ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে যেসব সুফল মিলবে
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমদানি-রপ্তানির পণ্য খোলা জায়গায় ফেলে রাখার দিন শেষ হতে যাচ্ছে। একইসঙ্গে বিমানবন্দরে হিমাগারের অভাবে তাজা সবজি, ফল কিংবা জ্যান্ত মাছ রপ্তানি ব্যাহত হওয়ার দিনও শেষ হবে তৃতীয় টার্মিনাল চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে। এতে রপ্তানিতে লিড টাইমও কমবে।
এছাড়া নতুন এই টার্মিনাল চালু হলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা প্রায় তিনগুণ বাড়ার পাশাপাশি তিন ক্যাটাগরির হিমাগার সুবিধাসহ নতুন এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স যুক্ত হচ্ছে, যা কৃষিপণ্য রপ্তানিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকরা।
আগামী ৭ অক্টোবর তৃতীয় টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এটি পুরোপুরি চালু হবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে। এই টার্মিনাল চালু হলে কার্গো পরিবহন সুবিধা বাড়ার পাশাপাশি বছরে প্রায় ১.২০ কোটি যাত্রী সুবিধা নিতে পারবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল চালুর পর ফ্লাইট সংখ্যা ও কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বাড়বে, উড়োজাহাজে কার্গো স্পেসও বাড়বে।
বর্তমানে দেশের প্রধান এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমদানি কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বছরে ৮৪ হাজার ৩৭৯ টন। নতুন টার্মিনাল চালুর পর এই সক্ষমতা বেড়ে বছরে দাঁড়াবে ২ লাখ ৭৩ হাজার ৪৭০ টন।
একইভাবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান্দরের বর্তমানে রপ্তানি কার্গো হ্যান্ডেলিং সক্ষমতা বছরে ২ লাখ ৫৬০ টন, তৃতীয় টার্মিনাল চালুর পর এটি বেড়ে দাঁড়াবে ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯৪১ টন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদ্যমান রপ্তানি কার্গো টার্মিনাল ভবনসংলগ্ন এলাকায় বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন-এর (বিএডিসি) ৪২০ বর্গমিটারের একটি হিমাগার আছে। বর্তমানে বিএডিসির জমিতে রপ্তানি কার্গো টার্মিনাল ভবনসংলগ্ন টাউনসাইড এলাকায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ পৃথক একটি ওয়্যারহাউস নির্মাণের জন্য পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে।
নতুন টার্মিনালে বার্ষিক প্রায় ৫ লাখ ৫০ হাজার টন ধারণক্ষমতার নতুন এক্সপোর্ট কার্গো কমপ্লেক্স নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এই কার্গো কমপ্লেক্সে মোট ৩৯৬.১৫ বর্গমিটারের তিন ক্যাটাগরির হিমাগার সুবিধা থাকবে। কমপ্লেক্সটির বাৎসরিক ধারণক্ষমতা হবে প্রায় ৪ হাজার টন।
গত ২০ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত 'রপ্তানি সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি'র সভায় কৃষিপণ্য রপ্তানি বাড়াতে বিমানবন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ আধুনিক হিমাগার নির্মাণের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে তা দেশের আমদানি-রপ্তানি বাড়াতে, বিশেষ করে কৃষিপণ্য রপ্তানি বাড়াতে কী ভূমিকা রাখবে, সে বিষয়ে জানতে চেয়ে গত জুলাই মাসে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদনটি পাঠিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা মো. মঞ্জুরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'তৃতীয় টার্মিনাল হলে রপ্তানির কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা ও হিমাগারের ধারণক্ষমতা যে পরিমাণ বাড়বে, তা আমাদের রপ্তানি বাড়াতে অনেক সহায়ক হবে।'
তিনি বলেন, বর্তমানে তাদের দৈনিক হিমাগারের চাহিদা আছে ৫০০-৮০০ টন। 'আন্তর্জাতিক বাজারে ফ্রেশ কৃষি পণ্য, ফ্রেশ ভেজিটেবল ও ফ্রুটসের চাহিদা অনেক বাড়ছে। তাই আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের হিমাগারের চাহিদা বেড়ে ৩-৪ হাজার টনে উন্নীত হবে।'
প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (মার্কেটিং) কামরুজ্জামান কামাল টিবিএসকে বলেন, তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে আমদানি-রপ্তানির কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা আড়াই থেকে তিনগুণ পর্যন্ত বাড়বে। এটি দেশের ফ্রেশ কৃষিপণ্য রপ্তানিতে সহায়ক হবে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে পরিবহন করা কার্গোর প্রায় ৬০ শতাংশ যাত্রীবাহী উড়োজাহাজে পরিবাহিত হয়। বাকি ৪০ শতাংশ পণ্য এক্সক্লুসিভ কার্গো ফ্লাইটে পরিবহন করা হয়।
শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল চালুর পর ফ্লাইট সংখ্যা ও কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বাড়বে। এর ফলে উড়োজাহাজের কার্গো স্পেসও বাড়বে।