২৮ অক্টোবরের সমাবেশ: ঘোষিত ভেন্যুতে অনড় তিন দল
আগামীকাল ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ ডেকেছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীও সমাবেশ ডেকেছে। আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে এবং বিএনপি নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার যে ঘোষণা দিয়েছে, সেটিতেই অনড় রয়েছে। আর জামায়াত মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশের ঘোষণায় অনড়।
যদিও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে সমাবেশের জন্য আওয়ামী লীগকে বিকল্প কোনো স্থানে সমাবেশ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। এছাড়া বিএনপিকেও সমাবেশের জন্য নির্দিষ্ট কোনো স্থানের জন্য এখনও অনুমতি দেয়নি ডিএমপি। জামায়াতকে অনুমতি দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে ডিএমপি। কিন্তু তিন দলই তাদের নিজ নিজ পছন্দের স্থানে সমাবেশ করার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে রয়েছে।
তিন দলের ভেন্যু নিয়ে অনড় অবস্থানের কারণ হিসেবে রাজনীতিবিদরা মনে করছেন, বিএনপি যেভাবেই হোক নয়াপল্টন চায় কারণ, নয়াপল্টন কৌশলগতভাবে তাদের আসন্ন আন্দোলন কর্মসূচির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগ মনে করছে বিএনপি ওই দিন কৌশলগতভাবে অবস্থান নিয়ে সচিবালয় ঘেরাও করার মতো কর্মসূচী সহজে বাস্তবায়ন সম্ভব। বিরোধী দল যদি সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে চায় তাহলে প্রশাসনিক কেন্দ্র, সচিবালয় ভবনকে পঙ্গু করে দিতে হবে। অতীতেও এমনটি ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
২০১৩ সালের মে মাসে হেফাজতে ইসলাম শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলানোর যে চেষ্টা করেছিল, এবার জামায়াত সেরকম কিছু করতে পারে। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লগি অবস্থান নিলে বিএনপি ও জামায়াতকে একইসাথে মোকাবিলা করা সম।বব বলে মনে করছেন আওয়ামী লগের নেতারা।
যে কারণে অনড় বিএনপি
সরকার পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ১ দফা দাবি আদায়ে ২৮ অক্টোবর বিএনপি নয়াপল্টনে যেকোন মূল্যে সমাবেশের করবে। পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামিও ডিএমপির সহযোগিতা না পেলেও মতিঝিল শাপলা চত্বরেই সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে।
গতকাল দুপুরে বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'ঢাকার নয়াপল্টনেই ২৮ অক্টোবরের বিএনপির মহাসমাবেশ হবে।'
২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে সমাবেশ করার জন্য পুলিশকে চিঠি দিয়েছিল বিএনপি। তাদের চিঠির জবাবে গত বুধবার বিকল্প দুটি স্থানের নামসহ সাত তথ্য চায় পুলিশ। সেই চিঠিতে সমাবেশে লোকসমাগমের সংখ্যা, সময়, বিস্তৃতি, কোন কোন স্থানে মাইক লাগানো হবে, অন্য দলের কেউ উপস্থিত থাকবেন কি না-সহ সাতটি তথ্য জানতে চাওয়া হয়।
পুলিশকে দেয়া চিঠিতে দলটি বলেছে, ''২৮ অক্টোবরের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নয়াপল্টনের বিএনপির প্রধান কার্যালয়ের সামনেই আয়োজনের সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। অন্য কোনো ভেন্যুতে যাওয়া সম্ভব হবে না। সমাবেশে এক থেকে সোয়া লাখ লোক হতে পারে। দলীয় স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা হবে ৫০০।" বিএনপির পক্ষে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ চিঠি দিয়েছেন।
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, আগামী ২৮ অক্টোবর মতিঝিল শাপলা চত্বরেই মহাসমাবেশ করবে জামায়াত। আর এই মহাসমাবেশ সফলে প্রশাসন এবং দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
অনড় আওয়ামী লীগও
আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটেই সমাবেশ করবে বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, "বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেট, অনলি ওয়ান ভেন্যু আই ম্যানশন। যেটা বলেছি সেটাই।"
বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সৈয়দ আবুল হোসেনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজের সই করা একটি চিঠি পল্টন মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসি মো. সালাউদ্দিন মিয়াকে কাছে পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আগামী ২৮ অক্টোবর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে 'শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ' করাসহ সাতটি বিষয়ে পুলিশকে জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এই সমাবেশ চলবে বলে জানানো হয়েছে।
আরও বলা হয়, "২৮ অক্টোবর 'শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ' জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আয়োজনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি (মঞ্চ নির্মাণ ও প্রচার প্রচারণার কার্যক্রম) ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এমতাবস্থায়, স্বল্প সময়ের মধ্যে অন্য কোনও ভেন্যুতে নতুনভাবে সমাবেশের প্রস্তুতি গ্রহণ করা দুরূহ ব্যাপার। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আগামী ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের অনুষ্ঠানস্থল ও তার সংলগ্ন এলাকায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক বিষয়ে সহযোগিতা প্রদানের বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।"
এর আগে আগামী ২৮ অক্টোবর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করার জন্য গত ২০ অক্টোবর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাছে অনুমতি চেয়েছিল আওয়ামী লীগ। এর পর পুলিশের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের কাছে বিকল্প আরও দুটি স্থানের নামসহ ৭টি বিষয়ে তথ্য জানতে চাওয়া হয়।
সারাদেশে ধরপাকড় বেড়েছে
২৮ অক্টোবরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার বেড়েছে। ইতিমধ্যে বিএনপি নেতা খাইরুল কবির খোকনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জামায়াত নেতা মতিউর রহমান আকন্দকেও বুধবার গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, গত বুধবার রাতে সারাদেশে ১৫০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ এবং মামলা হয়েছে ১০টি।