নদী ভাঙ্গনে হুমকিতে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সঞ্চালন টাওয়ার
পাবনায় পদ্মা ও যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙণে গত কয়েক সপ্তাহে জেলার বেড়া ও সুজানগর উপজেলার কয়েক হাজার মানুষের বসতভিটা, ফসলি জমি ও পাকা সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে বেড়া উপজেলার নটাখোলা জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ সঞ্চালন টাওয়ারও। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সারা বাংলাদেশ পড়তে পারে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের মধ্যে।
সরেজমিনে বেড়া উপজেলার নটাখোলা খানপুরা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ২০০ মিটার পাকা সড়ক যমুনার পানির তোড়ে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনে বিলীন হয়েছে খানপুরা মধ্যপড়া কবরস্থানের অর্ধেকেরও বেশি অংশ। পানি উন্নয়ন বোর্ড বালির বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করলেও তাতে আশ্বস্ত হতে পারছে না স্থানীয়রা।
ক্রমাগত ভাঙনে খানপুরা গ্রামে জাতীয় গ্রিডের সঞ্চালন লাইনের আনকারা টাওয়ার মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। এই আনকারা টাওয়ার যমুনা নদীর ভেতর দিয়ে আসা ১১টি সঞ্চলন টাওয়ারকে নিয়ন্ত্রণ করে। টাওয়ারটি বর্তমানে আগ্রাসী যমুনা থেকে মাত্র ৫০০ থেকে ৬০০ মিটার দূরত্বে রয়েছে। এই টাওয়ার মাটির চাপ, তারের ভারসাম্য এবং মূল ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
আশংকা করা হচ্ছে দ্রুত নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ না করা হলে নদী ভাঙ্গনে টাওয়ারের চারপাশের মাটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে টাওয়ারটি যে কোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে। এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সারা দেশে বিদ্যুৎ সঞ্চালনার ক্ষেত্রে মারাত্মক হুমকি ও মারাত্মক বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। দেখা দিতে পারে মারাত্মক লোডশেডিং। অন্ধকারে তলিয়ে যেতে পারে দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রায় ৭ কোটি মানুষ।
খানপুরা গ্রামের অধিবাসী জানে আলম মোল্লা জানান, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই খানপুরা-দয়ারামপুর সড়কের দু শ মিটার যমুনার গ্রাসে চলে যায়। একদিনের মধ্যে আমার তিনবিঘা আমন ধানের জমি বিলীন হয়ে হয়ে যায়। এখন নদী আমার বসত ভিটা থেকে মাত্র পাঁচ শ মিটার দূরত্বে চলে এসেছে।
তিনি আরও জানান, ক্রমাগত ভাঙনে খানপুরা গ্রামে জাতীয় গ্রিডের সঞ্চালন লাইনের আনকারা টাওয়ার মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। টাওয়ারটি বর্তমানে আগ্রাসী যমুনা থেকে মাত্র ৫০০ থেকে ৬০০ মিটার দূরত্বে রয়েছে। এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে সারা দেশে মারাত্মক বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত বছরই যমুনার ভাঙনে নটাখোলা ফেরিঘাটসহ গ্রামটির বেশির ভাগ অংশই নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এ বছর যমুনার ভাঙন আরও প্রশস্ত হয়ে খানপুরা, চরপেঁচাকোলা, ঘোপ সিলন্দা ও মোহনগঞ্জ গ্রামের বসতভিটা ও রাস্তাঘাট বিলীন হয়েছে। নদীতে বালির বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকানোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এদিকে, কেবল যমুনাতেই নয় ভাঙন দেখা দিয়েছে সুজানগর উপজেলার পদ্মা পাড়ের গ্রামগুলোতেও। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুসারে উপজেলার গুপিনপুর, বরখাপুর, রায়পুর, নুরহাটি, খলিলপুর, কাঞ্চন বাঁধ ও হাসামপুর গ্রামে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বাড়িঘর, ফসলি জমি প্রমত্তা পদ্মার গ্রাসে চলে গেছে।
সুজানগর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন জানান, গত তিন সপ্তাহ ধরে পদ্মা নদী যেভাবে আগ্রাসী হয়ে উঠেছে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সঠিক সংখ্যা নিশ্চিত করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে কয়েক শতাধিক পরিবার ভিটেমাটি ও ফসলি জমি হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে।
পাবনা জেলা প্রশাসক কবির মাহমুদ জানান, ভাঙন প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সমন্বিতভাবে কাজ করছে। বিদ্যুৎ সঞ্চালন টাওয়ার রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।