কোহলির আরেকটি সেঞ্চুরি, বাংলাদেশের আরেকটি বড় হার
টানা দুই হারে কোণঠাসা অবস্থা, এর মধ্যে দলে নেই সেরা খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান; টানা তিন জয়ে উড়তে থাকা ভারতের বিপক্ষে জয়ের পথটা কঠিনই ছিল বাংলাদেশের জন্য। তবু জয়ে দৃষ্টি রেখেই নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু লক্ষ্যের ধারে কাছেও যাওয়া হলো না ব্যাটিংয়ে-বোলিংয়ে অনুজ্জ্বল থেকে যাওয়া দলটির। ম্যাচসেরা বিরাট কোহলির আরেকটি দুর্দান্ত সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার ম্যাচে বাংলাদেশকে মেনে নিতে হলো আরেকটি বড় হার।
বৃহস্পতিবার পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে ৭ উইকেটে হেরে গেছে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে চার ম্যাচে এটা বাংলাদেশের টানা তৃতীয় হার। তাই বিভিন্ন সময়ে সেমি-ফাইনাল খেলার কথা জানালেও তাদের বিশ্বকাপ স্বপ্ন ইতোমধ্যে বিবর্ণ হয়ে উঠেছে। বাকি থাকা পাঁচ ম্যাচের মধ্যে তুলনামূলক প্রতিপক্ষ কেবল নেদারল্যান্ডস। বাকি চার প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়া। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের মতো টানা চার জয় পেলেও পয়েন্ট টেবিলের দুই নম্বরেেই থাকলো ভারত। নেট রান রেটে এগিয়ে থাকায় শীর্ষে কিউইরা।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে লিটন কুমার দাস ও তানজিদ হাসান তামিমের ব্যাটে অসাধারণ শুরু পাওয়ার পরও বড় সংগ্রহ গড়তে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। দ্রুত তিন উইকেট হারিয়ে পথ ভুলে যাওয়া দলটি মুশফিকুর রহিম ও শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটে উইকেটে ২৫৬ রান তোলে। জবাবে রোহিত শর্মা-শুভমান গিলের দাপুটে শুরুর পর বিরাট কোহলির দারুণ সেঞ্চুরি ও লোকেশ রাহুলের ব্যাটে ৪১.৩ ওভারে ৩ উইকেটেই জয় তুলে নেয় স্বাগতিক ভারত।
মাঝারি লক্ষ্য তাড়ায় দাপুটে শুরু করেন রোহিত ও শুভমান। বাংলাদেশের বোলারদের শাসন করে খেলে যেতে থাকেন ভারতের এই দুই ওপেনার। ১২.৩ ওভারে স্কোরকার্ডে ৮৮ রান যোগ করেন তারা। ১৩তম ওভারে এই জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদের জায়গায় সুযোগ পাওয়া হাসান মাহমুদ। ছক্কা হজম করার করার পরও আরেকটি শর্ট বল দেন হাসান, এবারও একইভাবে ব্যাট চালান পুল শটে মুড়ি মুরকির মতো ছক্কা মারা রোহিত। কিন্তু এবার বল সীমানা ছাড়া হয়নি, তাওহিদ হৃদয়ের হাতে ধরা পড়েন ভারত অধিনায়ক।
৪০ বলে ৭টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৮ রান করে বিদায় নেন রোহিত। শুভমানকে ফিরিয়ে ভারতের ইনিংসে দ্বিতীয় আঘাতটি হানেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বাউন্ডারি লাইনে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে ধরা পড়ার আগে ৫৫ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫৩ রান করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। লেগ স্টাম্পের ওপরে করা মিরাজের ফুলার ডেলিভারি তুলে মারেন শুভমান। বাউন্ডারি রোপের একেবারে কাছ থেকে দারুণভাবে শরীরের ভারসাম্য ঠিক রেখে দৃষ্টিনন্দন ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ।
এরপর দ্রুতই ফেরেন শ্রেয়াস আইয়ার, ২৫ বলে ২টি চারে ১৯ রান করে মিরাজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি। তার বিদায়ে কোনো বেগই পেতে হয়নি ভারতকে, জয় তুলে নেওয়ার কাজটা সহজেই সারেন ম্যাচসেরা কোহলি ও রাহুল। উল্টো সেঞ্চুরির জন্য রান কম পড়ে যায় কোহলির। তাই একা একা ব্যাটিং করেই দলকে জেতানোর পাশাপাশি ওয়ানডের ৪৮ ও বিশ্বকাপের তৃতীয় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। ছক্কা মেরে দলের জয় ও নিজের সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান। শেষ দিকে কোহলির সেঞ্চুরি পূর্ণ করতে নিজে রান তোলেননি রাহুল।
৯৭ বলে ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১০৩ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন কোহলি। তার সঙ্গে ৮৩ রানের জুটি গড়া রাহুল ৩৪ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের কোনো বোলারই সুবিধা করতে পারেননি। মিরাজ ২টি উইকেট নিতে ১০ ওভারে ৪৭ রান খরচা করেন। হাসান মাহমুদ ৮ ওভারে ৬৫ রানে একটি উইকেট পান। শরিফুল ইসলাম ৮ ওভারে ৫৪, মুস্তাফিজুর রহমান ৫ ওভারে ২৯ ও সাকিবের চোটে সুযোগ পাওয়া নাসুম আহমেদ ৯.৩ ওভারে ৬০ রান খরচায় উইকেটশূন্য থাকেন।
এর আগে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশ উড়ন্ত সূচনা পায়। উদ্বোধনী জুটিতে ৯২ রান যোগ করেন লিটন ও তানজিদ তামিম। বিশ্বকাপে এটাই তাদের সেরা উদ্বোধনী জুটি। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের আগের সেরা উদ্বোধনী জুটি মেহরাব হোসেন অপি ও শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুতের, ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬৯ রান যোগ করেন তারা।
সর্বশেষ এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জাতীয় দলে অভিষেক হওয়া তানজিদ তামিম ওয়ানডেতে নিজের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। ৪১ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করা বাংলাদেশের তরুণ এই বাঁহাতি ওপেনার ৪৩ বলে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫১ রান করে আউট হন। এখান থেকেই বাংলাদেশের বিপর্যয়ের শুরু।
দুই ভারতীয় স্পিনার কুলদীপ যাদব ও রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গে তোপ দাগেন পেসার মোহাম্মদ সিরাজও। একে একে ফিরে যান নাজমুল হোসেন শান্ত, মেহেদী হাসান মিরাজ ও লিটন কুমার দাস। বিনা উইকেট ৯২ থেকে ১৩৭ রানে ৪ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এর মধ্যে কেবল লিটন রানের দেখা পেয়েছেন, ডানহাতি এই ওপেনার ৮২ বলে ৭টি চারে ৬৬ রান করেন। বিশ্বকাপে এটা তার তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি।
তাওহিদ হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে চাপ কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করেও পারেননি মুশফিকুর রহিম। হৃদয় ১৬ রান করে বিদায় নেন। মুশফিক পাড়ি দেন আরেকটু পথ। অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান ৪৬ বলে একটি করে চারও ছক্কায় ৩৮ রান করে আউট হন। এই ইনিংস খেলার পথে সাকিবের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপে ১ হাজার রান পূর্ণ করেন তিনি, ছাড়িয়ে গেছেন সৌরভ গাঙ্গুলী, ভিভ রিচার্ডস, মার্ক ওয়াহদের মতো কিংবদন্তিদের।
মুশফিকের বিদায়ের পর বাংলাদেশ যে এগিয়েছে, সেটা মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে। চোটের কারণে এই ম্যাচ থেকে ছিটকে যাওয়া সাকিবের জায়গায় খেলা নাসুম আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে শেষ ওভার পর্যন্ত লড়েন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। জাসপ্রিত বুমরাহর বলে বোল্ড হওয়ার আগে ৩৬ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় ৪৬ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। নাসুম করেন ১৪ রান, শেষ বলে ছক্কা মারাসহ ৩ বলে ৭ রান করেন শরিফুল ইসলাম। বুমরাহ, সিরাজ ও জাদেজা ২টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান শার্দুল ও কুলদীপ।