আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে না ইইউ
'বাজেট স্বল্পতা'র কারণে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তাদের পূর্ণাঙ্গ নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) তিনি গণমাধ্যমকে জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেট স্বল্পতার কারণে ইইউ তাদের পূর্ণাঙ্গ টিম না পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
যদিও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল না পাঠানোর কারণ হিসেবে বাংলাদেশে নির্বাচনের পরিবেশ পর্যবেক্ষণের জন্য অনুকূল না হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেলিগেশনের পাঠানো একটি ইমেইলের বরাতে নির্বাচন কমিশন সচিব জানান, বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সাক্ষাত ফলপ্রসূ হওয়ায় তারা ইসিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন এবং সিইসি'র সঙ্গে তাদের যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন।
এছাড়াও ইইউ-এর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান (হাই রিপ্রেজেনটেটিভ) জোসেপ বোরেলের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের সময় প্রয়োজনীয় শর্তগুলো পূরণ করা হবে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
চিঠিটির বিষয়ে একাধিক সূত্র গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে।
তবুও বর্তমানে এই নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে থাকার ব্যাপারে ইইউ অন্যান্য বিকল্প খতিয়ে দেখছে বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়।
চলতি বছরের ৯ জুলাই, জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ছয় সদস্যের একটি প্রাক-নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশ সফর করে।
আগের দুই জাতীয় নির্বাচনেও কোনো পর্যবেক্ষক পাঠায়নি ইইউ; সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা পর্যবেক্ষক পাঠায়।
বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বর্তমান পরিবেশ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের উপযুক্ত কিনা, সহিংসতার ঝুঁকি কতখানি, যথেষ্ট আইনি কাঠামোর অস্তিত্ব, নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি ও সক্ষমতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা – রয়েছে কিনা মূলত এসবই জানার ছিল এবার ইইউ প্রতিনিধি দলের।
বাংলাদেশে আসার পর থেকেই প্রতিনিধিরা সরকারের বিভিন্ন সংস্থা– পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, পুলিশ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও অ্যাটর্নি জেনারেল সহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন।
এসব বৈঠকে নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সহিংসতার ঝুঁকি ও সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান প্রতিনিধিরা।
আইনজীবীদের সাথে বৈঠকে নির্বাচনকালে বিচার বিভাগ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে পারবে কিনা- সে বিষয়ে জানতে চান তারা।
ইইউ মিশনের সাথে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলটির ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করে। বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের বলেন, "আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমরা সংবিধানের কোনো প্রকার লঙ্ঘন মানব না…।"
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত হবে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে ইইউ প্রতিনিধিদের সাথে ৯০ মিনিটের বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, "আওয়ামী লীগের অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হলে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারবে না বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের জানিয়েছে বিএনপি। আমরা তাদের বলেছি, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রশ্নই আসে না। সেটা সম্ভবও নয়। এর পেছনে অন্যান্য অনেক কারণও আছে।"
৭৫টির বেশি বৈঠকে অংশগ্রহণের পর, ২৩ জুলাই তারিখে দুই সপ্তাহের বাংলাদেশ সফর শেষ করে ইইউ প্রতিনিধিরা।