‘আমার নিজের গাড়ি নেই, বিআরটিসির বাস এক্সপ্রেসওয়ে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে’
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে বিআরটিসি বাস চালুর প্রথম দিনেই যাত্রীদের ব্যাপক সাড়া মিলেছে। প্রায় প্রতিটি বাসে যাত্রীদের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে।
নিয়মিত যাত্রীদের পাশাপাশি অনেক যাত্রী এক্সপ্রেসওয়ে দেখার জন্য বাসে করে ঘুরতেও বের হয়েছেন।
খেজুরবাগান থেকে জসীমউদ্দীন এবং জসীমউদ্দীন থেকে আবার খেজুরবাগান ফিরে এসে বাসের এক কন্ট্রাক্টর দেলোয়ার হোসেন সিকদার জানান, "আসা-যাওয়া মিলিয়ে উভয় পাশেই যাত্রীদের প্রচুর ভিড় হচ্ছে। যাত্রীরা দাঁড়িয়েও যাচ্ছে।"
কোন সমস্যা হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে তিনি জানান, "কোন সমস্যা হচ্ছে না। যাত্রীরা লাইন ধরে বাসে উঠছে। আবার গন্তব্য আসলে নিজেদের মতো করে নেমে যাচ্ছে। যেহেতু টিকিট কেটে বাসে উঠছে, তাই ভাড়া নিয়েও কোন ঝামেলা হচ্ছে না।"
সরেজমিনে বিআরটিসি বাসে ভ্রমণ করে তার কথার সত্যতা পাওয়া যায়।
বর্তমানে প্রতিদিন সকাল সাতটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত প্রতি ১৫ মিনিট পরপর খেজুরবাগান ও উত্তরার জসীমউদ্দীন থেকে বাস ছাড়বে। প্রাথমিক পর্যায়ে আটটি বাস এই রুটে চলবে।
বাসগুলোর ভাড়াও রাখা হয়েছে সীমিত। সরকার নির্ধারিত স্বাভাবিক ভাড়া অনুযায়ী ২ টাকা ৪৫ পয়সা করে ভাড়া নিচ্ছে বিআরটিসি'র এই নতুন সার্ভিস।
খেজুর বাগান থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারের ভাড়া ধরা হয়েছে ৩৫ টাকা এবং উত্তরার জসীমউদ্দীন পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটারের ভাড়া ধরা হয়েছে ৪০ টাকা।
যাত্রীরাও বিআরটিসির এই সার্ভিস নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।
এই পথে নিয়মিত যাত্রী নিশাত অনান রিতু। এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, "এই সার্ভিসটি চালু হওয়াতে খুবই ভালো লাগছে। এখন কম সময়ে গন্তব্যে ফিরতে পারবো। এছাড়া ভাড়াও সাশ্রয় হবে।"
"উত্তরা থেকে সংসদ ভবনের উল্টো পাশে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটে আসতে দেড় ঘণ্টার উপরে লাগতো। মেট্রোরেল ও রিক্সায় আসতে প্রায় দেড়শ টাকার উপরে খরচ হতো। কিন্তু সেই খরচ এখন ৪০ টাকায় নেমে গেছে।"
সুমাইয়া সিঁথি নামের আরেক যাত্রী বলেন, "আমরা যারা উত্তরা থেকে নিয়মিত ঢাকায় আসি তাদের জন্য সার্ভিসটি অবশ্যই একটা আশীর্বাদ।"
"তবে আমাদের দাবি থাকবে বাসের সংখ্যা আরেকটু বাড়ানো হোক এবং অতিরিক্ত যাত্রী যাতে না তোলা হয়। এতে নারীরাও স্বাচ্ছন্দ্যে এই পরিষেবা ব্যবহার করতে পারবে", যোগ করেন তিনি।
আরেক যাত্রী নিলয় বলেন, "এটি একটি চমৎকার সার্ভিস। এটা যদি বিআরটিসি ধরে রাখতে পারে, খুবই ভালো হবে। এই পথে প্রচুর যাত্রী।"
"তবে খেজুর বাগানের পাশাপাশি বিজয় সরণিতেও একটি কাউন্টার তাদের রাখা উচিত। তাহলে তার আশেপাশের যাত্রীরা ওই কাউন্টার থেকে উঠতে পারবে। আবার তখন শুধু খেজুর বাগানে অনেকক্ষণ বাস থামিয়ে রাখার দরকার হবে না", যোগ করেন তিনি।
আরেক যাত্রী মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, "এই পথে আমি প্রতিদিন যাই। ঢাকা থেকে উত্তরা পর্যন্ত যেতে কমপক্ষে এক ঘণ্টা লাগে। কিন্তু আজ মাত্র ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে চলে এসেছি। এটা সত্যিই আনন্দের এবং বিশাল ব্যাপার। এতে করে এই পথের মানুষের প্রোডাক্টিভিটিও (কর্মক্ষমতা) বাড়বে বলে আমি মনে করি।"
এদিকে নিয়মিত যাত্রীদের পাশাপাশি অনেক যাত্রী ঘোরার উদ্দেশ্যে বাসে উঠেছিলেন। তারা প্রথমবারের মতো এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
ষাটোর্ধ্ব, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মো. সরোয়ার হোসেন তাদের মধ্যে একজন।
তিনি বলেন, "আমি ইন্দিরা রোড থাকি। নিজের গাড়ি না থাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দেখা হয়নি। আজ জানলাম এখানে বিআরটিসি বাস চালু হবে। এজন্য সকাল সকাল চলে এসেছি এই বাসে করে দেখার জন্য।"
"এক্সপ্রেসওয়েটি দেখতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। বিআরটিসির সার্ভিসটাও চমৎকার ছিল। মনে হলো এই আমরা উপরে উঠলাম আবার এখনই বিমানবন্দরে নেমে যাচ্ছি।"
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ফার্মগেট-বিমানবন্দর রুটে আজ বাসসেবার উদ্বোধন করেছে।
প্রাথমিকভাবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে তিনটা ডিপো থেকে ৮টি বাস চলবে। তবে এগুলো একটি ডিপো থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
আপাতত এক্সপ্রেসওয়ের দুই প্রান্ত থেকে ওঠানামা করতে পারবেন যাত্রীরা। উত্তরার জসীমউদ্দীন, বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন ও কাওলা থেকে দক্ষিণমুখী যাত্রীদের বাসে তুলবে বিআরটিসি। এরপরে এক টানেই এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে নেমে যাবে ফার্মগেট।