গর্ভবতী নারীদের বয়ানে গাজা যুদ্ধের ভয়াবহতা
গতকাল (বুধবার) জাতিসংঘের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সংস্থা চলমান যুদ্ধে গাজার তিনজন গর্ভবতী নারীর অভিজ্ঞতা অডিও সাক্ষাৎকার আকারে প্রকাশ করেছে। সেখানে ওই তিন নারীর বর্ণনায় ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা, গর্ভপাত এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না পাওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা উঠে এসেছে।
জাতিসংঘের পপুলেশন ফান্ডের তথ্য অনুযায়ী, গাজায় বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজার গর্ভবতী নারী রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫,৫০০ জন নারী এ মাসেই সন্তান জন্ম দেবেন। যদিও এরমধ্যেই হাসপাতালগুলোতে ওষুধ ও রক্তের সরবরাহ ফুরিয়ে আসছে।
৩৫ বছর বয়সী ইসলাম হোসেন পপুলেশন ফান্ডকে জানান, তিনি যখন নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তখন তার বাড়ির কাছে একটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে তিনি ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েন। ঘটনাটি ঘটে সন্তান জন্মের মাত্র ১০ দিন আগে।
ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় তার বড় ছেলে নিহত হয়। উদ্ধারকারীরা দল এসে তাকে হাসপাতালে নিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত তিনি ধ্বংসস্তূপের নিচে চিৎকার করতে থাকেন।
উদ্ধারের পর ডাক্তাররা হোসেনের দেহ পরীক্ষা করে দেখেন, তার নাড়ির অবস্থা ছিল খুবই দুর্বল। তাই তার জরুরি সিজারিয়ান অপারেশন করতে হয়।
ওয়াশিংটন পোস্টের কাছে আসা সাক্ষাৎকারে হোসেন বলেন, "আমি আমার ছেলের নাম সনদ রেখেছি। কারণ আমার যে ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে, সে ওর নাম সনদ রাখতে চেয়েছিল।"
সনদ আরবী শব্দ, যার অর্থ সমর্থন। হোসেনের আশা, তার ছেলে জীবন ও মৃত্যু- যেকোনো পরিস্থিতিতে তাকে সমর্থন করবে।
অন্যদিকে, ৩০ বছর বয়সী আলা আল বায়া জানান, অসুস্থ বোধ করায় তিনি পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলেন। এ সময় তিনি কাঁপছিলেন; কারণ ইদানিং তেমন কিছু খেতে পাননি তিনি।
আল বায়া বলেন, "ডাক্তার আমাকে বলেছিলেন, আমার শরীরে কোনো পালস নেই, কোনো আশা নেই।" পরবর্তীতে তার গর্ভপাত হয়।
গাজায় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির সহযোগিতায় পরিচালিত ২৩টি বেকারির মধ্যে মাত্র একটি চালু রয়েছে। এর ফলে গর্ভবতী নারীদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার পাওয়াও হয়ে দাঁড়িয়েছে কঠিন।
২৪ বছর বয়সী রেহাম রাশাদ বাকর বলেন, "আমার মত গর্ভবতী নারীদের দুধ, ডিম খাওয়া উচিত। কিন্তু এখানে রুটি কিংবা পানির ব্যবস্থাই নেই।"