেন সামনের রেলট্র্যাক পরীক্ষা করে দেখে, অন্যটি তার সঙ্গে সফরকারী নিরাপত্তা কর্মীদের বহন করে।
ট্রেনটিতে বেডরুম এবং কনফারেন্স রুম রয়েছে যা সরকারী কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। এখন পর্যন্ত ট্রেনের অভ্যন্তরীণ কিছু ছবি প্রকাশ পেয়েছে, তবে ২০১৮ সালে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে যে কিম জং উন গোলাপী কাউচে ঘেরা ট্রেনের একটি কামরায় বসে শীর্ষ চীনা কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করছেন।
বুলেটপ্রুফ পার্শ্বের ভারে ট্রেনটির গতি অধিকাংশ আধুনিক ট্রেনের তুলনায় খুবই ধীর। অনুমান করা হয় যে, এটি উত্তর কোরিয়ার রেলট্র্যাকে ঘণ্টায় প্রায় ২৮ মাইল গতিতে চলে তবে চীনা রেল নেটওয়ার্কে কার্যক্রমের সময় ট্রেনটি গতি বৃদ্ধি করতে পারে।
একই ট্রেনে পুরো পরিবার
উত্তর কোরিয়ার কিম পরিবারের ট্রেন ভ্রমণের প্রতি অনুরাগ শুরু হয়েছিল দেশটির প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সাংয়ের হাত ধরে- যাকে সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্ট্যালিন একটি রেলগাড়ি উপহার দিয়েছিলেন।
তার পুত্র কিম জং ইলের বিমানভীতি ছিল, তাই তিনি ট্রেন ভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন।
২০১০ সালে তার সাবেক দেহরক্ষী দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যমকে জানান, উত্তর কোরীয় নেতার ভয়- বিমান ভ্রমণে শত্রুদের দ্বারা তার গুলিবিদ্ধ হওয়ার আশংকা রয়েছে। পরের বছরই কিম হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন- এবং উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, মৃত্যুর সময় তিনি একটি ট্রেনে ছিলেন।
দেশটির বর্তমান সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উনও পারিবারিক ঐতিহ্য বজায় রেখে চলেছেন।
২০১৯ সালে তিনি যুক্তরাষ্টের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে দেখা করতে চীন হয়ে প্রায় ৪,৫০০ কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করে সাঁজোয়া ট্রেনে ভিয়েতনাম পৌঁছান। পুরো যাত্রায় সময় লেগেছিল আড়াই দিনের মতো।
আবার একই পথে
মার্কিন কর্মকর্তারা আগেই জানিয়েছিলেন যে কিম জং উনের রাশিয়া সফর আসন্ন। তারা জানান রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে অস্ত্র বিষয়ক আলোচনা সক্রিয়ভাবে এগোচ্ছে এবং তাদের ভাষ্যমতে, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে অস্ত্র দেওয়ার সম্ভাব্যতা নিয়ে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হতে পারে।
ইতিমধ্যে জানা গেছে, পুতিনের সাথে দেখা করতে কিম জং উন রাশিয়ায় পৌঁছেছেন। রবিবারই কিম জং উন ব্যক্তিগত ট্রেনে রাশিয়ার উদ্দেশে পিয়ংইয়ং ত্যাগ করেন। এ সফরে কিম জং উনের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং দেশটির সামরিক কর্মকর্তারা রয়েছেন। কিমের আগমনের সংবাদে রাশিয়ার পূর্বে অবস্থিত শহর ভ্লাদিভোস্টকের রেল স্টেশনে বিপুল নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এর আগে কিম আর পুতিনের মাত্র একবারই মুখোমুখি সাক্ষাৎ ঘটেছে- তাও চার বছর আগে রাশিয়ার এই শহরেই। বলাইবাহুল্য, সেবারও কিম জং উন তার ব্যক্তিগত বুলেটপ্রুফ ট্রেনেই এসেছিলেন।