রাসেল ব্র্যান্ডকে 'সাসপেন্ড' করলো ইউটিউব, বিজ্ঞাপন থেকে আয় বন্ধ
ব্রিটিশ কমেডিয়ান ও অভিনেতা রাসেল ব্র্যান্ডকে ইউটিউব থেকে 'সাসপেন্ড' করা হয়েছে। ইউটিউব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের প্ল্যাটফর্মের 'ক্রিয়েটর রেসপনসিবিলিটি পলিসি' লঙ্ঘন করায় এই অভিনেতার একাধিক ইউটিউব চ্যানেলের বিজ্ঞাপন থেকে আয় করার সুযোগ বাতিল করা হয়েছে। খবর বিবিসির।
সম্প্রতি রাসেল ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। ইউটিউব জানিয়েছে, তারা তাদের প্ল্যাটফর্মে ব্যবহারকারীদের 'সুরক্ষার জন্য' এমন পদক্ষেপ নিয়েছে।
অন্যদিকে বিবিসি জানিয়েছে, রাসেল ব্র্যান্ড অংশগ্রহণ করেছেন এমন কিছু প্রোগ্রাম তারা তাদের স্ট্রিমিং সার্ভিস থেকে সরিয়ে নিয়েছে।
রাসেল ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধে ২০০৬ থেকে ২০১৩ সালের সময়কালে ধর্ষণ এবং যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। যদিও অভিনেতা সেসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, সম্পর্কগুলো সবসময় দুই পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতেই হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, তারা আইপ্লেয়ার এবং বিবিসি সাউন্ডস থেকে কিছু কন্টেন্ট সরিয়ে নিয়েছে যেগুলো এখন 'দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়'।
এর আগে মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ইউটিউবের এক মুখপাত্র বলেন, "ইউটিউবের বাইরে একজন ক্রিয়েটরের আচরণ যদি ব্যবহারকারীদের, কর্মীদের কিংবা ইকোসিস্টেমের ক্ষতির কারণ হয়, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য।"
সাবেক টিভি ও রেডিও ব্যক্তিত্ব রাসেল ব্র্যান্ড সাম্প্রতিক সময়ে নতুন করে নিজের অবস্থান দাঁড় করিয়েছেন। নিজের চ্যানেলের ৬.৬ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবারের উদ্দেশ্যে নিয়মিত ইউটিউবে ভিডিও পোস্ট করতেন তিনি। আধ্যাত্মিকতা, প্রথাবিরোধী ধারণা এবং সম্প্রতি ইউএফও নিয়ে ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি। এছাড়াও, তিনি ইনস্টাগ্রাম, এক্স (প্রাক্তন টুইটার) এবং রাম্বলেও পোস্ট করে থাকেন।
ইউটিউব কর্তৃপক্ষ বিবিসিকে নিশ্চিত করেছে যে, রাসেল ব্র্যান্ডের মালিকানাধীন বা তার পরিচালিত সকল ইউটিউব চ্যানেলেরই বিজ্ঞাপন থেকে আয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
৪৮ বছর বয়সী এই অভিনেতার প্রধান ইউটিউব পেজের পাশাপাশি 'অ্যাওয়াকেনিং উইথ রাসেল', 'স্টে ফ্রি উইথ রাসেল' এবং 'ফুটবল ইজ নাইস'-এর মতো চ্যানেলগুলোও এতদিন সক্রিয় ছিল এবং এসব চ্যানেলে প্রায় ৫০০,০০০ সাবস্ক্রাইবার রয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়া অ্যানালাইসিস এজেন্সি সিওআরকিউ'র প্রধান নির্বাহী এবং লেখক সারা ম্যাককরকিউডেল জানান, রাসেল ব্র্যান্ড তার ইউটিউব চ্যানেলগুলোতে প্রতি ভিডিও থেকে বছরে প্রায় ২০০০ থেকে ৪০০০ পাউন্ড আয় করেন।
সারা বিবিসি নিউজকে বলেন, "তিনি হয়তো অন্য যেকোনো প্ল্যাটফর্মের চাইতে ইউটিউব থেকে সবচেয়ে বেশি আয় করছেন।"
তবে রাম্বল-এ এখনো অভিনেতার কন্টেন্টগুলোতে বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে, "তাই তার অর্থ উপার্জনের পথ একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি", বলেন সারা।
কোম্পানিস হাউজ জানায়, রাসেলের কোম্পানি পাবলো দিয়াবলো'স লেজিটিমেট বিজনেস ফার্ম লিমিটেডের নেট সম্পদের পরিমাণ ২০২০ সালে ছিল ২ মিলিয়ন পাউন্ড, কিন্তু ২০২১ সালে তা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ৪.১ মিলিয়ন পাউন্ডে দাঁড়িয়েছে।
তবে সারা মনে করেন, "তার বিরুদ্ধে ইউটিউবের এই পদক্ষেপের কিছুটা প্রভাব পড়বেই, কিন্তু তার দর্শকেরা এখনো সেখানে আছেন। তারা তার চ্যানেলের প্রতি খুবই আগ্রহী এবং তার কন্টেন্ট দেখতে চায়। তাই তারা তাকে অনুসরণ করেই যাবে।"
এছাড়াও, সারা ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, অদূর ভবিষ্যতে হয়তো রাসেল ব্র্যান্ড নিজেই একটা 'স্বাধীন, সাবস্ক্রিপশন-ভিত্তিক চ্যানেল' খুলে বসবেন, যেখানে তার ভক্তরা অর্থের বিনিময়ে তার ভিডিও দেখতে পারবেন।
ইউটিউবাররা কিভাবে আয় করেন?
ইউটিউবে টাকা আয়ের বেশকিছু উপায় রয়েছে, তবে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয়ই তার মধ্যে অন্যতম। যথেষ্ট পরিমাণ ভিউয়ার পাওয়ার পর ইউটিউবাররা তাদের ভিডিও শুরুর আগে এবং ভিডিওর মাঝে বিজ্ঞাপন দেখাতে পারেন এবং এর মাধ্যমে টাকা আয় করেন।
অর্ধমিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার রয়েছে এমন একজন ইউটিউবার সম্প্রতি বিবিসিকে দেখিয়েছেন যে তারা ১.৫ মিলিয়ন ভিউসম্পন্ন একটি ভিডিও থেকে প্রায় ১০,০০০ পাউন্ড আয় করেছেন। যদিও ভিডিও থেকে আয়ের পরিমাণ এর চেয়ে অনেক কম বা অনেক বেশিও হতে পারে।
আবার চ্যানেল মেম্বারশিপ থেকেও আয় করা যায়, যেখানে মানুষ আপনার কন্টেন্ট বেশি বেশি দেখার জন্য সাবস্ক্রাইব করবে। আবার সুপার চ্যাট ও সুপার থ্যাংকস-এর মাধ্যমে দর্শক তাদের বার্তা ঐ ক্রিয়েটরের কাছে আরও দৃশ্যমান করে তুলতে পারে।
তবে ইউটিউবারদের অর্থ উপার্জনের একটি বড় উপায় হলো স্পন্সরশিপ, যা এই কমিউনিটিতে 'স্পন' নামে পরিচিত। রাসেল ব্র্যান্ডের সাম্প্রতিক কয়েকটি ভিডিও বাদে বাকি সবগুলোতেই কোনো না কোনো স্পন্সরশিপ দেখা গিয়েছে। স্কিনকেয়ার প্রতিষ্ঠান, ফুড সাপ্লিমেন্ট পাউডার থেকে শুরু করে কফির বিকল্প পণ্যের ব্র্যান্ডের স্পন্সরশিপ থাকতোই। আর ভিডিওতে এই স্পন্সরশিপ দেখানোর জন্য কোম্পানিগুলো ক্রিয়েটরদের প্রচুর টাকা দিয়ে থাকে।
তদন্ত ও প্রতিক্রিয়া
সম্প্রতি সানডে টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০৬ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নানা সময়ে মোট চারজন নারীকে ধর্ষণ কিংবা যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে রাসেল ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধে। এরমধ্যে একজন নারী দাবি করেছেন, তার বয়স যখন ১৬ বছর তখন ব্র্যান্ডের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল এবং তাদের সেই সম্পর্কের মেয়াদ ছিল তিন মাস। তখন তিনি রাসেলের হাতে মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) মেট্রোপলিটন পুলিশ জানায়, তারা রাসেলের বিরুদ্ধে ২০০৩ সালে যৌন হয়রানির বিষয়ে রিপোর্ট পেয়েছে। এরপরে মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) আরও দুই নারীর কাছে থেকে অভিযোগ পাওয়ার কথা জানায় টাইমস। এদের মধ্যে একজন অভিযোগ করেছেন যে, তিনি রাসেল ব্র্যান্ডের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে না চাইলে, অভিনেতা তাকে হুমকি দেন এবং গালিগালাজ করেন।
যদিও ব্র্যান্ড এক ইউটিউব ভিডিওতে ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, তিনি একটা পরিকল্পিত আক্রমণের শিকার হচ্ছেন।