মাতৃত্বকালীন ছুটি বাতিল করে করোনার চিকিৎসা দিতে চান ডা. মাহমুদা
করোনাকালে চিকিৎসা সেবা দিতে অপারগতার খবর যেখানে প্রায়ই শোনা যায়, এমনই মহূর্তে নিজের মাতৃত্বকালীন ছুটি প্রত্যাহার করে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নিজেকে যুক্ত করতে চান ডা. মাহমুদা সুলতানা আফরোজা নামের এক চিকিৎসক।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের জেনারেল সার্জারি বিভাগের ওই মেডিকেল অফিসার বর্তমানে মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন। করোনাকালীন এই দুঃসময়ে মানবিক দায়বোধ থেকে ছুটি প্রত্যাহার করে চিকিৎসাসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে গত ১১ জুন ওই হাসপাতলের পরিচালক বরাবরে একটি লিখিত আবেদনও করেছেন তিনি।
ডা. মাহমুদা সুলতানা আফরোজা ২০১৬ সালে এমবিবিএস পাস করেন। ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর তিনি মা ও শিশু হাসপাতালের জেনারেল সার্জারি বিভাগের মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। গত ৫ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেয় পুত্র সন্তান আজমাইন রহমান জেইন। এরপর থেকে তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে রয়েছেন।
চিকিৎসক মাহমুদা সুলতানার স্বামী লায়ন মাহমুদুর রহমান শাওন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, আগামী ২৫ জুন তার স্ত্রীর মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হওয়ার কথা। প্রিমেচিউরড বাচ্চা হওয়ায় ছুটি আরও ২ মাস বাড়ানোর কথা ছিল। করোনাকালীন এই দুঃসময়ে নিজের সন্তানের জন্য সমস্যা হবে জেনেও তার স্ত্রী পারিবারিক সিন্ধান্তে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় নিজেকে যুক্ত করার সিন্ধান্ত নিয়েছেন। কাজে যোগ দিতে গত ১১ জুন হাসপাতালের পরিচালকের বরাবরে একটি লিখিত আবেদনও করেছেন।
ডা. মাহমুদা সুলতানা বলেন, করোনার এই দুঃসময়ে একজন চিকিৎসক হিসেবে আমি ঘরে বসে থাকতে পারি না। এই মহূর্তে নিজের সন্তানের পাশে থাকার জরুরি হলেও করোনার এই ক্রান্তিকালে একজন চিকিৎসক হিসেবে নিজেকে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত রাখা কর্তব্য বলে মনে করছি। আমি করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেবায় নিজেকে নিযুক্ত করতে মাতৃত্বকালীন ছুটি প্রত্যাহারের জন্য লিখিত আবেদন করেছি।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক ডা. নুরুল হক বলেন, ওই চিকিৎসক নিজে থেকে আগ্রহী হয়ে ডিউটি করতে চাচ্ছেন। গত ১১ জুন ছুটি প্রত্যাহার করে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় যোগ দিতে আবেদন করেছেন। হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী ছুটি প্রত্যাহারের আবেদন করে কাজে যোগ দেওয়ার বিধান রয়েছে। আমরা বিষয়টি বিবেচনা করছি।
করোনা রোগীদের চিকিৎসায় এই চিকিৎসকের যুক্ত হওয়ার ইতিবাচকভাবেই দেখছে নাগরিক সমাজ।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চট্টগ্রামের সভপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, নিজের পরিবারের অসুবিধার কথা জেনেও করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবায় নিজেকে যুক্ত করার যে সিন্ধান্ত এই নারী চিকিৎসক নিয়েছেন সেটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় এবং মানবিক। যেখানে অনেক চিকিৎসক সাধারণ রোগীদেরও চিকিৎসা সেবা দিতে ভয় পাচ্ছেন, সেই বাস্তবায়তায় ডা. মাহমুদা সুলতানায় এই সিন্ধান্ত অন্যদের জন্য অনুকরণীয় এবং মাইলস্টোন হয়ে থাকবে।